20160331

MODI-MIX


তৃণমূলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি- ২০১১ : একবার মিলিয়ে নিন !!!

গত ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের  আগে  প্রকাশিত তৃণমূল কংগ্রেসের ৬৪ পৃষ্ঠার ইস্তেহারটি তাদের অন্যসব দলিলের মতোই বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা ও ভিত্তিহীন অপপ্রচারের বস্তা ইস্তেহারের কোন ইংরাজী অনুবাদ তারা করেনি। তবে ইংরাজীতে প্রকাশ করেছিল ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ নামে ৫৯ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা। মূলত ঐ ভিশন ডকুমেন্টে এবং কিছুটা ঐ বাংলা ইস্তেহার মিলে  তৃণমূলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির একটা তালিকা পাওয়া যায়। কিছু বিষয় বাংলা ইস্তেহারে আছে, ইংরাজীতে নেই। কিছু ইংরাজীতে আছে, বাংলায় নেই। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এলে প্রথম ২০০ দিনে এবং প্রথম ১০০০ দিনে (৩৩ মাস ১০ দিন) কী কী কাজ করবে তার দুটো  তালিকা ইংরাজী ভিশন ডকুমেন্টে রয়েছে।

সব মিলিয়ে বাংলা ইস্তেহার এবং ইংরাজী ভিশন ডকুমেন্টে তৃণমূলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে বাছাই কয়কটি এখানে উল্লেখ করা হল:
১) শিল্পে হবে ‘সবুজ বিপ্লব’। ২) এককোটি বেকারের  চাকরি। ৩) তৃণমূল সরকারের লক্ষ্য হবে  ‘উন্নততর কর্মসংস্থান’ সৃষ্টি করা৪) রাজ্যের প্রতিটি জেলায় শিল্প হাব নির্মাণের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে। প্রথম একহাজার দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে৫) পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিটি মহকুমায় অন্তত ১০টি করে বড়, মাঝারি শিল্প গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ৬) প্রথম দুশো দিনের মধ্যে তৃণমূল সরকার রাজ্যজুড়ে শিল্পনগরী শৃঙ্খল গড়ে তুলবে। একহাজার দিনের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে। ৭) বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি খোলার প্রক্রিয়া প্রথম দুশো দিনের মধ্যে শুরু করা হবে। ৮) তৃণমূল সরকার রাজ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের বিকাশ ঘটাবে এবং ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে ‘‘ব্যাপক’’ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। ৯) তৃণমূল সরকার ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে ‘‘ব্যাপক কর্মসংস্থান’’-র ব্যবস্থা করবে ১০) তথ্য প্রযুক্তি শিল্প হলদিয়া, দুর্গাপুর, খড়গপুর, কল্যানী ও শিলিগুড়িতে সম্প্রসারিত করা হবে  একহাজার দিনের মধ্যে। ২০১৫ সালের মধ্যে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প থেকে রাজস্ব আয়ের শতকরা ২৫ ভাগ দখল করবে পশ্চিমবঙ্গ। ১১) প্রথম দুশো দিনের মধ্যে উত্তরবঙ্গের চা-বাগান এবং রাজ্যের জুটমিলগুলির পুনরিজ্জীবন ও আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।   ১২) কলকাতাকে লন্ডন, হঙকঙ, সিঙ্গাপুরের মত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উদ্যোগের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ১৩) ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য রাজ্যজুড়ে ক্লাস্টার তৈরি করা হবে। প্রথম দুশো দিনের মধ্যেই এরকম ১৭টি ক্লাস্টার নির্বাচন করা হবে। সেগুলি বিশ্বমানের উৎকর্ষ কেন্দ্র পরিণত করা হবে। এক বছরের মধ্যেই তা গোটা রাজ্যে প্রসারিত করা হবে। ১৪)  শিল্পের জন্য উপযুক্ত জমির মানচিত্র তৈরি করা হবে১৫) ‘‘স্বচ্ছ ভূমি নীতি’’ তৈরি করা হবে। ১৬) গুজরাট/মহারাষ্ট্রের মডেলে  কৃষকদের নিয়ে সমবায় গঠনের কর্মসূচী চালু করা হবে একহাজার দিনের মধ্যে। ১৭) ‘পূর্ণাঙ্গ ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’  তৈরি করা হবে। তৈরি করতে হবে ‘বেঙ্গল ল্যান্ড ব্যাঙ্ক অথরিটি’। ১৮) পাঁচ বছরের মধ্যে ১০০ শতাংশ জমিতে সেচ এবং ১০০ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে।১৯) রাজ্যের বন্ধ কলকারখানাগুলির ‘‘৪৪ হাজার একর’’ জমিতে হয় আগের কারখানার পুরুজ্জীবন নয়, নতুন কারখানা গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।  ২০) তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার দুশো দিনের মধ্যে নতুন এক কৃষিপ্রক্রিয়াকরণ  বিপ্লবের সূচনা করবে। ২১) সংখ্যলঘুদের চাকরিতে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হবে।২২) ‘‘চাকরি ক্ষেত্রে তফসিলি আদিবাসী ও  ওবিসিদের সংরক্ষণ অনুযায়ী সমস্ত পদ ভর্তি করা হবে।’’ ২৩) মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য ‘উন্নত’ ও ‘বিশেষ’ বেতন কাঠামো করা হবে ২৪) রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাগুলির পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা হবে। (ভিশন ডকুমেন্ট, পৃষ্ঠা ৪৯)পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজান হবে। ২৫) কলকাতায় রেল বিকাশ করপোরেশন তৈরি হবে মেট্রো ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে। ২৬) কলকাতাকে  ‘লন্ডন’, দীঘাকে ‘গোয়া’, দার্জিলিঙকে ‘সুইজারল্যান্ড’ বানানো হবে। ২৭) দুশো দিনের মধ্যে মালদা, কোচবিহার, বালুরঘাট, আসানসোল-দুর্গাপুর, মেদিনীপুর,, বীরভূম ও সাগরে বিমানকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করা হবে।  ২৮) দুশো দিনের মধ্যে তৃণমূল সরকার ১০টি নতুন মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করবে ২৯) ‘মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ’ ( ইংরাজীতে বহুবচনে, মানে অনেকগুলি হবে), ‘মতুয়া সম্প্রদায় বিশ্ববিদ্যালয়’ তৈরি করবে, আরও মাদ্রাসা, আরও উর্দু মাধ্যম স্কুল, আরও হিন্দি মাধ্যম স্কুল তৈরি করবে৩০) তৃণমূল সরকারের লক্ষ্য রাজ্যে ৩০০ আই টি আই প্রতিষ্ঠা করা। ৩১) আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেলে রাজ্যে আরও বেশি সংখ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টা করা হবে একহাজার দিনের মধ্যে। ৩২) সারা রাজ্যে গ্রামীণ মানুষদের জন্য হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রত্যেকটি মহকুমা হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট তৈরি করা হবে। ৩৩) প্রতিটি  মহকুমায় অন্ততপক্ষে একটি মাল্টি-ফেসিলিটি হাসপাতাল চালু করা হবে একহাজার দিনের মধ্যে। ৩৪) সরকার প্রথমেই রাজ্যে বি পি এল-র প্রকৃত সংখ্যা কত তা নির্ধারন করবে৫ বছরের মধ্যে সেই সংখ্য অন্তত ১০ শতাংশ কমাবে।  ৩৫) পাঁছ বছরে ১০০ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ ও পানীয় জল। ৩৬) গরীব মানুষের জন্য ১০ লক্ষ আবাসন৩৭) নতুন নগর ও বন্দর তৈরি করা হবে

নির্জলা মিথ্যাচার ও বাগাড়ম্বর

তৃণমূল কংগ্রেসের ২০১১ সালের নির্বাচনের ইস্তেহার ও ভিশন ডকুমেন্ট পড়লে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নজরে আসে—

(১) বামফ্রন্ট সরকারের কাজকর্ম সম্পর্কে নির্জলা মিথ্যা ও কুৎসার বন্যা। (২)জরুরী বিষয়গুলিতে অস্পষ্টতা রেখে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছে করেই যাতে প্রতিশ্রুতিগুলির কতটা কি হল তা  পাঁচ বছর পর মিলিয়ে নেওয়া কঠিন হয়। (৩) বাগাড়ম্বর। চমকে দেওয়ার মত কথা, যেমন, ‘শিল্পে সবুজ বিপ্লব’, কলকাতা হবে লন্ডন, দীঘা গোয়া, উত্তরবঙ্গ সুইজারল্যান্ড। বাস্তবে কী করা সম্ভব, কোনটা কোন পরিস্থিতিতে অগ্রাধিকার, এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজনবোধ করে নি। তৃণমূল ক্রমাগত মিথ তৈরি করতে চায়। (৪)নয়া উদারবাদী পর্বে উন্নয়নের সমস্যা, গরীব মানুষের বর্ধিত বিপদ ইত্যাদি সম্পর্কে পরিকল্পিতভাবেই তৃণমূল নীরব।

যে যে কাজ রাজ্য সরকারের পক্ষে করা শক্ত, এমনকি সে সব কাজও তৃণমূল সদর্পে বলেছে কারণ  মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিলেই তৃণমূলের চলে; কাজটা করার কোনো দায় নেই। তৃণমূল এবারও ভোটের আগে আরও কিছু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে! আগের প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণের কোনো বালাই তাদের নেই। 

পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সামনে বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্প কর্মসূচী


§  গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ
§  সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়সহ পিছিয়ে পড়া মানুষের স্বার্থ রক্ষা
§  নারী সমাজের নিরাপত্তার ওপর বিশেষ নজর সমাজবিরোধী কার্যকলাপ রোধে কঠোর পদক্ষেপ
§  কৃষি উৎপাদনের সাফল্যকে আরো সংহত করা ও ভূমিসংস্কারের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করা
§  উৎপাদিত ফসলের লাভজনক দাম পাওয়ার ব্যবস্থা ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষকের কাছ থেকে সরকারের প্রয়োজনমত ফসল ক্রয় করা
§  ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা ও পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গ্রামীণ জনগণ বিশেষত গরিবদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা
§  নগরায়নের পরিকল্পিত উদ্যোগ  নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের আবাসনের জন্য সরকারি উদ্যোগ বাড়ানো সরকারি পরিবহন ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন বস্তিবাসীদের বাসস্থানের নিরাপত্তা
§  খাদ্য সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব ও সার্বজনীন রেশন গরিবদের জন্য ২ টাকা কেজি চাল বা আটা সপ্তাহে ৩৫ কেজি করে প্রতি পরিবারে সরবরাহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বাজার থেকে কম দামে সরবরাহ সকলের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা
§  শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পনেরো হাজার টাকা নিশ্চিত করা বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের মাসে আড়াই হাজার টাকা ভাতা ও সস্তায় রেশন বন্ধ চটকল এবং চা-বাগান শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে বিশেষ নজর
§  ছোট ও মাঝারি শিল্পের ওপর গুরুত্ব বৃহৎ শিল্প গড়ার উদ্যোগ তথ্য, জৈবপ্রযুক্তি এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের সম্ভাবনাগুলির সদ্ব্যবহারকৃষিভিত্তিক শিল্প, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পসহ ইস্পাত, অটোমোবাইল, পেট্রোকেম, বিদ্যুৎ, সিমেন্ট, চামড়া, বস্ত্রশিল্প স্থাপনের উদ্যোগ
§  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ সমাজের সর্বস্তরে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলাজীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় জোর
§  বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি গরিব অংশের মানুষের জন্য বিদ্যুতের দামে ভরতুকি
§  শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেটের অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ নিরক্ষরতা নির্মূল করা শিক্ষায়তনে গণতন্ত্র শিক্ষায় বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ করা ভর্তির পদ্ধতি স্বচ্ছ করা শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শূন্যপদ পূরণ মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরো সুসংহত, উন্নত ও প্রসারিত করা বৃত্তিমূলক, কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষার ওপর জোর সমস্ত অস্থায়ী শিক্ষকদের প্রতি সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি ছাত্র সংসদগুলির নিয়মিতভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন
§  স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আরো উন্নত করা ও ওষুধের দাম যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ
§  রাজ্য প্রশাসন দায়বদ্ধ ও সংবেদনশীল করা হবে অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে
§  পরিকল্পনা পর্ষদকে আরো কার্যকর করা বাংলা ভাষাকে প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে উৎসাহিত করার পাশাপাশি হিন্দি, নেপালি, উর্দু, সাঁওতালি ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা
§  বেআইনী চিট ফান্ডগুলির দাপট রোখা চিট ফান্ডের কর্মকর্তা ও তাদের সহযোগীদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা জনগণের টাকা ফেরত দেওয়া

§  কেন্দ্রের সরকারের জনবিরোধী নীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম জারি থাকবে রাজ্যগুলির সাংবিধানিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে রাজ্য সরকার সতর্ক থাকবে কেন্দ্রের সংগৃহীত মোট রাজস্বের ৫০ শতাংশ রাজ্যকে দিতে হবে নদীভাঙন, বন্দরের নাব্যতা রক্ষায়, দার্জিলিঙের পার্বত্য এলাকায় পুঁজি বিনিয়োগে কেন্দ্রের ভরতুকির জন্য প্রয়াস উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে কেন্দ্রের কাছে সাহায্যের দাবি