20180210

নরেন্দ্র মোদী সরকারের নীতি বদলের দাবিতে ২০শে ফেব্রুয়ারি আইন অমান্য ও জেলভরো

অনাদি সাহু

মোদী সরকারের জনবিরোধী দেশবিরোধী নীতির প্রতিবাদে শ্রমজীবী মানুষের লাগাতার লড়াই চলছে। আগামী ২০শে ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলাতে আইন অমান্য জেলভরো কর্মসূচি নিয়েছে শ্রমিকশ্রেণি শিল্পভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠনগুলি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করেছেন লেখক।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের জনবিরোধী দেশবিরোধী নীতির প্রতিবাদে, গত ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের দেশব্যাপী সফল ধর্মঘটের পর, আরও বড় লড়াইয়ের পথে দেশের শ্রমিকশ্রেণি শিল্পভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে দেশব্যাপী আইন অমান্য জেলভরো কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

আমাদের রাজ্যে, আগামী ২০শে ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবাংলার সমস্ত‍‌ জেলাতে আইন অমান্য জেলভরো কর্মসূচি, রাজ্যের সমস্ত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন, ব্যাঙ্ক, বিমা, বি এস এন এল-সহ শিল্পভিত্তিক ফেডারেশনগুলি এবং ১২ই জুলাই কমিটি এই কর্মসূচিতে শামিল হবেন। কলকাতায় রানি রাসমণি রোডে ঐদিন দুপুরে জমায়েত আইন অমান্য কর্মসূচি পালিত হবে। রাজ্যে জোরকদমে তার প্রস্তুতি চলছে।

এই কর্মসূচির ১২ দফা দাবিগুলি হলো :
‍‌ মূল্যবৃদ্ধি রোধ, সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের ফাটকা ব্যবসা বন্ধ।বেকার সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।শ্রমআইন সঠিকভাবে লাগু করতে হবে শ্রমআইন ভঙ্গকারী মালিকদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।সমস্ত শ্রমিকদের জন্য সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।ন্যূনতম মজুরি ১৮,০০০ টাকা (মাসিক) দিতে হবে এবং তা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সূচকের সাথে যুক্ত করতে হবে।প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের জন্য মাসিক পেনশন ন্যূনতম ,০০০ টাকা করতে হবে।স্থায়ী কাজে ঠিকাশ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং সমকাজে সমবেতন দিতে হবে।বোনাস এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের ক্ষেত্রে মজুরি/বেতনের পরিমাণের উপর সর্বোচ্চ সীমা যোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিতে হবে, গ্র্যাচুইটি আইন সংশোধন করে গ্র্যাচুইটির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।শ্রমিক স্বার্থবিরোধী শ্রমআইন সংশোধন করা চলবে না।রেল, প্রতিরক্ষা এবং বিমা ক্ষেত্রে ‍‌(FDI) বিদেশি পুঁজি‍‌ বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে।আবেদনের ৪৫ দিনের মধ্যে ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে আই এল কনভেনশনের ৮৭ ৯৮ নম্বর ধারাকে অনুমোদন দিতে হবে।রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের শেয়ার বিক্রি করা চলবে না। রাজ্যে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সংস্থা, কয়লাখনি, বেঙ্গল কেমিক্যাল, অ্যালয় স্টিল, ব্রিজ অ্যান্ড রুফ, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড সাঁতরাগাছি প্রেসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলি বেসরকারিকরণ করা চলবে না।

গত সাড়ে তিন বছর পূর্বে নরেন্দ্র মোদী  সবকা সাথ সবকা বিকাশএবং আচ্ছে দিনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠন করে দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের স্বার্থে, একের পর এক বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চরম বিশ্বাসঘাতকতার পথ গ্রহণ করেছে। দেশ জাতীয় স্বার্থবিরোধী ঘৃণ্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে তার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারে পরিণত হওয়ার জঘন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। ফলে দেশের আর্থিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম না দেওয়া, নোটবন্দি, জি এস টি, এফ আর ডি আই বিলের মতো জাতীয় স্বার্থবিরোধী‍‌ সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের জীবনে চরম অনিশ্চয়তার পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার বৃহৎ শিল্পপতিদের ঋণখেলাপিদের আড়াল করতে চাইছে। প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা বকেয়া ঋণের ৮৫ শতাংশই বৃহৎ শিল্পপতিগোষ্ঠীর। নরেন্দ্র মোদী সরকার গত বছরে লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকার এই ঋণখেলাপিদের টাকা মকুব করেছে। শিল্পপতি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা করতে এফ আর ডি আই বিলের মাধ্যমে সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করতে চাইছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বিমা, বি এস এন এল, প্রতিরক্ষা, রেল, বিমানবন্দর, য়লাখনির বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তে লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হবে। রাজ্যে বেঙ্গল কেমিক্যাল, অ্যালয় স্টিল, ব্রিজ অ্যান্ড রুফ, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড সাঁতরাগাছি প্রেসের মতো সংস্থাগুলিকে বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত পুনরায় হাজার হাজার মানুষের কর্মহীনতার বিপদ দেখা দিয়েছে এবং রাজ্যকে শিল্পশূন্য করার পরিস্থিতি‍‌ তৈরি করছে।

মূল্যবৃদ্ধি রোধ : মূল্যবৃদ্ধি রোধের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পালন না করে, পেট্রোপণ্যের উপর উচ্চহারে সেস বসিয়ে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী খাদ্যপণ্য, তেল, চাল, ডাল, শাকসবজি, সমস্ত পণ্য-সামগ্রীর দাম গত সাড়ে তিন বছরে বহুগুণ বাড়তে ইন্ধন জুগিয়েছে। অথচ চাষিরা ফসলের দাম পাননি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ওষুধ, চিকিৎসা সমস্ত ক্ষেত্রে লাগামছাড়াভাবে ব্যয় বৃদ্ধি ঘটেছে।

বেকার সমস্যা প্রসঙ্গে : বছরে কোটি বেকারের কাজ, যে নির্বাচনী ভাঁওতা ছিল তা ইতিমধ্যেই নরেন্দ্র মোদী বুঝিয়ে দিয়েছেন। পর পর ৪টি বাজেটের পর ২০১৭-১৮ সালের বাজেটও হয়ে গেল। কিন্তু সরকার উদাসীন। আমাদের দেশের প্রতি জন মানুষের মধ্যে জন ৩৫ বছরের নিচে, তাদের জন্য প্রতি মাসে ১০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান প্রয়োজন। পর পর ৫টি বাজেট হয়ে গেছে, কিন্তু বেকার যুবকরা সেই অন্ধকারে থেকে গেল। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৮টি শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল .৩১ লক্ষ, ২০১৫ সালে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল .৫৫ লক্ষ মাত্র, আর ২০১৬ সালের শেষে ডিমনিটাইজেশনের ধাক্কায়, সারা দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ নতুন করে কর্মহীন হয়েছিলেন। জানুয়ারি, ২০১৬ থেকে এপ্রিল, ২০১৭ পর্যন্ত দেশব্যাপী ১৫ লক্ষ মানুষ কর্মচ্যুত হয়েছিলেন নোটবন্দির কারণে (Centre for monitoring Indian Economy).

রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র বেসরকারিকরণ : নয়া উদারনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বেসরকারিকরণ, ১৯৯১ সাল থেকেই ইউ পি সরকারের সময় তা ছিল কিছুটা ধীরে ধীরে। অতীতে পূর্বতন অটল‍‌বিহারী বাজপেয়ীর বি জে পি সরকার এই নামেই একটা দপ্তর খুলে বসেছিল, আর বর্তমান বি জে পি সরকার ক্ষমতায় এসেই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে পরিকল্পনা পর্ষদ তু‍‌‍‌লে দিয়ে ‍‌এন আই টি আই আয়োগ ‍‌(National Institution for Transforming India) তৈরি করেছে। এর কাজ হচ্ছে, দেশের জনগণের যে সম্পত্তি যাকে আমরা বলি রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র, সেগুলিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে দ্রুত হাত বদ‍‌লের ব্যবস্থা করাপ্রতিরক্ষা, ইস্পাত, রেল, বিদ্যুৎ, ব্যাঙ্ক, বিমা, ওষুধ, বিমানসংস্থা, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, ভারী ইঞ্জিনিয়ােরিং শিল্প, নির্মাণ শিল্প, কয়লাখনি, পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্র ইত্যাদির আগেই অনেকগুলি বেসরকারিকরণ শেয়ার বিক্রি চলছে। নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে তাই এই দেশবিরোধী কাজকে আড়াল করতে এখন জাতীয়তাবাদে স্বঘোষিত দেশপ্রেমিক সাজতে হচ্ছে।



১৮,০০০ টাকার ন্যূনতম মজুরি, সমকাজে সমবেতন, অস্থায়ী ঠিকাশ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, স্কিম-ওয়ার্কার্সদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই:
আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি এবং উদার অর্থনীতির আক্রমণের মধ্যে, শ্রমিকদের প্রচলিত সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত করার মালিকশ্রেণি এবং কেন্দ্রীয় রাজ্য সরকারগুলির চক্রান্তে লক্ষ লক্ষ অস্থায়ী ঠিকাশ্রমিকদের অবস্থাও করুণ, এদের না আছে ন্যূনতম মজুরি, না আছে সামাজিক সুরক্ষা। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করেও এরা পরিবারের সকলের মুখে সামান্য দুমুঠো ভাত, ডাল, সবজি তুলে দিতে পারছেন না। স্কিম ওয়ার্কার্সদের অবস্থা আরও কঠিন।

তাই ২০১৬ সাল থেকে দেশের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি এদের ন্যূনতম মাসিক বেতন ১৮,০০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছে, তার সাথে ন্যূনতম বেতনকে ভোগ্যপণ্যের মূল্যসূচকের সাথে যুক্ত করারও দাবি করছে।

সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা : উদার অর্থনীতির আক্রমণের পরিণতিতে দেশের  সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আয় ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন কমছে। বর্তমানে দেশের সংগঠিত ক্ষেত্রের এক ক্ষুদ্র অংশের শ্রমজীবী মানুষের জন্য কিছু সামাজিক সুরক্ষা চালু আছে পি এফ, এস আই, গ্র্যাচুয়িটি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, পেনশন ইত্যাদি। যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের শ্রমজীবী মানুষ অবশ্য সেই সুযোগ পান না। অপরদিকে দেশের ৯৩ শতাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য কার্যত কোনও সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই, অথচ দেশের জি ডি পি- ৬০ শতাংশ হলো এঁদের অবদান। সেই তাঁরাই আজ সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। পশ্চিমবাংলা, কেরালা, ত্রিপুরার মতো রাজ্যে অবশ্য কিছু কিছু অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য প্রকল্প আছে। নির্মাণ, বিড়ি, খনি, সিমেন্ট শিল্পের সাথে যুক্ত শ্রমিকদের জন্য আইনগতভাবে কিছু ব্যবস্থা থাকলেও এই শিল্পগুলির সাথে যুক্ত অধিকাংশ শ্রমিকরা প্রাপ্য সুযোগগুলি পান না।

দেশি-বিদেশি বৃহৎ কর্পোরেটগুলিকে এবং পুঁজিপতিদের খুশি করতে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় বাজেটে সামাজিক ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ ব্যাপক ছাঁটাই করা হয়েছে। গরিবদের জন্য চালু বিভিন্ন স্কিমগুলিকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলন তাই আরও তীব্রতর করতে হবে।

শ্রমিক স্বার্থবিরোধী শ্রমআইন সংশোধনের বিরুদ্ধে : কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক শ্রমআইন সংশোধন করে চলেছে, দেশের মালিকদের স্বার্থে ৪৪টি শ্রমআইন সংশোধন করে ৪টি লেবার কোড তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়ে‍‌‍‌ছে, পার্লামেন্টে একের পর এক  বিল পেশ করা হচ্ছে, ইতিমধ্যে ক্ষুদ্র-শিল্প সংস্থাআইনসংশোধন করে বলা হয়েছে ৪০জন পর্যন্ত শ্রমিক নিযুক্ত আছে এমন সংস্থাগুলি সবই ছোট সংস্থা হিসাবে গণ্য হবে, এবং ফ্যাক্টরি অ্যাক্টের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই আইনের ফলে ফ্যাক্টরি অ্যাক্ট, বোনাস অ্যাক্ট, মিনিমাম ওয়েজ অ্যাক্ট, প্ল্যানটেশন লেবার অ্যাক্টসহ ১৬টি প্রধান প্রধান শ্রমআইনের সুযোগ সুবিধা থেকে কারখানা শ্রমিকরা অর্থাৎ দেশের সংগঠিত ক্ষেত্রের ৮০ শতাংশ শ্রমিককে শ্রমআইনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই দেশের মালিকদের সন্তুষ্ট করতে অ্যাপ্রেন্টিস অ্যাক্টের সংশোধন করা হয়েছে।

শুধু কেন্দ্রীয় সরকার নয়, বি জে পি পরিচালিত সমস্ত রাজ্য সরকারগুলিও একের পর এক শ্রমআইন সংশোধন করে মালিকদের স্বার্থ পুষ্ট করে চলেছে, শ্রমিকবিরোধী এবং মালিকদের স্বার্থ পুষ্ট করতে এমন সরকার স্বাধীনতার পর আমাদের দেশের শ্রমিকশ্রেণি প্রত্যক্ষ করেনি। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মিথ্যা প্রচার চলছে। শিল্পে বিনিয়োগের স্বার্থে শ্রমআইন সংশোধনের নাম করে বি জে পি শ্রমিকশ্রেণির অর্জিত মৌলিক অধিকার লুণ্ঠনের চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি হ্রাস, কাজের ঘণ্টা বৃদ্ধি, হায়ার অ্যান্ড ফায়ার নীতিতে ছাঁটাই, স্থায়ী কাজে অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগকে মদত দিচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে, সমকাজে সমবেতন না দেওয়ার মতো অপরাধ কেন্দ্রীয় সরকার করছে। শিল্পক্ষেত্রে একটা মধ্যযুগী বর্বর ব্যবস্থা চালু করে সমগ্র শ্রমিকশ্রেণিকে দাসশ্রমি‍‌কে পরিণত করতে চাইছে। সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির স্বার্থে, বি জে পি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ এই ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। এদের অন্তরে হিন্দুত্ববাদ মনুবাদের মতো মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন আর মুখে Digital India, Skill India Make in India, Start up India, ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ ‘আচ্ছে দিনের’, মুখোশও।

কেন্দ্রীয় বাজেট প্রসঙ্গে : গত ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ নরেন্দ্র মোদী সরকারের পঞ্চম বাজেট পেশ করা হয়েছে। এই বাজেটে অনেক গোলাপি প্রতিশ্রুতি থাকলেও, শ্রমিকশ্রেণিকে উপেক্ষা করা হয়েছে পেট্রোল-ডিজেলের উপর সেসের হার কমানো, মূল্যবৃদ্ধি রোধ, কালো টাকা উদ্ধার, লাভজনক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের বেসরকারিকরণ বন্ধ, স্কিম ওয়ার্কার্সদের কাজের স্থায়ীকরণ, ন্যূনতম মজুরি প্রদান, কাজের নিরাপত্তা, শ্রমআইন সংশোধন বন্ধ করা শ্রমিকশ্রেণি জনগণের সমস্ত দাবিই উপেক্ষিত থেকে গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর গ্রাম সড়ক যোজনাতেও কো‍‍‌নও অর্থ বরাদ্দ হয়নি (,০০০ কোটি টাকা) প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনায় গরিব মানুষের জন্য কোনও বরাদ্দ বাড়েনি, উলটে কমেছে কেবলমাত্র মিড ডে মিলে ৫০০ কোটি টাকা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসংস্থান প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ,৮০১ কোটি টাকা। কৃষকদের সমস্যা সমাধানের প্রশ্নেও প্রতিশ্রুতি ছাড়া সদর্থক কোনও পদক্ষেপ নেই। শ্রমিক সংগঠনগুলির দীর্ঘদিনের দাবি, শ্রমিকদের মাসিক ন্যূনতম মজুরি ১৮,০০০ টাকা, সকলের জন্য পি এফ, পেনশন, মেডিক্যাল বেনিফিটসহ সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা, সমকাজে সমবেতন প্রদান, কন্ট্রাক্ট লেবারদের স্থায়ীকরণ, তাদের আইনগত সুযোগ-সুবিধা প্রদান, লক্ষ লক্ষ স্কিম ওয়ার্কার্সদের ভাতা বৃদ্ধি, তাদের কাজের স্থায়ীকরণ ইত্যাদি সমস্ত বিষয়গুলিকে  কেন্দ্রীয় সরকার উপেক্ষা করেছে। একটা  অমানবিক মনোভাব নিয়ে এই সরকার চলছে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং এই লড়াইকে নীতি পরিবর্তনের লড়াইতে পরিণত করতে হবে। গত ৮ই আগস্ট, ২০১৭ ‍‌দিল্লিতে অনুষ্ঠিত যৌথ জাতীয় কনভেনশন, -১১ই নভেম্বর, ২০১৭ দিল্লির সংসদ ভবনের সামনে পার্লামেন্ট স্ট্রিটে, ১২ দফা দাবিতে ৩দিন ব্যাপী ঐতিহাসিক  ধরনার পর সারা দেশের সাথে আমাদের রাজ্যে আগামী ২০শে ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবাংলায় প্রতিটি জেলায় আইন অমান্য জেলভরো কর্মসূচিকে সফল করে নরেন্দ্র মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করতে হবে।


আগামী দিনে দেশব্যাপী আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতিতে শ্রমিকশ্রেণি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।