20181205

#দিদিভাই-মোদীভাই: ফ্রেন্ডশিপ আনলিমিটেড



অজয় দাশগুপ্ত   

গত ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮। পেট্রল-ডিজেলের দামে আগুন, বাজারে জিনিসপত্রের দামও একইভাবে হুহু করে বেড়েই চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই বামপন্থী দলগুলিসহ প্রায় সমস্ত বিরোধী দল ভারত বনধ্‌-এর ডাক দিলো। তৃণমূলের অবস্থান ছিল দেখার মতো, একেবারে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ গোছের! বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বন্‌ধ-এ ওদের ‘না’ (যদিও বামফ্রন্ট সরকারের সময় এরাজ্যে মুড়ি-মুড়কির মতো বনধ্‌ ডাকতো তৃণমূল); কিন্তু বিজেপি-বিরোধী হিসেবে নিজেদের প্রতিপন্ন করার আপ্রাণ চেষ্টায় নাম কা ওয়াস্তে পড়ন্ত বিকেলে একটা ছোটোখাটো প্রতিবাদ মিছিল। শুধু কি তাই, বিজেপি-র কাছে নাম্বার বাড়াতে বন্‌ধ ব্যর্থ করার মরিয়া চেষ্টায় নামলো তৃণমূলী প্রশাসন, পুলিশ ও ঠ্যাঙারেবাহিনী। ভারতের কোনো রাজ্যে, এমনকি বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতেও যেটা হয়নি, সেই ‘ডায়াস-নন’ নামে সরকারী ও আধা-সরকারী কর্মচারীদের স্বার্থবিরোধী ফতোয়া জারি করলো তৃণমূল সরকার! সরকারী বাস-ট্রাম অন্যদিনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি চালিয়ে সচল রাখার চেষ্টা। যদিও সে চেষ্টা সফল হয়নি।

সে যাইহোক, এই আনুগত্যের ফলাফল কিন্তু হাতেনাতে পেয়েছে তৃণমূল। এর দুদিনের মধ্যেই, গত ১২ই সেপ্টেম্বর সংসদের নীতিবিষয়ক (এথিক্স) কমিটি পুনর্গঠিত করলেন লোকসভার অধ্যক্ষ সুমিত্রা মহাজন এবং নারদ ঘুষকান্ডের তদন্তে গত আড়াই বছর ধরে একটিও মিটিং না ডেকে শীতঘুমে থাকা এই কমিটির চেয়ারম্যান আবার হলেন বিজেপি-র প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি। গত ১লা আগস্ট দিল্লিতে সংসদ ভবনে তাঁর কক্ষে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে মমতা ব্যানার্জির প্রণাম করার ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ তাঁরা ‘সৌজন্যমূলক’ আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলেন, বলেও আমরা সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানতে পেরেছিলাম! 

আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। ২০১৭সালের ২১শে নভেম্বর ভদ্রেশ্বর পৌরসভার তৃণমূল বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোজ উপাধ্যায় খুন হলেন। এই ঘটনায় বি জে পি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বললেন, ‘‘মনোজ উপাধ্যায়কে অনেকদিন ধরে চিনি। উনি দীর্ঘদিনের আর এস এস কার্যকর্তা। উনি রামনবমীর মিছিলও করেছেন।’’ এরকম আরও অনেক আর এস এস স্বয়ংসেবক তৃণমূলের মধ্যে যে কাজ করছে, তা তৃণমূলের উদ্যোগে রামনবমী, গণেশপুজো, জন্মাষ্টমীর বহর দেখলেই বোঝা যায়সদ্য দলত্যাগী, তৃণমূলের একদা ‘সেকেন্ড-ইন কম্যান্ড’ মুকুল রায় কিছুদিন আগেই সাংবাদিক সম্মেলনে খোলসা করে বলেছেন, ‘‘জন্মলগ্ন থেকেই বি জে পি-র সহযোগিতা, সাহায্য নিয়েই এগিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের যে সাংগঠনিক শক্তি এত বেড়েছে তা বি জে পি-র সাহায্যেই হয়েছে।’’

এটা কোনও গোপন বিষয় নয়, সবারই জানা। তবুও তৃণমূলের নেতানেত্রীরা এবং তাদের প্রসাদপুষ্ট মিডিয়া বারবার মানুষের মধ্যে এই ধারণাই গড়ে তুলতে চায়, যে বি জে পি-র বিরুদ্ধে লড়ছে একমাত্র তৃণমূলই! এই লক্ষ্যেই বামপন্থীদের সমস্ত আন্দোলন-কর্মসূচির খবর কর্পোরেট মিডিয়া ব্ল্যাক আউট করার অঘোষিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দিল্লিতে ‘মহাপডাও’ বা এরাজ্যে বি পি এম ও পদযাত্রার মতো কয়েকটি ঘটনায় এটা প্রমাণিত। অথচ, এটা ঘটনা যে বি জে পি এবং তৃণমূল, এরাজ্যে এই দুই দলই কাজ করছে পরস্পরকে পুষ্ট করার লক্ষ্য নিয়ে, ‘প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা’র কৌশল অবলম্বন করে।

(২)

আসলে, পশ্চিমবাংলায় বি জে পি-আর এস এস-এর ভিত তৈরির জন্যই কংগ্রেস ভেঙে জন্ম হয়েছিল তৃণমূল নামে দলটার। তৃণমূল তৈরির আগে থেকে আজ পর্যন্ত এই দল এবং দলের সুপ্রিমোর গতি-প্রকৃতি একটু তলিয়ে বিচার করলেই সেটা সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে যাবে। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বি জে পি-আর এস এস ‘মুখ’, আর তৃণমূল ‘মুখোশ’-এর কাজ করে চলেছে বিভিন্ন সময়। যেখানে এবং যখন ‘মুখ’ দেখিয়ে কাজ হবে না, তখন ‘মুখোশ’ দেখাও! কিছু লোকদেখানো নাটকবাজি সঙ্গে যুক্ত করো, ব্যাপারটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য! তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে ইতিহাস একটু খতিয়ে দেখলেই এটা আরও স্পষ্ট হবে। 

১৯৯২সালের ৬ই ডিসেম্বর। গোটা বিশ্বে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করে ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হলো চারশো বছরের পুরানো বাবরি মসজিদের ইমারতকে। মমতা ব্যানার্জি তখন কংগ্রেসে, কেন্দ্রে নরসিমা রাও সরকারের মন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু তখন বারবার প্রধানমন্ত্রীকে বি জে পি-আর এস এস যে বাবরি মসজিদ ভাঙতে চলেছে, তানিয়ে সতর্ক করছিলেন। ৪ঠা ডিসেম্বর বামফ্রন্ট প্রতিবাদ সমাবেশও করে কলকাতায়। সেদিনই পালটা সভা করে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘অযোধ্যা নিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে সি পি এম। বি জে পি অযোধ্যায় কিছুই করতে পারবে না। এসব সি পি এম-এর ষড়যন্ত্র।’’ মসজিদ ভাঙার পর অবশ্য এনিয়ে তিনি এই সেদিন পর্যন্ত টুঁ শব্দটি করেননি। আচমকা এবছর তিনি ৬ই ডিসেম্বর মুখ খুলে নানারকম আষাঢ়ে গল্প শুনিয়েছেন!

১৯৯৬ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর ১৩দিনের সরকারের পতন হলো। গঠিত হলো সংযুক্ত মোর্চার সরকার। এই সময় জাতীয় রাজনীতিতে বি জে পি যখন একেবারে কোণঠাসা, কার্যত আঞ্চলিক দলগুলি যখন বি জে পি-কে একঘরে করে দিয়েছিল, ঠিক তখনই বি জে পি-কে বাঁচাতে মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে মমতা ব্যানার্জির। কংগ্রেস ভেঙে তখন তিনি নতুন দল গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তৃণমূল তৈরি হওয়ার আগেই, ১৯৯৭ সা‌লের ডি‌সেম্বর মা‌সে, মমতা ব্যানার্জিই প্রথম বলেন, ‘‘বি‌ জে ‌পি অচ্ছুৎ নয়’’। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক মানুষদের অনেকেই তখন অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু নতুন দল গড়ার মদতটা কোন জায়গা থেকে এসেছিল, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। ১৯৯৮সা‌লের লোকসভা ভো‌টে জোট বাঁধ‌লেন বি‌ জে ‌পি-র স‌ঙ্গে। বি জে পি সভাপতি লালকৃষ্ণ আদবানি তখন বলেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বি জে পি-র সঙ্গে তৃণমূলের এই জোট একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।’’ জ্যোতি বসু এই প্রসঙ্গে বারবার বলতেন, ‘‘তৃণমূলের সবচেয়ে বড় অপরাধ ওরা সাম্প্রদায়িক বি জে পি-কে এরাজ্যে হাত ধরে ডেকে এনেছে।’’

(৩)
১৯৯৮ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর প্রথম এন ডি এ সরকারের রেল মন্ত্রকের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপারসন হয়ে তৃণমূলনেত্রী ক্ষমতার অলিন্দে। ১৯৯৯ সালে আবার বি জে পি-র সঙ্গে জোট, আবার সরকারে, এবার রেলমন্ত্রী। যদিও ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফায়দা তোলার জন্য এন ডি এ থেকে বের হয়ে এসে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধেন। কিন্তু কলকাতা কর্পোরেশনে সেই সময়েও তাদের সঙ্গে বি জে পি-র জোট পুরোদস্তুর বহাল ছিল। তৃণমূলের সুব্রত মুখার্জি মেয়র এবং বি জে পি-র মীনাদেবী পুরোহিত ডেপুটি মেয়রবিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর মমতা ব্যানার্জি আবার ফিরে যান এন ডি এ-তে। এবার হন কয়লামন্ত্রী। সেই সময়, ২০০১ সালের ২৪শে আগস্ট বি বি সি-র ‘হার্ডটক ইন্ডিয়া’ অনুষ্ঠানে করণ থাপারের নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মমতা ব্যানার্জি স্পষ্ট বলেন, ‘‘বি জে পি আমাদের স্বাভাবিক মিত্র..।’’

এন ডি এ আমলেই ২০০২ সালের গোড়াতে হয় গুজরাটে সংখ্যালঘু গণহত্যা, ভারতের ইতিহাসে যা বর্বরতম ঘটনা। বিশ্বজুড়ে এর নিন্দা হয়েছিল। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি এই হত্যাকাণ্ডের কোনও প্রতিবাদ করেননি। তখন তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘এটা বি জে পি-র অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’ ওই বছরই গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনে বি জে পি আবার জয়ী হলে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফুলের তোড়া পাঠিয়ে সবার আগে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি।

২০০৩ সা‌লে ১৫ই সেপ্টেম্বর নয়া‌দি‌ল্লি‌তে আর এস এস-এর মুখপত্র ‘পাঞ্চজন্য’-র সম্পাদক তরুণ বিজয় সম্পাদিত ‘কমিউনিস্ট টেররিজম’ নামে পুস্তক প্রকাশ অনুষ্ঠা‌নে মমতা ব্যানার্জি ব‌লেন, ‘‘কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমি আপনাদের পাশে আছি। য‌দি আপনারা আমায় ১শতাংশ সাহায্য ক‌রেন, আমরা ক‌মিউ‌নিস্ট‌দের সরা‌তে পার‌বো।’’ মমতা ব্যানার্জির আহ্বা‌নে আর এস এস স্বয়ংসেবকরা খুবই উৎসা‌হিত হয়অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মোহন ভাগবত, মদনদাস দেবী, এইচ ভি শেষাদ্রির মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী শীর্ষ নেতারা। তাঁদের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, ‘‘..আপনারাই হলেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক।’’ ‌বি‌ জে পি-র তৎকা‌লীন রাজ্যসভা সাংসদ বলবীর পুঞ্জ, ওই সভা‌তেই ব‌লেন,‘‘আমা‌দের প্রিয় মমতাদি‌দি সাক্ষাৎ দুর্গা।’’

আর এস এস-এর অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের ‘খাঁটি দেশপ্রেমিক’ বলে যে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি, তা কিন্তু স্বয়ংসেবকরা ভোলেনি। গত লোকসভা নির্বাচনের কিছুদিন আগে, ২০১৩সালের ৪ঠা আগস্ট ‘সঙ্ঘ পরিবার’ টুইট করে জানিয়েছিল যে মমতা সেদিন তাঁদের ‘প্রশংসায় পঞ্চমুখ’ হয়েছিলেন! মমতা ব্যানার্জির প্রতি সঙ্ঘ পরিবারের কৃতজ্ঞতা এখনও যে ম্লান হয়নি, তা ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরেও তারা জানিয়েছে।

২০০৪-র লোকসভা নির্বাচনেও বি জে পি-র সঙ্গেই ছিল তৃণমূল। ২০০৪ সা‌লে ৮ই এপ্রিল নয়া‌দি‌ল্লি‌তে বিজে‌পি নেতৃত্বাধীন এন‌ ডি এ-র লোকসভা নির্বাচ‌নের ইশ‌্‌তেহার প্রকা‌শিত হয়। প্রকাশ ক‌রেন অটলবিহারী বাজ‌পেয়ী। ইশ‌্‌তেহা‌রে রামম‌ন্দির ‌নির্মা‌ণের ইস্যু, গোহত্যা বন্ধের মতো বিষয় লেখা হ‌য়ে‌ছিল। আবার সরকা‌রে এলে কয়লাখ‌নি বেসরকারি হাতেই যা‌বে, সেকথাও বলা হয়েছিল। ‌বি‌ জে ‌পি-র এতগু‌লো লক্ষ্য উল্লেখ ক‌রা হয়ে‌ছি‌ল ওই ইশ্‌তেহার। ওইদিন মঞ্চে হা‌জির ছি‌লেন, এন‌ ডি এ-র ১১টি শ‌রিক দ‌লের মধ্যে মাত্র ৫টি দলের প্রতি‌নি‌ধি। সেই ৫জনের মধ্যে একজন হ‌লেন মমতা ব্যানা‌র্জি। সে‌দিন ইশ‌্‌তেহার প্রকা‌শিত হওয়ার আগেই সম্ম‌তি জা‌নি‌য়ে তাতে সই করে‌ছি‌লেন তি‌নি।

২০০৫ সা‌লের ৪ঠা আগস্ট সংসদে প‌শ্চিমব‌ঙ্গে ‘অনুপ্রবেশ’-এর অভিযোগ তুলে, এবিষয়ে আর এস এস-র বহুলপ্রচারিত বক্তব্যই আওড়াতে থাকেন মমতা ব্যানার্জি। আসলে তার মাধ্যমে তিনি সঙ্ঘ পরিবারকে বার্তা দিতে চাইছিলেন: ‘‘আমি তোমা‌দেরই লোক।’’

২০০৬-র বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল বি জে পি-র সঙ্গে জোট বেঁধেই এরাজ্যে লড়েছিল। নির্বাচনের পরে ওই বছরের ২৫শে ডিসেম্বর ধর্মতলায় অনশন মঞ্চে তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন আজকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। বামফ্রন্টবিরোধী যাবতীয় ষড়যন্ত্র, হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনে বরাবর তৃণমূলকে মদত জুগিয়েছে বি জে পি–আর এস এস।

এমনকি, ২০০৯-র লোকসভা ভোটে এবং ২০১১সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল জোট বাঁধলেও বি জে পি-আর এস এস বামফ্রন্টকে পরাস্ত করতে তৃণমূলের হয়েই যে গোপনে কাজ করেছিল, পরে বি জে পি-আর এস এস-র নেতারা বিভিন্ন প্রকাশ্য সভায় তা বলেছেন। চরম বামপন্থী থেকে উগ্র দক্ষিণপন্থী-মাওবাদী থেকে আর এস এস-সমস্ত শক্তির তখন একটাই লক্ষ্য ছিল বামফ্রন্টকে হটানো। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের পর ২০১২ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর তৃণমূল দ্বিতীয় ইউ পি এ মন্ত্রিসভা থেকে সরে যায়।

(৪)
২০১১-য় রাজ্যে তথাকথিত ‘পরিবর্তন’-র পরে মমতা ব্যানার্জিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। মোদী তখনও প্রধানমন্ত্রী হননি। তবু ‘কমিউনিস্ট’ নিধনের আহ্বানটিই যেন মমতা ব্যানার্জিকে মনে করিয়ে দিয়ে নরেন্দ্র মোদী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন —‘‘প্রথম রাতেই বেড়াল মেরে দিন।’’ ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট সরকারের পরাজয়ে উল্লসিত আর এস এস তাদের পশ্চিমবঙ্গ কমিটির মুখপত্র ‘স্বস্তিকা’র ২৩শে মে, ২০১১ তারিখের সম্পাদকীয়তে লেখে: ‘‘অবশেষে দুঃশাসনের অবসান।...ইহা স্বীকার করিতেই হইবে, পশ্চিমবঙ্গের মার্কসবাদী সরকার ও ক্যাডারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁহারই নেতৃত্বে তৃণমূল জোটের এই বিরাট জয়।’’

২০১৩সালে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বি জে পি প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। দেওয়ালে বি জে পি প্রার্থীর নাম লেখাও শুরু হয়েছিল। এই অবস্থায় দিল্লিতে বি জে পি সভাপতি রাজনাথ সিংয়ের বাড়িতে হাজির তখন তৃণমূলের প্রভাবশালী সাংসদ, চিট ফান্ড মালিক কে ডি সিং। বি জে পি-র সাধারণ সম্পাদক রাজীব প্রতাপ রুডির উপস্থিতিতে আঁতাত সম্পন্নএকেবারে শেষ মুহূর্তে বি জে পি প্রার্থীর নাম প্রত্যাহার।

২০১৩সালের পঞ্চায়েত ভোটেও তৃণমূল-বি জে পি সুযোগ বুঝে আঁতাত করেছে। যেমন, পাঁশকুড়ার চৈতন্যপুর-১নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে বি জে পি-কে সঙ্গে নিয়েই পঞ্চায়েত গঠন করেছিল তৃণমূল। প্রধান বি জে পি-র, উপপ্রধান তৃণমূলের! মিনাখাঁ, বামনপুকুর, চৈতল—তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতই চলেছে তৃণমূল-বি জে পি-র যৌথ বোঝাপড়ায়, একেবারে প্রকাশ্যে। উদাহরণ আরও আছে। অবশ্য, পরে বেশ কিছু জায়গায় অন্য দলের মতই বি জে পি-র পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদেরও দল ভাঙিয়েছে তৃণমূল।

সারদাসহ চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি এবং নারদ ঘুষকাণ্ডে এই দুই দলের গোপন বোঝাপড়া দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে। ২০১৪সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন বক্তৃতায় চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলেছিলেন। কিন্তু মোদী সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি, যেমন সি বি আই, ই ডি, এস এফ আই ও কি করেছে? চার বছরের বেশি সময় ধরে ক্রমাগত টালবাহানা করে এই তদন্ত বিলম্বিত করে চলেছে।

মণিপুরে, ২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পর বি জে পি-র সরকার গড়তে সমর্থন করে একমাত্র তৃণমূল বিধায়ক টি রবীন্দ্র সিং। আস্থাভোটে বি জে পি-কে সমর্থন করার পর ওই তৃণমূল বিধায়ক বলে ‘দলের নির্দেশেই সমর্থন।’ আজ পর্যন্ত সেই বিধায়ককে তৃণমূল আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কার করেনি। 

অন্যদিকে, ত্রিপুরার ঘটনায় তৃণমূল যে আদতে বি জে পি-কেই পুষ্ট করতে কাজ করছে, তা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেছে। ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী কংগ্রেসের ৬বিধায়ক ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রথমে তৃণমূলে যোগ দেয়। কিন্তু এবছর এপ্রিল মাসে এই ৬বিধায়কই বি জে পি-তে যোগ দেয়। এমনকি, তৃণমূলের রাজ্যদপ্তরের সাইনবোর্ড পর্যন্ত তারা উলটে দিয়ে তাকে বি জে পি-র দপ্তরে পরিণত করেছে!

সংসদে বিভিন্ন ঘটনায় তৃণমূলের সঙ্গে বি জে পি-র গোপন বোঝাপড়া স্পষ্ট! ২০১৭ সালের ২৯শে মার্চ রাজ্যসভায় অর্থবিল পাশ করাতে তৃণমূল ওয়াক-আউট করে। রাজ্যসভায় অর্থবিলের বিরুদ্ধে তৃণমূল ভোট দিলে তা অনুমোদন হতো না, বেকায়দায় পড়তো মোদী সরকার। কিন্তু সমস্ত বিরোধী দল ভোট দিলেও তৃণমূল অধিবেশন বয়কট করে ওই বিল অনুমোদনের সুযোগ করে দেয় বি জে পি-কে। সংসদে বারেবারে বিজেপি সরকারকে সাহায্য করে চলেছে তৃণমূল। সংসদে বিভিন্ন প্রশ্নে তৃণমূল কিভাবে বিজেপি-র ‘অনুগত বিরোধী’র ভূমিকা পালন করে চলেছে, তা গত ৪ঠা মার্চ, ২০১৬ ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় প্রথম পাতায় প্রকাশিত একটি সংবাদ (TMC plays 'loyal Opposition', only for PM) দেখলেই বোঝা যাবে। ঠিক বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংসদের অধিবেশনে যখন বিরোধীরা মোদী সরকারকে তুলোধোনা করছেন, তখন তৃণমূল সাংসদদের কাছে খোদ মমতা ব্যানার্জির কাছথেকে নির্দেশ আসে যে ‘অনুগত বিরোধী’র ভূমিকা পালন করতে হবে, যা শুনে এমনকি তৃণমূল সাংসদরাও বিস্মিত হয়ে যান। বিরোধী দলগুলি যখনই এককাট্টা হয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণে নেমেছে, তখনই ছলেবলে কৌশলে তৃণমূল তা এড়িয়ে গেছে, বা বানচাল করার চেষ্টা করেছে। ‘ফেডারেল ফ্রন্ট’ তারই একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ!

নারদ ঘুষকান্ডর কথা আগেই বলা হয়েছে। নারদকাণ্ডের জেরে গঠিত লোকসভার এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বি জে পি-র বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি‘এক্স ফাইলস’-এর ভিডিও ফুটেজে তৃণমূলের যে সব সাংসদকে দেখা গিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। লোকসভায় নারদা স্টিং অপারেশনের টেপ জমা পড়ার আড়াই বছর বাদেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের কথা, একটি বৈঠকও ডাকা হয়নি। শুধু তাই নয়, রাজ্যসভায় এথিক্স কমিটি গঠনের বিরোধিতা করেছে স্বয়ং মোদী সরকার। কেন? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে পর্যাপ্ত নথিপত্র দেওয়ার পরেও চিট ফান্ড মালিক তৃণমূল সাংসদ (বর্তমানে সাসপেন্ডেড) কে ডি সিংয়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?

অথচ ইউ পি এ সরকারের আমলে যখন লোকসভার অধ্যক্ষ ছিলেন সোমনাথ চ্যাটার্জি, তখন ঘুষকান্ডে জড়িত সাংসদদের বিরুদ্ধো মাত্র ১২দিনের মধ্যে তিনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। ২০০৫সালের ১২ই ডিসেম্বর গোটা দেশ তোলপাড় হয়েছিল ১১জন সাংসদের ঘুষ নেওয়ার ক্যামেরাবন্দি দৃশ্যে। ১০জন লোকসভার ও ১জন রাজ্যসভার সদস্যকে সেদিনও এক স্টিং অপরেশনে দেখা গিয়েছিল ঘুষ নিতে। তারমধ্যে ৬ই জনই ছিল বিজেপি-র সাংসদ। ২০০৫সালের ২৪শে ডিসেম্বর মাত্র ১২দিনের মধ্যে লোকসভার ১০জন সাংসদ ও রাজ্যসভার ১জন সাংসদকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। এখন আড়াই বছর আগে নারদ ঘুষকান্ডে তৃণমূল সাংসদদের ক্যামেরাবন্দী ভিডিও ফরেনসিক টেস্টে প্রমাণিত হওয়ার পরেও তাঁদের সদস্যপদ টিঁকিয়ে রেখে বিজেপি-র কী লাভ, এটা না বোঝার কোনো কারণ নেই!

(৫)
২০১৬সালের বিধানসভা নির্বাচনেও যে অন্তত ১০০টা কেন্দ্রে বি জে পি প্রার্থীরা বিরোধী ভোট কেটে তৃণমূলকে সহযোগিতা করেছে, কলকাতায় এসে সেকথা বলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী। বি জে পি না থাকলে তৃণমূলের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা যে সহজ হতো না তা মাঝেমধ্যেই বলে থাকেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আর এস এস-র সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বিধানসভা ভোটের আগে সায়েন্স সিটি প্রেক্ষাগৃহে সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকদের সভায় খোলাখুলি বলেছেন, ‘‘আমরা এখানে এমন কিছু করতে পারি না, যাতে কমিউনিস্টরা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে।’’

তৃণমূলের নীতির কারণেই পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক শক্তির বাড়বাড়ন্ত। বি জে পি-র হিন্দুত্বের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে উসকানি দিচ্ছে তৃণমূল, যাতে সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতাই আরও পুষ্ট হচ্ছে। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে বামফ্রন্ট সরকারের সময় বাংলায় আর এস এস-র শাখা ছিল মাত্র ৪৭৫টি। কিন্তু গত ছয় বছরে এই উগ্র সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী সংগঠনটির শাখা পশ্চিমবঙ্গে তিনগুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০০। রাজ্যে আর এস এস পরিচালিত প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা বর্তমানে ৩০৯টি। এছাড়া ১৬টিতে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়াশুনা হয়। আর এরমধ্যে ১৫টি গড়ে উঠেছে গত পাঁচ বছরে। এই তিনশোর বেশি হিন্দুত্ববাদী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬৬হাজার ৯০ জন। ৫০০টি শিশুমন্দির ও ৫০টি বিদ্যালয়মন্দির (হাইস্কুল) প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত এগচ্ছে আর এস এস।

গত তিন বছরে রাজ্যে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে ধূলাগড়, বসিরহাট, নোয়াপাড়ার মতো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা। এই সবকটি ঘটনাতেই স্পষ্ট, বি জে পি-আর এস এস-হিন্দু সংহতি সমিতির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই সাম্প্রদায়িক বিভাজনে নেমেছে তৃণমূল, যাতে ভোটের রাজনীতির ফায়দা হয়। পরস্পরকে পুষ্ট করার লক্ষ্য নিয়েই এই দুই দল এগচ্ছে। ‘রামনবমী’র মিছিলের পালটা ‘হনুমান জয়ন্তী’ করা তারই একটি উদাহরণ। এরাজ্যে প্রথম গোরক্ষকদের হাতে খুন হয়েছিল ধূপগুড়িতে, গরিব পরিবারের দুই ১৯ বছরের কিশোর। গ্রেপ্তার হলো পাঁচ-তিনজন তৃণমূলের, দুইজন আর এস এস’র.! কেশিয়াড়িতে ১৫একর জমিতে আর এস এস গোশালা করলো..গোমূত্র মেলে সেখানে....জমি দিল তৃণমূল.....গোমূত্র বিক্রিও করছে তৃণমূল.....এরাজ্যের বুকে গণতন্ত্র রক্ষা, শ্রমিকের লড়াই, কৃষকের লড়াই, ছাত্রদের ক্যাম্পাস রক্ষার লড়াই, বিভাজনের রাজনীতির ঠেকানোর লড়াই এমনকি বি জে পি’র বিরুদ্ধে লড়াই- এসবের ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান বাধা তৃণমূল..মমতার বাহিনীর এই উন্মত্ত ভোটলুটের একটা উদ্দেশ্য হলো বিজেপি’কে জায়গা করে দেওয়া...প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে। এই প্রসঙ্গো, গত ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ তারিখে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সাক্ষাৎকারটা (নিশ্চয়ই পড়েছেন) আরেকবার পড়ে নিতে অনুরোধ করছি। ওখানে তৃণমূলের 'স্বৈরতান্ত্রিক' চরিত্র উল্লেখ করে উনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বৈরাচারের সঙ্গে হাত মেলালে বামপন্থীদের ক্ষতিই হবে। বরং বিজেপি-র বিরুদ্ধে অন্যান্য অসাম্প্রদায়িক দলগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে ঐক‍্যবদ্ধ প্রতিরোধে নামাটাই জরুরী কাজ এই মুহূর্তে। তৃণমূল যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির সুযোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে, তাও উনি  স্পষ্টভাষায় বলেছেন।

তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের অপসারণ আর এস এস-র লক্ষ্য নয়। আর এস এস মমতা ব্যানার্জির ‘আত্মশুদ্ধি’ চায়। চায় তৃণমূল কংগ্রেসের ‘রিফর্ম’। ২০১৬ সালের অক্টোবরে হায়দরাবাদে তিনদিনের জাতীয় কার্যনির্বাহী বৈঠকে এই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালের ১৪ই জানুয়ারি ব্রিগেডের সভাতেও আর এস এস-র সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। বি জে পি এবং সর্বোপরি আর এস এস-এর হয়ে কিভাবে তৃণমূল দল কাজ করছে, আর বি জে পি-আর এস এস কিভাবে তৃণমূলকে টিকিয়ে রেখেছে, তৃণমূল যে আদতে বি‌ জে‌ পি-র ‘মু‌খোশ’ তা যত দিন যাবে, ততই আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
********
২১শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮

‘দুন্দুভি’ শারদ সংকলন