20190407

‘‘বিজেপি-তৃণমূলের কোনো মৌলিক ফারাক নেই’’: বিমান বসু


 ‘‘বিজেপি-র সঙ্গে তৃণমূলের কোনো মৌলিক ফারাক নেই। অনেকেই ভুলে যান, বিজেপি-কে এরাজ্যে হাত ধরে ডেকে এনেছে এই তৃণমূলই। তৃণমূল আরএসএস-র মতো শক্তিকেও ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে না। আরএসএস-র অনুষ্ঠানে তাদের ‘দেশপ্রেমিক’ বলে সার্টিফিকেটও দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী!’’ গণশক্তিকে একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা বললেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুতৃণমূল-বিজেপি’র মধ্যে গোপন বোঝাপড়া, প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার ব্যাখ্যার পাশাপাশি এরাজ্যে বামফ্রন্টের প্রচারের অভিমুখ ও  গোটাদেশে বামপন্থীদের বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অজয় দাশগুপ্ত।



প্রশ্ন: লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে বামফ্রন্টকর্মীরা মূলত কী আবেদন নিয়ে যাচ্ছেন?
বসু: এবারের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে সারাদেশে একটা মোড় ঘোরানোর মত অবস্থা তৈরি হয়েছে। যেভাবে দেশের সংবিধানের ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে, সংবিধানের বিশেষ বিশেষ ধারাকে তুলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা আমাদের মত বহু ভাষা, বহু জাতি-বর্ণ ও বহু ধর্মের দেশে বিপজ্জনক। এটা বলছে কেন্দ্রে যারা সরকারে আছে, সেই এনডিএ-র নেতৃত্বে থাকা বিজেপি। এই বিজেপি-র প্রাণভোমরা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস। এর অসংখ্য শাখা সংগঠন আছে, যারা নানান কায়দায় মানুষের মধ্যে এই ধরণের প্রচার করছে। আরএসএস-র প্রধান লক্ষ্যবস্তু, দেশের গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকেই পরিবর্তন করা, সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেশ চালাতে চায় তারা। এই নির্বাচনে বিজেপি আবার ক্ষমতায় এলে সেই চেষ্টা যে আরএসএস করবে, তা নিজেদের মধ্যে প্রচার করছে। কিন্তু ভারতের এই সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সাংবিধানিক কাঠামো সময়ের দ্বারা পরীক্ষিত। দেশের সংবিধানের এই ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। তা রক্ষা করার লক্ষ্যেই বামফ্রন্টকর্মীরা প্রচার করছেন। শুধু তাই নয়, বিজেপি-র আমলে দেশের সাধারণ মানুষের ঐক্য, সংহতি, সম্প্রীতির মেলবন্ধন সুরক্ষিত নয়। তাই, বিজেপি-কে পরাস্ত করতে হবে। কে কী খাবে, কে কী পরবে, এই ধরণের ফতোয়া ওরা জারি করতে চায়! মানুষের ওপর এই অগণতান্ত্রিক আক্রমণ নামিয়ে আনছেএই বিজেপি দেশের মানুষের বন্ধু নয়, দেশের মানুষের শত্রু। অবশ্যই একাংশের মানুষের তারা জিগরি দোস্ত; তারা কারা? যারা মাত্র ১শতাংশ, তাদের বন্ধু বিজেপি। ওপরতলার এই ১শতাংশের হাতে ২০১৪সালে দেশের মোট সম্পদের ৪৯শতাংশ ছিল, ২০১৮সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩শতাংশ। এদেরই বন্ধু বিজেপি সরকার। স্বাভাবিকভাবেই, আমাদের এই মহান দেশকে সুরক্ষিত  রাখতে এবং দেশের আপামর জনগণ, শ্রমিক-কৃষক-শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের স্বার্থে, দেশের ঐক্য, সংহতি, সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে আমরা স্লোগান দিয়েছি: ‘বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও’।

প্রশ্ন: এরাজ্যের ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট তো একইসঙ্গে ‘তৃণমূল হটাও, রাজ্য বাঁচাও’ বলছে...
বসু: হ্যাঁ, এরাজ্যে আমরা একইসঙ্গে ‘তৃণমূল হটাও, রাজ্য বাঁচাও’ স্লোগান দিয়েছি। অনেকে এটা বলতে পারেন, এটা তো লোকসভা নির্বাচন। এই রাজ্যের শাসকদলকে কেন আমরা হটানোর কথা বলছি? তার কারণ হলো, বিজেপি-কে এরাজ্যে হাত ধরে ডেকে এনেছে এই তৃণমূলই, সেকথা অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন। ১৯৯৮সালে তৃণমূল দল তৈরি হওয়ার পর অনেক অশুভ শক্তির সঙ্গেই এই দল সম্পর্ক তৈরি করেছিল, যারমধ্যে বিজেপি-ও ছিল। পরে বিজেপি-র নেতৃত্বে এনডিএ সরকার তৈরি হলে তার অংশীদার হয় তৃণমূল। তৃণমূল আরএসএস-র মতো শক্তিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে না। আরএসএস-র মুখপত্র ‘পাঞ্চজন্য’ পত্রিকার এক অনুষ্ঠানে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী গিয়ে বলেছিলেন, না এলে জানতাম না, এরা কতো ভালো! তাদের ‘দেশপ্রেমিক’ বলে সার্টিফিকেটও দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী! নানাসময় বিজেপি-র গুণগানও করেছে তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবে যে কোন চিন্তাশীল ব্যক্তিরই এই ধারণা থাকা ভালো, বিজেপি-র সঙ্গে তৃণমূলের কোনো মৌলিক ফারাক নেই। আর ২০১১ সালে সরকারে আসার পর আমরা দেখছি, এই তৃণমূল সরকার নানাভাবে মানুষের টুঁটি চিপে ধরছে, অধিকার হরণ করছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে লাগাতার কমিউনিস্টদের ওপর, বামপন্থীদের ওপর, যারা এই সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন, তাদেরকেই আক্রমণ করা হচ্ছে। এলাকার পর এলাকায় বামপন্থীরা বাড়িঘর ছাড়া হয়েছেন, লাগামহীন অত্যাচার, খুন চলছে। সাধারণ মানুষকে এখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়াই চালাতে হচ্ছে, জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য লড়াই চালাতে হচ্ছেবিশেষ করে, দ্বিতীয় তৃণমূল সরকার তৈরি হওয়ার পর আমরা দেখছি, লুঠতরাজের রাজত্ব খোলাখুলি শুরু হয়ে গেছে। বেপরোয়া তোলাবাজি চলছে। গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ভূমিসংস্কারের মাধ্যমে যারা জমি পেয়েছিলেন, তফসিলী জাতি, আদিবাসী বা ধর্মের বিচারে মুসলমান মানুষ, তাঁদের অনেকের জমি ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা ফসলের ন্যয্য দাম পাচ্ছেন না। সারাদেশের মতো এরাজ্যেও কৃষিসঙ্কট শুরু হয়েছে, যা বামফ্রন্ট সরকারের সময় রোখা গিয়েছিল। তৃণমূল সরকার মানুষের জীবনজীবিকার ওপরে আক্রমণ নামিয়ে আনছে, যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেইজন্য রাজ্যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইকে জোরদার করতেই তৃণমূলকে পরাস্ত করার বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

প্রশ্ন: সম্প্রতি এসএসসি চাকরিপ্রার্থীরা ২৯দিন ধরে অনশন করলেন। শিক্ষাক্ষেত্রের অন্যান্যরাও আন্দোলনে নেমেছেন। কিন্তু তৃণমূল সরকার তো এরাজ্যে ব্যাপক উন্নয়নের দাবি জানাচ্ছে....
বসু: হ্যাঁ, তৃণমূল সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়নের উদ্দাম প্রচার চলছেকিন্তু উন্নয়ন-এর কথা দিনরাত জপ করলেও মানবসম্পদ উন্নয়নের ভিত এই আমলে দিনদিন দুর্বল হচ্ছেসে এসএসকে বা এমএসকে, অথবা প্রাথমিক, মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক হোক, অথবা মাদ্রাসায় প্রতিটি স্তরেই শিক্ষকের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। নিয়োগ হচ্ছে না। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা। একটা জিনিস লক্ষ্য করবেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তো প্রতিবছর বাড়বে, কম কম হলেও বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।  বামফ্রন্ট সরকারের সময় যেখানে একবার মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা একবছরে ৭লক্ষ থেকে লাফিয়ে ৯লক্ষে পৌঁছে গিয়েছিল, যা মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রাথমিক ফল। একটা প্রজন্মের পর দ্বিতীয় প্রজন্ম শিক্ষার আঙিনায় এলে এটা হয়। এখন যেমন তৃতীয় প্রজন্ম চলছে। তাহলে মাধ্যমিকে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা কমবে কেন? কিন্তু এবারে কমেছে। মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়েও অনেক ঢক্কানিনাদ শোনা যায়। কিন্তু শিক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির মতোই এখানেও শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। যে সরকার মানবসম্পদ উন্নয়নই করতে পারে না, সে আবার কী করে উন্নয়নের দাবি জানায়? 

প্রশ্ন: বিজেপি সভাপতি ও শীর্ষ নেতারা এসে এরাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন প্রশ্ন, অনুপ্রবেশ, এনআরসি প্রভৃতি প্রসঙ্গ প্রচার করছে। প্রধানমন্ত্রীও এতদিন বিকাশের কথা বলে এখন একইভাবে এইসব সাম্প্রদায়িক প্রচারে নেমেছেন। তৃণমূলও পালটা প্রচার করছে। একদিকে, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ এবং অন্যদিকে গোপন বোঝাপড়া, এই দ্বিমুখী বিপদকে বামপন্থীরা কিভাবে মোকাবিলা করবে?
বসু: এরা শলাপরামর্শ করেই পরস্পরের বিরুদ্ধে নাম করে তোপ দাগেবিজেপি সভাপতি বা প্রধানমন্ত্রী এরাজ্যে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তৃণমূলনেত্রীকে ‘দিদি’ ডেকে তোপ দাগেন, আবার তৃণমূলনেত্রী তাঁদের নানা নামে ডেকে পালটা বলছেন। মনে হবে ওদের মধ্যে ভীষণ বিরোধ আছে! আসলে এটাই ওদের বোঝাপড়া তৃণমূল এবং বিজেপি-র মধ্যে বোঝাপড়া থাকার কারণেই গত ৫বছরে সারদা-রোজভ্যালিসহ চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি! নারদা ঘুষকান্ডের ভিডিও ফুটেজ ফরেনসিক টেস্টে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও সংসদের এথিক্স কমিটির একটি বৈঠকও তিন বছরে ডাকেনি এনডিএ সরকার! কেন? অন্যদিকে, সুক্ষ্ণ সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ উভয় দলের পক্ষ থেকেই চলছে। রামনবমীকে কেন্দ্র করে হঠাৎ দুই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো! গতবছর রামনবমীর দিন যেভাবে দাঙ্গা হলো অতীতে পশ্চিমবাংলায় কখনো তা হয়নি। আবার আসানসোলের ইমামের যে ভূমিকা নিয়েছিলেন, তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাসে জ্বলজ্বল করে লেখা থাকবে। তাঁর পুত্র খুন হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি প্রতিশোধ না নিয়ে ‘আমন’ বা শান্তি বজায় রাখার কথা বলেছিলেন। রামনবমীকে কেন্দ্র করে যে হিংসার পরিবেশ সৃষ্টি হলো, এরজন্য দায়ী তৃণমূল কংগ্রেস। একইসঙ্গে বিজেপি-ও, যাকে হাতে ধরে নিয়ে এসেছে তৃণমূল। বিজেপি এরাজ্যে তাদের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের মাধ্যমে এই ধরণের কার্যকলাপ করার সুযোগ পেয়েছে। আরএসএস-র শাখা তৃণমূলের আমলে প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে পশ্চিমবাংলায়। সারাদেশে বিজেপি যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা করছে, তা এখানেও সুকৌশলে করছে। অন্যদিকে, তৃণমূলও ভিন্ন কায়দায় সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করছে। উভয় দলের পক্ষ থেকে মানুষকে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভাজনের চেষ্টা হচ্ছে। এই দুটি দক্ষিণপন্থী দলই বামপন্থীদের শত্রু। কারণ, এতদিন ধরে বামপন্থীরা যে সমস্ত ইস্যুতে আন্দোলন করেছে, যেমন চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরত, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দাম, বেকার যুবকদের চাকরি, শিক্ষক নিয়োগে দূর্নীতিসহ বিভিন্ন জনসাধারণের রুটিরুজির সমস্যা, তা এদের দুই দলের বিরুদ্ধেই। নির্বাচনের মুখে এসে সেসব মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। উভয়ের বিরুদ্ধেই আমাদের সম্প্রীতি রক্ষার লক্ষ্যে আমাদের মানুষের মধ্যে ঐক্য রক্ষার চেষ্টা করতে হবে।  নানারকম প্ররোচনা সত্ত্বেও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের চেষ্টায় অনেক জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রোখা গেছে, যা পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্য।    

প্রশ্ন: এরাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপি-বিরোধী ভোট এক জায়গায় করার উদ্যোগ আপনারা নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। বামফ্রন্ট দুটো আসনে প্রার্থী দেয়নি। সেই দুটো আসনে বামফ্রন্টকর্মীরা কী প্রচার করবেন? 
বসু: এরাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপি-র বিরুদ্ধে ভোট এক জায়গায় করার লক্ষ্যে আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে চেয়েছিলাম। সেই উদ্যোগ শেষপর্যন্ত সেভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। কিন্তু দুটো আসন, মালদহ দক্ষিণ এবং বহরমপুরে বামফ্রন্ট কোনো প্রার্থী দেয়নি। এতেই বোঝা যাবে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা কী। তৃণমূল ও বিজেপিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যেই এই দুই কেন্দ্রে কাজ করছেন বামফ্রন্টকর্মীরা। যেহেতু এই দুই কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী নেই, বিজেপি ও তৃণমূলকে হারাতে সক্ষম এবং এরাজ্যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে এমন প্রার্থীর পক্ষেই তাঁরা প্রচার করছেন। কেন্দ্রে একটি বিকল্প ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠনে সহায়ক শক্তিকে এই দুই এলাকায় জয়ী করার লক্ষ্যে ভোট দেবেন বামফ্রন্টকর্মীরা।

প্রশ্ন: ২০১১সালের পর থেকে এরাজ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলের ভয়াবহ সন্ত্রাস দেখা গেছে। লোকসভা নির্বাচনে তার পুনরাবৃত্তি হবে বলে মনে করছেন?
বসু: একথা ঠিক যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বহু জায়গায় মনোনয়নপত্রই জমা দিতে দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে বীরভূমের উদাহরণ বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। যেখানে জেলা পরিষদের আসনেও বিরোধী দলের কাউকে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। তবে লোকসভা নির্বাচনে হুবহু তার পুনরাবৃত্তি হবে বলে আমি মনে করি না। যদি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এলাকায় এলাকায় রুটমার্চ করানো হয় এবং পোলিং স্টেশনের বাইরে মোতায়েন করা যায়, তবে ভোটারদের মধ্যে ভোটদানের পক্ষে আস্থা তৈরি করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে, ভোট যারা লুট করে, তাদের পৃষ্ঠপোষক রাজ্য প্রশাসন, সেইসব ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আটকানো যায়, তবে মানুষ ভোট দিতে পারবেনআর জনগণের পক্ষ থেকেও নিজের ভোট নিজে দেবো এই জেদ ধরেই চলা উচিত। এক্ষেত্রে অবশ্যই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম জারি রাখতে জানকবুল লড়াই করা একান্ত জরুরী।     

প্রশ্ন: কেন্দ্রে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, বিকল্প সরকার গড়ে তোলার যে স্লোগান বামপন্থীরা দিয়েছে, তা কতটা সফল হবে বলে মনে করেন?
বসু: এবারের লোকসভা নির্বাচনে আমরা স্লোগান দিয়েছি, বিজেপি সরকারকে পরাস্ত করো, লোকসভায় সিপিআই(এম) ও বামপন্থীদের শক্তি বাড়াও এবং কেন্দ্রে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বিকল্প সরকার তৈরি করো। সারাদেশে এখন যে পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যে এবং আমাদের রাজ্যে, তাতে এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিজেপি-বিরোধী একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সরকার তৈরির বাস্তবতা রয়েছে। বিজেপি সারাদেশে ধিক্কৃত হয়েছে, সারাদেশে বিজেপি-র আসন কিভাবে কমবে, তা ওরা উপলব্ধি করতে পারছে না। নির্বাচনের পরে এনডিএ-বিরোধী একটি সরকার তৈরির বাস্তব পরিবেশ সৃষ্টি হলে তা নিশ্চয়ই গতিবেগ পাবে  এবং বিকল্প একটি সরকার তৈরি হবে, সেই আশা রাখছি।