20160404

৬৮লক্ষ চাকরি কোথায়, মিলছে না হিসেব

পীযূষ ব্যানার্জি

------------------------------------
মাধ্যমিক স্কুলশিক্ষকের শূন্যপদ ৩৫হাজার
--------------------------------------
 সাল     পি এস সি-তে আবেদনকারীর সংখ্যা
২০১০         সাড়ে ৩লক্ষের বেশি
২০১১          ১লক্ষ ৪০হাজার (প্রায়)
২০১৩          ২০হাজার
------------------------------------
মেয়াদ                বেসরকারি বিনিয়োগ প্রস্তাব (টাকা)
২০০৬-১১               ৫লক্ষ ৬৩হাজার কোটি
২০১১-১৪                ৩৯হাজার ৫৯৬কোটি
----------------------------------------
জাতীয় নমুনা সমীক্ষার হিসেব: বাস্তবায়িত শিল্প প্রস্তাব
বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ১০শতাংশ
তৃণমূল  সরকারের  সময়ে ২.৬শতাংশ
------------------------------------


এত বড় সাফল্য!

কিন্তু কী বিনয়ী সরকার। কোথাও তুলে ধরা হয়নি এমন সরকারি সাফল্যকে।

রাস্তায় টাঙানো হোর্ডিংয়ে সরকারের হরেক সাফল্যেরনজির। টিভির পর্দা থেকে খবরের কাগজজুড়ে ছড়িয়ে আছে শুধু সাফল্য আর সাফল্য। কিন্তু এত বড় একটা সাফল্যের কোনো প্রচার নেই। কোথাও নেই একটা ছিটেফোঁটা বিজ্ঞাপন।

অথচ এত বড় সাফল্যের খবর রাজ্যবাসীর জন্য বয়ে এনেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

কী সেই সাফল্যের খবর?

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত সাড়ে চার বছরে রাজ্যে ৬৮লক্ষ বেকারের চাকরি হয়েছে! এত বড় সাফল্যের শরিক এই ৬৮লক্ষ’, তাঁরা কারা?

রাজ্যে প্রাথমিকে নিয়োগ নেই। স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে মাধ্যমিকে নিয়োগ বন্ধ। রাজ্যে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সংস্থা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পি এস সি) এখন ঠুঁটো। ২০১০সালে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পি এস সি-র মাধ্যমে প্রথম রাজ্যে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিলো। ওই বছরের এপ্রিল মাসে ১৩লক্ষ আবেদনকারীর মধ্যে ৯লক্ষ আবেদনকারী পরীক্ষায় বসেছিলেন। চারদিন ধরে রাজ্যজুড়ে গ্রুপ ডি পদে পরীক্ষা নিয়ে ২১হাজার সফল পরীক্ষার্থীর প্যানেল তৈরি করে পি এস সি।

২০১০সালে পি এস সি-র গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের জন্য আবেদনকারী সংখ্যা ছিলো ১৩লক্ষ। তার সঙ্গে ডব্লিউ বি সি এস, মিসলেনিয়াস পরীক্ষার্থী ধরলে আবেদনকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে ১৬লক্ষের ওপর। অর্থাৎ, গ্রুপ-ডি বাদে পি এস সি-তে বাকি আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ৩লক্ষের বেশি। 

মমতা ব্যানার্জির আমলে ২০১১সালে পি এস সি-র মাধ্যমে সবমিলিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যা ছিলো ১লক্ষ ৪০হাজারের কাছাকাছি। ওই বছর থেকেই গ্রুপ-ডি নিয়োগ কার্যত বন্ধ। ২০১২সালে ডব্লিউ বি সি এস, ‘গ্রুপ এ’-র সঙ্গে মিসলেনিয়াস পরীক্ষা মিলিয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিলো ২লক্ষ ৯০হাজার। ২০১৩সালে পিএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগের পরীক্ষায় আবেদনের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২০হাজারে। এরপর তো পি এস সি-র হাত থেকে চাকরির পরীক্ষার নেওয়ার সব ক্ষমতাই কেড়ে নেওয়া হয়। কিন্তু কোনো হিসেবেই পি এস সি-র মাধ্যমে নিয়োগে বামফ্রন্ট সরকারকে অতিক্রম করতে পারেনি তৃণমূল সরকার।

নিয়োগ তো দূরের কথা।এরাজ্য থেকে সরকারি স্তরে চাকরির পরীক্ষা প্রায় উঠে গেছে। তৃণমূল আমলে সরকারি দপ্তরে নিয়োগ বলতে শুধু চুক্তিভিত্তিক কিছু কর্মী নিয়োগ আর সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া কর্মীদের রি-এমপ্লয়মেন্ট।

স্কুল শিক্ষকের চাকরিতে নিয়োগ হয়নি। সরকারি দপ্তরে পড়ে আছে হাজার, হাজার শূন্যপদ। শুধু মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকের শূন্যপদই পড়ে আছে ৩৫হাজার। বছর দুয়েক আগে সরকারি ওয়েবসাইটেও দেওয়া এই তথ্য এখন উধাও। ফলে শুধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়েই শূন্যপদের সংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। নিয়োগ নেই। তাহলে এই ৬৮লক্ষচাকরি পাওয়া বেকার যুবক-যুবতী কারা? রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীরাই এখন হন্যে হয়ে তাদের নিজের এলাকায় ৬৮লক্ষেরকোনো একজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এখন ৬৮লক্ষতে থেমে নেই। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে বাড়ছে তাঁর চাকরিদেওয়ার বহর। এই তো সেদিন উৎকর্ষ বাংলানাম দিয়ে নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে তিনি ঘোষণা করে বসলেন,‘‘৬৮লক্ষের চাকরি দেওয়া হয়ে গেছে।আরও ২লক্ষ ছেলেমেয়েকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রসেস চলছে।’’

তাহলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হিসাব বলছে, ৭০লক্ষ বেকার ছেলেমেয়ে এই পাঁচ বছরে চাকরি পেয়েছেন।

কিন্তু কোথায় কতো চাকরি? কোন কোন ক্ষেত্র থেকে চাকরি হলো? তার কোনো জবাব সরকারের কেউ দিতে চাইছে না। সরকারি ক্ষেত্রে চাকরির হাল দেখা গেছে। তাহলে কী বেসরকারি ক্ষেত্রে পাঁচ বছরে দেদার চাকরি মিলেছে?

কী বলছে রাজ্যের শিল্পায়নের হাল?

২০০৬থেকে ২০১১সালের মে মাস পর্যন্ত এরাজ্যে বিনিয়োগের প্রস্তাব ছিলো ৫লক্ষ ৬৩হাজার কোটি টাকা। আবার ২০১১সালের জুন মাস থেকে ২০১৪সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই চার বছরে এরাজ্যে ৩৯হাজার ৫৯৬কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব জমা পড়েছে।

শুধু বিনিয়োগের প্রস্তাবের হিসাবেই বামফ্রন্ট সরকারের শেষ পাঁচ বছরের সঙ্গে তৃণমূল সরকারের চার বছরের তুলনা টানলে মমতা ব্যানার্জি ১৫গুণ পিছিয়ে আছেন। আবার সব প্রস্তাব থেকে শিল্প বাস্তবায়িত হয় না।

জাতীয় নমুনা সমীক্ষার তথ্য বলছে, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে শিল্পে বাস্তবায়িত বিনিয়োগের হার ১০শতাংশ। সেখানে তৃণমূল আমলে বিনিয়োগ বাস্তবতার হার মাত্র ২.৬শতাংশ!

বিনিয়োগ থেকে শিল্প স্থাপন কোনো ক্ষেত্রেই বামফ্রন্ট সরকারের শেষ পাঁচ বছরের সঙ্গে ন্যূনতম প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে পারেননি মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু সরকারের তথ্য নিয়ে কোনো দায় নেই। মুখ্যমন্ত্রীর নেই। শিল্পমন্ত্রীরও নেই।

গত ২০১৫সালে রাজ্যের বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেছিলেন,একবছরে রাজ্যে নতুন করে সাড়ে ১৭লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। সেই তথ্যের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘‘কর্মসংস্থান মানে একশো দিনের কাজের মতো কাজ নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাড়ে ১৭ লক্ষ চাকরি হবে। চাকরি মানে চাকরিই। অন্য সব কর্মসংস্থানের হিসাব ধরলে আমরা একবছরেই ৫০লক্ষ থেকে ১কোটি কর্মসংস্থান পার করে ফেলেছি।’’

এখন যে ৬৮লক্ষচাকরির হিসাব মমতা ব্যানার্জি দিচ্ছেন তা তো এক বছর আগেই কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

কিন্তু এত বড় সাফল্য নিয়ে সরকারের কোনো বিজ্ঞাপন নেই। প্রচার নেই। শুধু ৬৮লক্ষের একটা হিসাব। কোন কোন ক্ষেত্র থেকে এই নিয়োগ হয়েছে সরকার জানিয়ে দিক। কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপনে খরচ করে এত বড় সাফল্যের বিজ্ঞাপনে এক টাকাও খরচ করেনি। এত বড় সাফল্য প্রচারের দায় শুধু নিজের ওপর রেখে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।

এত বড় সাফল্যশেষ পর্যন্ত এত বড় সত্যিইহয়ে উঠবে না তো! 

শিল্পের জায়গায় খেলার মাঠ, রুগ্‌ণতায় দৌড়োচ্ছে মমতা-শাসন

চন্দন দাস

·      খড়্গপুর থেকে চকচকা শিল্পতালুক সব বেহাল
·      চার বছরে রুগ্‌ণ হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি ছোট মাঝারি কারখানা
·      ক্ষুদ্রশিল্পে সহায়তা নেমেছে ৯হাজার থেকে ৩হাজারে
·      ক্ষুদ্রশিল্পে কর্মসংস্থান ৮৬ হাজার থেকে নেমে এসেছে ২৪ হাজারে


হওয়ার কথা ছিল শিল্প তালুক। সেখানে হবে খেলার মাঠ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

মুখ্যমন্ত্রী খেলাধুলা ভালোবাসেন বলে এমন ঘোষণা করেননি। তিনি শিল্প আনতে পারেননি বলে এমন ঘোষণা করেছেন। ‘‘কিন্তু খড়্গপুরের ওই বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকে কাজ হবে বলে যে যুবকরা আশা করেছিলেন, রেলশহরের মাঠে তাঁরা কী ফুটবল, ক্রিকেট খেলে পেট ভরাতে পারবেন?’’ মেদিনীপুরের বাসিন্দা, রাজ্যের ছাত্র আন্দোলনের নেতা সৌগত পন্ডার এই প্রশ্ন জেলার অনেকেরই।

রাজ্যের শিল্প এবং শিল্পে কাজ নিয়ে কেমন ছেলেখেলা চলছে তারই যেন প্রমাণ এই ঘটনা। বেশিদিন আগের ঘটনাও নয়। গত ৬ই জানুয়ারি মেদিনীপুর থেকে খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকের এই রূপান্তরের ঘোষণা করেছেন মমতা ব্যানার্জি। যদিও, সেই স্টেডিয়াম আদৌ হলে তার নাম কী হবে? তা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী জানাননি।

২০০৬ থেকেই পশ্চিমবঙ্গ শিল্প উন্নয়ন নিগম ওই শিল্প তালুক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। পশ্চিমাঞ্চলসহ রাজ্যে বেশ কয়েকটি বড় শিল্পের সম্ভাবনা শিল্প তালুকগুলির ভিত্তি ছিল। জিহারপুর, চকগণেশ, জফলা, রুইসন্ডা, রূপনারায়ণপুর, বড়ডিহাসহ সংলগ্ন এলাকাগুলির কৃষকদের থেকে জমি নেওয়া হয়। প্রায় ১২০০ একর জমি পাওয়া যায় তালুক গড়ার। কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি সংস্থা জমি কেনে। কিন্তু নন্দীগ্রাম-শালবনীর নৈরাজ্যের প্রভাব এখানেও পড়ে। বাধা ছিল এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসেরও। ফলে তালুকটি পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। এই ক্ষেত্রে স্বভাবসিদ্ধভাবে আর একটি ঘটনাও ঘটিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকারের সময়কালে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন খড়্গপুরের ওই জমিতে মেডিক্যাল কলেজ, লোকো পাইলট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি।

তাও হয়নি। এবার নতুন স্টেডিয়ামের ঘোষণা।

এমন উদাহরণ কোচবিহার থেকে নন্দীগ্রাম অনেকই আছে। কোথাও প্রতিশ্রুতি পালিত হয়নি। বরং রুগ্‌ণতার রেসে পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে চলেছে সবচেয়ে দ্রুত।

কোচবিহারে গত নভেম্বরের শেষে গিয়ে শিল্পতালুকে বিনিয়োগের জন্য কাকুতি মিনতি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘দয়া করে দূরের জেলাগুলিতে কাজ করুন। আমি সহযোগিতা করবো।’’ কিন্তু পরিবেশ নেই। দেদার তোলা আদায়। পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ফলে প্রায় পনেরো বছরের পুরনো চকচকা শিল্প তালুকে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়েছে গত সাড়ে চার বছরে। নতুনের দেখা নেই। তাই কাজও নেই। ২০১১-তে ৬৫টি কারখানা ছিল চকচকায়। এখন খাতায় কলমে ৪৫টি আছে। তার ১৫টিতে উৎপাদন হয় না।

উত্তর কিংবা দক্ষিণ পশ্চিম সর্বত্র একই হাল। রুগ্‌ণতায় দৌড়োচ্ছে রাজ্য।

বড় শিল্পে জোর ধাক্কা খেয়ে মমতা ব্যানার্জি ইদানিং বারবার ছোট, মাঝারি শিল্পের গুরুত্বের কথা বলেন। কিন্তু সেখানেও রীতিমত ল্যাজেগোবরে অবস্থা। পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির শাসনের চার বছরে ৩০ হাজারের বেশি ছোট, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প রুগ্‌ণ হয়েছে। ২০১৫-র মার্চের শেষে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮হাজার ৮৩৫টি। ২০১৪-র এপ্রিল থেকে ২০১৫-র মার্চ শুধু এই এক বছরে রুগ্‌ণ হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থা।

কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে চিত্রটি কিছুটা অন্যরকমই ছিল। রাজ্যের ছোট, মাঝারি ও কুটির শিল্প দপ্তরের তথ্য অনুসারে ২০১১-র মার্চে রুগ্‌ণ শিল্প সংস্থা দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৭৯০৪-এ। ওই সময়ে রুগ্‌ণ মাঝারি শিল্প সংস্থা ছিল ৪১৬টি। তথ্য রাজ্যের ব্যাঙ্কার্সদের। কারণ তাদের মাধ্যমেই ছোট, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পের ঋণ এবং সরকারি ভরতুকির টাকা পান আবেদনকারীরা।

বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে রাজ্যে রুগ্‌ণ শিল্প সংস্থার সংখ্যা নিয়ে নানা প্রচার করতেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-র মার্চ থেকে ২০১১-র মার্চের মধ্যে রাজ্যের রুগ্‌ণ ছোট এবং ক্ষুদ্র শিল্পে এক বিপুল উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছিল। ২০০৯-১০ আর্থিক বর্ষে রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান প্রকল্পে ৯৮০৬টি ছোট, ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোগ গড়ে উঠেছিল। এর ফলে কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছিল অন্তত ৮৫ হাজার ৫৫০ জনের। ২০১৪-১৫-তে তা মমতা ব্যানার্জি ২৪ হাজার ৬৪৬-এ নামিয়ে আনতে পেরেছেন! সহায়তা পাওয়া ছোট শিল্প সংস্থার সংখ্যা ২০১৪-১৫-তে ৩৩৯৭!

কর্মসংস্থানের সুযোগ সংক্রান্ত জাতীয় নমুনা সমীক্ষার সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০০৪ থেকে ২০১১ এই সময়কালে ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে দেশে মোট ৫৮লক্ষ ৭০ হাজার কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তার ৪০শতাংশ একা তৈরি করেছিল পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন সরকার। রিপোর্ট বলছে, ওই সাত বছরে ৫৮লক্ষ ৭০ হাজারের মধ্যে একা পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হয়েছিল ২৪লক্ষ অর্থাৎ মোটের ৪০শতাংশ। আর সেখানে দ্বিতীয় স্থানে ছিল নরেন্দ্র মোদীর গুজরাট। সেখানে তৈরি হয়েছিল ১৪ লক্ষ ৯০ হাজার কাজের সুযোগ। যা পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেকটাই কম।


তেলেভাজা যখন শিল্প অথবা শিল্পের ‘তেলেভাজায়ন’

তৃণমূলের প্রকৃত শিল্পায়ন
তৃণমূল কংগ্রেসের ইশ্‌তেহারের ২০ নম্বর পাতায় বলা হয়েছিল, ‘প্রকৃত শিল্পায়নে জোর দেওয়া হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিটি মহকুমায় দশটি করে বড় মাঝারি শিল্প গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মূলত শ্রমনিবিড় শিল্প হবে।কিন্তু প্রকৃত চিত্র হলো – মহকুমাভিত্তিক তো দূরের কথা জেলাভিত্তিক একটি করেও শিল্প হয়নি।

মুখ্যমন্ত্রীর এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক
২০১১সালের বিধানসভা নির্বাচনেতৃণমূলের ইশ্‌তেহারের ৩৪ নম্বর পাতায় মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন,‘‘গ্রামের আধাবেকারসহ এখন বেকারের সংখ্যা ১ কোটি। এদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক বিশেষ ভূমিকা নেবে।’’ সেই ব্যাঙ্কটি ঢাকঢোল পিটিয়ে হয়েছে। নাম লিখিয়েছেন ১৮লক্ষের বেশি যুবক-যুবতী। কাজ পেয়েছেন ১০৪৩জন।

সেই ২লক্ষ ৪৩ হাজার কোটি কোথায়
চলতি বছরের ৯ই জানুয়ারি বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন শেষ করে সাংবাদিকদের কাছে মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘ভারতের সেরা বিজনেস সামিট হলো। এবার কমপক্ষে ২লক্ষ ৫০হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব এসেছে।’’ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে রাজ্যে কত বিনিয়োগ হলো? এরাজ্য গত জানুয়ারি মাসে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ৫০৩কোটি টাকা। তাও এই টাকা এখনই বিনিয়োগ হয়নি। প্রস্তাব আকারে জমা পড়েছে।
২০১৫সালে  ৯ই জানুয়ারি শিল্প সম্মেলনের শেষ লগ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছিলেন,‘‘দুদিনে ২লক্ষ ৪৩ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব এসেছে।’’ কিন্তু বছর শেষে কী দেখা যাচ্ছে? রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে রাজ্যে শিল্প গড়ার প্রাথমিক কাগজপত্রে সই হয়েছে মাত্র ১৮টি। তার মোট পরিমাণ ৬০৫ কোটি টাকা।’

আই টি নিরুদ্দেশ
হলদিয়া, দুর্গাপুর, খড়্গপুর, কল্যাণী এবং শিলিগুড়িতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প প্রসারিত করারঘোষণা হয়েছিলবাস্তব অবস্থা কী? হলদিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী শিলান্যাস করেছিলেন ২০১২-তে। শিলাটি পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্গাপুর, খড়্গপুর, কল্যাণীতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কোন লক্ষণ নেই। শিলিগুড়িতে আই টি-ফেস ২-র কাজ তৃণমূল সরকার করবে বলে ঘোষণা করেছিল। সেই কাজ এখনো হয়নি।

সংখ্যালঘুদের হাব?
ঘোষণা ছিল ৫৬টি মার্কেটিং হাব হবে রাজ্যে সংখ্যালঘু যুবকদের কাজের জন্য। ২০১২-র অক্টোবরে ওই ঘোষণার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সেখানে প্রায় ছাপান্ন হাজার সংখ্যালঘু ছাত্রদের কাজের বন্দোবস্ত হবে। তবে এমন কোনো কাজ এখনো শুরু হয়নি।

বন্ধ জুটমিল, কাজ হারিয়েছে ৪০হাজার
দক্ষিণবঙ্গে চট শিল্পে এখন ১৩টি জুটমিল বন্ধ। কাজ হারানো শ্রমিকের সংখ্যা ৪০থেকে ৫০হাজার। জুটমিলের তিন শিফটে কাজে যাওয়া সংগঠিত শিল্পের চটকল শ্রমিক এখন দিন গুজরান করতে রিক্সার প্যাডেলে পা ফেলছেনশুধু তাই নয়, চালু থাকা জুটমিলেও ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের চুক্তি কার্যকর করছে না কর্তৃপক্ষ। তার ফলে শ্রমিক কর্মচারীরা প্রাপ্য ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না। আরও আছে। চটকল শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, ই এস আই বাবদ সরকারের ঘরে জমে আছে ৮০০কোটি টাকা।

বন্ধ বাগানে কাজ হারিয়ে অনাহারে মৃত্যু চা শ্রমিকের
৩৩টি বন্ধ চা বাগানে কাজ হারানো চা শ্রমিকের সংখ্যা ৫০হাজারের ওপর। অনাহার  চা বাগানে জীবন কেড়েছে প্রায় ৪০০চা শ্রমিক ও তার পরিবার সদস্যকে। রাজ্য সরকার অধিগৃহীত তিন বাগান রেড ব্যাঙ্ক, সুরেন্দ্র নগর ও ধরণীপুরে মৃত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৩০। শুধু রেড ব্যাঙ্ক বাগানে ২০১৪ সালের ২১শে নভেম্বর অধিগ্রহণের পর এক বছর একমাসে প্রায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শ্রমিকরা জানাচ্ছেন। বীরপাড়া বাগানে মৃতের সংখ্যা ৩০।

ধুঁকছে ইস্পাত শিল্প, কাজ নেই হাজারো শ্রমিকের
২০০০সাল থেকে বর্ধমান, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া এই তিন জেলাতেই গড়ে উঠেছিলো ইস্পাত সম্পর্কিত শিল্প। বর্ধমানে ১০৪, বাঁকুড়াতে ৪০এবং পুরুলিয়াতে ১১টি মিলিয়ে মোট ১৫১টি ইস্পাত কারখানার প্রতিটি গড়ে ৫০০হিসাব করলে ৭৫হাজারের ওপর মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছিলবামফ্রন্ট সরকারের আমলে।গত তিন বছরে তিন জেলায় রোলিং মিল, পিগ আয়রন, কাস্ট আয়রণ ইস্পাত সম্পর্কিত চালু হওয়া ১৫১টির মধ্যে ৩৮টি কারখানায় তালা পড়ে গেছে।

খিদে নেই শিল্পের বিদ্যুত তাই উদ্বৃত্ত
শিল্পায়নের চেহারা কেমন তা বোঝার জন্য অন্যতম বড় সূচক বিদ্যুতের চাহিদা। সেই বিদ্যুতের চাহিদার তথ্যই জানিয়ে দিচ্ছে শিল্পায়নে বামফ্রন্ট সরকারের কাছে ডাহা ফেল মমতা ব্যানার্জি। 
১৯৯০-৯১সালে এরাজ্যে শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ৪হাজার ২৬৩মিলিয়ন ইউনিট। ২০১০-১১সালে সেই শিল্পক্ষেত্রে রাজ্যের বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো ২০হাজার ৩২০মিলিয়ন ইউনিট।২০বছরে এরাজ্যে শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির হার বেড়ে হয়েছিলো ৩৭৬শতাংশ! এই হিসাব শুধুমাত্র শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুত চাহিদা।
এখন? মমতা ব্যানার্জির লক্ষ, লক্ষ চাকরি দেওয়ার হিসাবে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুত চাহিদারাজ্য সরকারের ‘ব্যুরো অব অ্যাপ্লায়েড ইকনমিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিটিক্স’ এর স্ট্যাটিস্টিকাল হ্যান্ডবুকেই উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১১-১২আর্থিক বছরে রাজ্যে শুধু শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ২১হাজার ৬৭৭মিলিয়ন ইউনিট। আর ঠিক তিন বছর পর ২০১৩-১৪সালে রাজ্যে শিল্পে বিদ্যুতের চাহিদা কমে দাঁড়ায় ১৮হাজার ৬৩মিলিয়ন ইউনিট। সরকারের দেওয়া তথ্যই জানিয়ে দিচ্ছে, শিল্পে তৃণমূল আমলে গড়ে বছরে ১২০৪মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে।
২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪এই তিন বছরের হিসাবে রাজ্যে শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি, বরং কমে গেছে। মমতা ব্যানার্জির আমলে গত তিন বছরে শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬শতাংশ কমেছে!

সিঙ্গুরের জমি ফেরাতে ৫০বছর লাগবে!
কবে ফেরানো হবে সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি? পাঁচ বছর ক্ষমতায় কাটিয়ে শেষবেলাতেও এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি মমতা ব্যানার্জি। রাজ্য বিধানসভার শেষ অধিবেশনে সিঙ্গুর নিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘ পাঁচ কেন? সিঙ্গুরের জমি ফেরাতে ৫০বছর লাগুক। আমার যা করার আমি করে দিয়েছি।’’ ৮০শতাংশ কাজ হয়ে যাওয়া গাড়ি কারখানাকে রাজ্য থেকে তাড়িয়ে লক্ষ বেকারের কাজের সুযোগ নষ্ট করেছেন মমতা ব্যানার্জি। পাঁচ বছর ক্ষমতায় কাটিয়ে না ফেরত দিতে পেরেছেন কৃষকের জমি, না গড়তে পেরেছেন কারখানা। সিঙ্গুরের সঙ্গে গোটা রাজ্যকেই শিল্পের শ্মশানে পরিণত করেছে তৃণমূল সরকার।

রুগ্‌ণতাই শুধু বাড়ছে
পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির মুখ্যমন্ত্রিত্বের চার বছরে রাজ্যে ৩০ হাজারের বেশি ছোট, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প রুগ্ণ হয়েছে। শুধু ২০১৪-র এপ্রিল থেকে ২০১৫-র মার্চ - এই এক বছরে রুগ্ণ হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থা। এর প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। যদিও ২০১১-র মার্চের শেষে রাজ্যে রুগ্ণ ছোট, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প সংস্থার সংখ্যা ছিল ৮৩৬৫। ২০১৫-র মার্চের শেষে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮হাজার ৮৩৫টি

কাজ কমেছে ছোট শিল্পে
ঘোষণা ছিল ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে ক্লাস্টার গঠনে ঝাঁপানোহবে। গত চার বছরে রাজ্যে একটিও ক্লাস্টার হয়নি। বরং ক্ষুদ্রশিল্পের সংখ্যা এবং সেখানে কাজের বন্দোবস্তকমেছে গত চার বছরে। উদাহরণ, রাজ্য সরকারের সমীক্ষাই জানিয়েছে ২০১৩-১৪-তে রাজ্যে তৈরি হয়েছে ৬২২৪টি ইউনিট। সরকারের দাবি কর্মসংস্থান হবে ৬২, ২৯৯। আর ২০০৭-০৮ সালে রাজ্যে তৈরি হয়েছিল ১৭, ৬১৮টি সংস্থা। কর্মসংস্থান হয়েছিল ১লক্ষ ৮৩হাজার ২৪২জনের।

কাজ না পেয়ে আত্মহত্যা
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য জানাচ্ছে, ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে কাজ না পেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ২৯৬জন। দেশে তৃতীয়। সামনে যুগ্মভাবে তামিলনাডু এবং মহারাষ্ট্র। ওই দুটি রাজ্যেই কাজ না পেয়ে ২০১৪-তে আত্মহত্যা করেছেন ৩১২জন করে। অর্থাৎ তফাৎ সামান্যই। একই দুরবস্থা কলকাতারও। কাজ না পেয়ে এক বছরে আত্মঘাতী হয়েছেন কলকাতার ৪১জন। তাঁদের মধ্যে ৭জন মহিলা। দেশে কলকাতার স্থান পঞ্চম।

সাইকেল বিলি, কারখানায় তালা
তৃণমূল নেত্রী দেদার সাইকেল বিলি করছেন। অথচ রাজ্যের বন্ধ সাইকেল কারখানা চালু করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি তৃণমূল সরকার উলটে সাইকেল কারখানার জমিটুকু ছাড়া কারখানার যাবতীয় চিহ্ন লোপাট করে দেওয়া হয়েছে। ভিন রাজ্যের উৎপাদিত সাইকেলের বাজার গড়ে দেওয়া হলো। নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থার সর্বনাশ করে।

বেহাল গ্রামের গরিবের কর্মসংস্থান
রেগায় ১০দিনের বেশি কাজ না দেওয়াতে শীর্ষে এরাজ্য। ১০লক্ষ মানুষ রেগায় কাজ চেয়েও পেলেন না কাজ। চলতি আর্থিক বছরেই রাজ্যের ৭লক্ষ ১০ হাজার ১২৬টি পরিবার আছে যাঁরা একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেছেনকিন্তু কাজ পেয়েছেন কতদিন? দশ দিন কিংবা তার কম! কাজ পাওয়ার নিরিখে এই সংখ্যায় গোটা দেশের মধ্যে শীর্ষে এরাজ্যেই। পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক ছোট রাজ্য ত্রিপুরা। তবু সেখানে যখন ৭০হাজার ৮০৪টি পরিবার একশো কিংবা তার বেশি দিন রেগায় কাজ পেয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে চলতি আর্থিক বছরে সেই সংখ্যা কম — ৬৯হাজার ৩৬৮। রাজ্যে দশ দিন বা তার কম কাজ পাওয়া পরিবার সর্বাধিক আছে বর্ধমানে। সেখানে ৫লক্ষ ৫৩ হাজারের বেশি পরিবার রেগায় কাজ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১লক্ষ ৫৬ হাজারের বেশি পরিবার দশ কিংবা তার কম দিন কাজ পেয়েছেন। চলতি বছরে রাজ্যের ১০লক্ষ মানুষ একশো দিনের কাজ করতে চেয়েও কাজ পাননি।

বাজেট বইতে ছাপানো লেখাই এখন রাজ্যে চাকরি
৬৮লক্ষ চাকরি দেওয়ার দাবি করছেন মমতা ব্যানার্জি। এই তথ্য তিনি কোথায় পেলেন?
২০১১-১২সালের অর্থ দপ্তরের বাজেট বিবৃতির (৪৫পাতায়) অমিত মিত্র লিখেছিলেন,‘‘বর্তমান বছরে সৃষ্টি হয়েছে অন্তত ৮লক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা।’’
এরপর থেকে প্রতি বছর বাজেট বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রীর লেখায় ছিলো কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার তথ্য।২০১২-১৩সালে বাজেট বইতে লেখা ছিলো,এই বাজেটের ফলে কর্মসংস্থান হবে ১০লক্ষ ২৪হাজার ৪২১জনের। ২০১৩-১৪সালের অর্থ বাজেটের বিবৃতিতে(৪২পাতা) উল্লেখ ছিলো, ...তাই আমি নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ১৩লক্ষ ১৪হাজার ধার্য করছি।’’এই একইভাবে ২০১৪-১৫তে বাজেট বিবৃতির ১৫পাতায় অমিত মিত্র জানিয়েছিলেন,আগামী আর্থিক বর্ষে ১৬লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পরিকল্পনা তৈরি করছি।’’ ২০১৫-১৬সালের বাজেটে তাঁর কথা ছিলো,‘‘আগামী আর্থিক বছরে(২০১৫-১৬) আরও ১৭.৫লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে আমরা বদ্ধপরিকার।’’
গত পাঁচ বছরে বাজেট বইতে ‘সুযোগ তৈরি’, ‘সম্ভাবনা’ বা লক্ষ্যমাত্রা তা যোগ করলে দাঁড়ায় ৬৪লক্ষ ৮৮হাজার ৪২১। সম্ভবনার এই অঙ্ককেই আরও বাড়িয়ে মমতা ব্যানার্জি ৬৮লক্ষে পৌঁছে দিয়েছেন। অথচ ১লক্ষ ৪২হাজার ৫৩৬টি শূণ্যপদ সরকারের ৬২টি বিভাগে। অথচ সাড়ে চার বছরে ৪১হাজার ১৭১নিয়োগ হয়েছে। তার সিংহভাগ আবার চুক্তিতে। মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য দপ্তরে ২০হাজার ২৭৩টি পদ পূরণের কথা। পূরণ হয়েছে ৪২৩১টি - যার প্রায় আশি ভাগ চুক্তিতে। মুখ্যমন্ত্রীর সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরে নিয়োগ হয়েছে মাত্র ২৭৩জন। যদিও শূণ্যপদ ১৭০৩। এই দপ্তরে ২০১৪ এবং চলতি বছরে একজনও নিয়োগ হয়নি। রাজ্যের ক্রীড়া, পরিবহন, রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা এবং ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি শিল্প ও বস্ত্র দপ্তরে সাড়ে চার বছরে একজনেরও কাজ হয়নি।