20160412

কী সৌভাগ্য, খোদ মহিলাটির বিরুদ্ধেই ভোট দিতে পারব

ভোটের দিবসে নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে যাব, আমার মতো শারীরিক অসমর্থদের জন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থা যদি না-ও থাকে, হামাগুড়ি দিয়ে হলেও ভোট-পরিচালকের সামনে উপস্থিত হয়ে আমার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করব।

অশোক মিত্র
আনন্দবাজার পত্রিকা, ১২ এপ্রিল, ২০১৬, ০০:২৭:৪৭

একটি বিশেষ মহিলা সততার প্রতীক বলে তিনি স্বয়ং এবং তাঁর অনুগামীরা গত দুতিন দশক পশ্চিম বাংলাকে অবিশ্রান্ত তোলপাড় করে দিয়েছেন। শহরে গ্রামে ছড়িয়ে লক্ষ লক্ষ অভাবী মানুষজন, বেকারত্বের চাপ বাড়ছে, গ্রামে কিছু কিছু কৃষক যাঁরা আগে নেহাতই খেতমজুর ছিলেন, তাঁরা এক ছটাক দুছটাক করে হয়তো জমি পেয়েছেন, কিন্তু তা চাষ করে স্বচ্ছন্দ বেঁচে থাকার উপায় নেই, শহরে ও শহরতলিতে শিল্পবাণিজ্যের প্রসার সীমিত, কোনও ক্রমে বেঁচে থাকার তাগিদে ক্রমবর্ধমান গরিব মানুষদের উদ্ভ্রান্ত ছোটাছুটি। সততার প্রতীক মহিলাটি খাঁটি প্রাকৃত ভাষায় তাঁদের যথার্থ শত্তুর বলতে কী বোঝায় তা ব্যাখ্যা করতে শুরু করলেনওই গোলগাল চেহারা, অ্যাম্বাসাডর চড়নেওয়ালা, নধর বেটাগুলোই সব সর্বনাশের জন্য দায়ী, তিনি সততার প্রতীক, তাঁকে যদি সর্বগোত্রের অভাবী মানুষগুলি সমর্থন জ্ঞাপন করেন, তা হলেই পশ্চিম বাংলা স্বপ্নরাজ্যে পরিণত হবে, সততা, সততা, সততা: সততার বাইরে থেকে গেলে, সততাকে পরিপূর্ণ সমর্থন না জানালে কৃষক মজুর মধ্যবিত্তের আর কোনও আশা নেই। মধ্যবিত্ত পরশ্রীকাতরতা দিনদরিদ্রদের মানসে অনুপ্রবেশ ঘটানোর কাজে ওই বিশেষ ভাষা ব্যবহার আশ্চর্য সাফল্য এনে দিল, এমনকী লেখাপড়া-জানা অতি-বামপন্থী বলে খ্যাত কিছু মানুষজনও এই সততার প্রতীকে মজে গেলেন।

অথচ মহিলাটির পূর্ব ইতিহাস এমন তো অজানা ছিল না। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে হাতেখড়ির মুহূর্তে তিনি ডক্টর পদবিটি সযত্নে ব্যবহার করতেন, মার্কিন কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি নাকি ডক্টরশ্রী-তে ভূষিত হয়েছিলেন। কয়েক মাসের মধ্যেই প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটিত, ও-রকম নামে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই নেই। তাতে কী? পৃথিবীতে প্রতারকদের তো অভাব নেই, সততার প্রতীক তাদেরই কারও খপ্পরে পড়ে একটু বিব্রত, সেটা ধর্তব্যের মধ্যেই নয়, তিনি রাজ্যের শাসনভার হাতে পেলেই সমস্ত অন্যায় বিলুপ্ত হবে, ন্যায়ের বন্যায় পশ্চিম বাংলা প্লাবিত হবে। পাঁচ বছর আগে রাজ্যের ভোটদাতাদের একটি অ-তুচ্ছ অংশ এ-রকম প্রতীতিতে আচ্ছন্ন হয়ে সততার প্রতীকটিকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিপুল ভাবে জয়ী করলেনস্বপ্নরাজ্য এখন হাতের মুঠোয়।

তার পর অবশ্য অবিশ্বাস্য উলটপুরাণের অধ্যায়ের পর অধ্যায়। সততার স্বরূপ যে কত বিভঙ্গে, কত বৈচিত্রে বিচ্ছুরিত হতে পারে, গোটা পশ্চিম বাংলার সাধারণ মানুষ ক্রমে-ক্রমে হাড়ে-হাড়ে টের পেতে শুরু করলেন। অর্থব্যবস্থার আলোচনা থেকেই শুরু করা যাক। কী কৃষিতে, কী শিল্পে বা পরিষেবায়, গত পাঁচ বছরে এই রাজ্যে উন্নয়নের ছিটেফোঁটা হয়নি। পরিবর্তে চোখ-ছানাবড়া-করা আজব নানা ঘটনা। কালিম্পঙের উপকণ্ঠে এক শোখিন অতিথিশালায় নিভৃত বৈঠকে কে কে এবং কী কারণে উপস্থিত ছিলেন, তা নিয়ে অনেক বয়ান, অথচ কোনও একটিকেও সততার প্রতীক মহিলা ডাহা মিথ্যাবলে সোচ্চার হননি। কিন্তু মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত-অতিনিম্নবিত্ত মানুষগুলি তাঁদের সামান্য সঞ্চয় যে একটি-দুটি অসাধু বিনিয়োগ সংস্থার কাছে গচ্ছিত রাখতে শুরু করেন, শাসক দলের নেতানেত্রীদের প্রবল উৎসাহে ও প্ররোচনায় তা উধাও হয়ে গেল, মাসে মাসে যে টাকা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কথা, তা-ও পুরোপুরি বন্ধ।

পাশাপাশি, অন্য একটি গভীর ব্যঞ্জনাপূর্ণ তথ্য, বহু বছর ধরে ডাকঘরে-জমা-পড়া স্বল্পসঞ্চয়ে পশ্চিমবঙ্গ দেশে সর্বাগ্রগণ্য। এই সঞ্চয়ের দুই-তৃতীয়াংশ রাজ্য সরকারের ঋণ হিসেবে প্রাপ্য, রাজ্য সরকার তাই এই প্রকল্পের ব্যাপ্তিসাধনে বরাবর সচেষ্ট থেকেছেন। দিদিমণির মুখ্যমন্ত্রিত্বে প্রথম দুবছর অন্য ইতিহাস রচনা করল। রাজ্যে ডাকঘরে-জমা-পড়া অঙ্কের পরিমাণ অতি সংকুচিত, অথচ কালিম্পঙের উপকণ্ঠে সেই ঐতিহাসিক সভায় যে যে বেসরকারি বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলির মালিকরা উপস্থিত ছিলেন বলে ধারণা, তাদের সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ প্রায় একশো গুণ বেড়ে গেল। যে বেকার বা গৃহবধূদের সম্প্রদায় ডাকঘরের জন্য টাকা তুলতেন, তাঁরা বেসরকারি বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলির জন্য অর্থ সংগ্রহে শশব্যস্ত। সব মিলিয়ে বিভিন্ন অসাধু সংস্থা কত হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে, তার নানা হিসেব। সাধারণ মানুষের অসন্তোষ চাপা দিতে সংস্থাগুলির চাঁইদের কাউকে কাউকে গ্রেফতার করা হল। ক্রমশ অভিযোগ প্রকাশ পেল, উধাও হওয়া মধ্যবিত্ত গরিব মানুষের টাকা কিছু কিছু সততার প্রতীক দলটির নেতানেত্রীদের কুক্ষিগত। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মাননীয় সাংসদ, কেউ কেউ হয়তো বা প্রখ্যাত শিল্পী বা অভিনেতা-অভিনেত্রী। 

আরও বিচিত্র দৃশ্যের সম্মুখীন আমরা। দুরাচারী এক বিনিয়োগ সংস্থার কারাগারে আটক নায়ক আদালতে আবেদন পেশ করলেন: হুজুর ধর্মাবতার, কী সব আজেবাজে গুজব শুনছি, যেহেতু আমাদের প্রতিষ্ঠান বেশ কয়েকটি রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মহান ব্রতে নিযুক্ত ছিল, কেউ কেউ নাকি বলছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরিয়ে নিয়ে মামলাটি খোদ সর্বোচ্চ আদালতের হাতে অর্পণ করা হোক। বন্দিমহোদয়ের আকুল আবেদন: আমি হলফ করে বলছি, রাজ্য সরকার আমার বিরুদ্ধে অতি দক্ষতার সঙ্গে মামলাটি পরিচালনা করছে, সুতরাং সুপ্রিম কোর্টে সরিয়ে নেওয়ার মতো বিদঘুটে ব্যাপার দয়া করে হতে দেবেন না।

শেষ পর্যন্ত যদিও সেই মামলা এখন দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ের নির্দেশে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে, কবে সেই মামলা শেষ হবে, কেউ জানে না। সত্যের প্রতীক দলটির আরও অনেক নেতানেত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, এক জন রাজ্য মন্ত্রীকে জামিন না দিয়ে বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়েছে। যদিও তিনি আর মন্ত্রী নেই, তেমন ক্ষতি নেই তাতে, বন্দিশালায় তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পুরোপুরি ভোগ করছেন।

আর্থিক দুরাচারের আরও এত এত দৃষ্টান্ত ক্রমশ উদ্ঘাটিত, কোনটা ছেড়ে আগে কোনটা বলব? এখন তো দেখা যাচ্ছে, দলের নেতা মন্ত্রী সাংসদরা প্রায় প্রকাশ্যে উৎকোচ গ্রহণ করছেন। দলের মহানেত্রী শখ করে মাঝে মধ্যে ছবিটবিও আঁকেন। তাঁর ছবির বাজারদর খোলাবাজারে দশ-বারো টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়, কিন্তু তাঁর কাছ থেকে নাকি একটি বিশেষ ছবি কেড়ে নিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা দাম ধরিয়ে দিয়েছে কোনও বেসরকারি সংস্থা। রাজ্য প্রশাসনের প্রত্যেকটি দফতর থেকে এটা-ওটা-সেটা উপলক্ষ করে বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে অর্থব্যয় করা হয়। ক্রমশ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে, প্রকল্পের সুযোগ পেতে হলে দলের কোনও না কোনও কেউকেটাকে দস্তুরি দিতে হয়। সর্বশেষ উদাহরণ জোড়াসাঁকোর ভেঙে-পড়া উড়ালসেতু।

এই দীর্ঘ গৌরচন্দ্রিকা থেকে পাঠকদের অব্যাহতি দিয়ে সততার প্রতীক নেত্রীর স্পষ্ট ঘোষণায় পৌঁছে যাওয়া যাক। তিনি গর্বসহকারে নিজেই জানিয়েছেন, এন্তার সমাজবিরোধীর ওপর তিনি কর্তালি করেন। প্রকৃত অর্থেই তাঁর দল সব গোত্রের সব স্তরের সমাজবিরোধীদের আশ্রয়দাতা। রাজ্যের শাসনকারী দলের সাংসদ প্রকাশ্যে গলা ফুলিয়ে বলছেন, যদি কেউ তাঁর বিরুদ্ধে টু শব্দটি করে, তাঁর ছেলেরা গিয়ে সেই উদ্ধত ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের ধর্ষণ করে আসবে। সাংসদটির বিরুদ্ধে কোনও কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা দূরে থাক, ধর্ষণ নাকি বড়জোর দুষ্টু ছেলের সামান্য নষ্টামি। কোনও বহিরাগত গিয়ে যদি কোনও কলেজের অধ্যক্ষ বা অধ্যাপককে পেটায়, তা হলে যে পেটাল তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে অধ্যক্ষ বা অধ্যাপক বেচারিকে লাঞ্ছনার উদ্যোগ। পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণটি নাকি সাজানো ঘটনা, কামদুনির ধর্ষণ তথা খুন সিপিএম-মাওবাদীদের চক্রান্ত। বিদ্যাসাগর এবং রবীন্দ্রনাথের বাংলাকে সভ্যতা সংস্কৃতির কোন অতলে গত পাঁচ বছরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে, তা অবলোকনে নির্বাক না হয়ে উপায় নেই। ন্যায়পরায়ণতা সম্পূর্ণ অদৃশ্য। মানবাধিকার কমিশনকে মুখ ভেঙচিয়ে তার নির্দেশকে কলা দেখানো হচ্ছে, মহিলা কমিশনেরও একই অভিজ্ঞতা। এমনকী মাননীয় বিচারপতি যদি শাসকের প্রসাদধন্য সমাজবিরোধীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন, পুলিশের ঘাড়ে কটা মাথা, তার কাছাকাছি যায়?

পুলিশ নিছক নিষ্ক্রিয় নয়, এখন শাসক দলের অনুশাসনেই তার ঘোরাফেরা। গোটা প্রশাসনই সেই পথের পথিক। রমেশচন্দ্র দত্ত থেকে শুরু করে অন্নদাশংকর রায় পর্যন্ত রাজপুরুষরা ঋজু, বলিষ্ঠ ন্যায়নিষ্ঠ প্রশাসনের যে ঐতিহ্য স্থাপন করে গিয়েছিলেন, তা এখন ক্লেদাক্ত ধুলোয় লুটোচ্ছে। গোটা প্রশাসন জুড়ে জো-হুজুর-তালিমকারীদের ঠাসাঠাসি ভিড়। একদা বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল ছাত্রছাত্রী, কঠিন পরীক্ষায় সসম্মান উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসনে প্রবেশ, তাঁরা কেন সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থের যূপকাঠে নৈতিকতা তথা আত্মসম্মানবোধ বিসর্জন দিয়েছেন, তা অবশ্যই গভীর গবেষণার বিষয়। সব মিলিয়ে একটি আশ্চর্য নবদর্শন পশ্চিম বাংলায় গত পাঁচ বছরে রচিত: মিথ্যা মানে সত্য, অন্যায় মানে ন্যায়পরায়ণতা, বেআইনিই আইন, অজ্ঞতাই প্রজ্ঞা, যে অত্যাচারিত, সে-ই আসলে অত্যাচারী, আসল অত্যাচারী পারিতোষেকরই যোগ্যতা অর্জন করেছে।

এই উপাখ্যান, মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, সত্যিই অন্তহীন। পাঁচ বছর আগে মহিলাটি দাবি করেছিলেন, জঙ্গলমহলে কোনও মাওবাদী নেই, সিপিএমই মাওবাদী সেজে গোলমাল পাকাচ্ছে। আজ তিনি বলছেন, জঙ্গলমহলে একমাত্র তিনি আছেন আর মাওবাদীরা আছে, আর কেউ নেই। আসানসোলের হিন্দিভাষী-প্রধান এলাকায় নির্বাচনী সভায় পৌঁছে শাসাচ্ছেন: জো হামসে লড়েগা, চুরচুর হো জায়েগা। একটু বাদেই কুলটিতে গিয়ে হাতজোড় করে সকাতর প্রার্থনা: ভুলত্রুটি করে থাকলে ক্ষমা করবেন, মুখ ফিরিয়ে নেবেন না।

এখন মনে হয়, ঘৃণার একটি মস্ত সামাজিক সার্থকতা আছে। জীবনের অন্তিম লগ্নে পৌঁছে আমি স্পষ্টোক্তি করে অত্যন্ত শান্তি পাচ্ছি, মস্ত তৃপ্তি পাচ্ছি: এই স্বৈরাচারিণীকে আমি ঘৃণা করি। ঘৃণা, ঘৃণা, ঘৃণা। আমার ঘৃণা প্রকাশ পড়শিদেরও ঘৃণা-নিষ্কাশনের সাহস সঞ্চার করে। কী সৌভাগ্য, সেই ঘৃণাকে ব্যক্ত করার একটি সুযোগ বর্তমান রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন আমাকে এনে দিয়েছে। যে এলাকায় আমার বসবাস, এখন তা ভবানীপুর কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত। ভোটের দিবসে যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে যাব, আমার মতো শারীরিক অসমর্থদের জন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থা যদি না-ও থাকে, হামাগুড়ি দিয়ে হলেও ভোট-পরিচালকের সামনে উপস্থিত হয়ে পরিচয়পত্র দেখিয়ে পর্দায় ঘেরা যন্ত্রে মহিলাটির বিরুদ্ধে আমার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করব। 

মেগালোম্যানিয়াক

মানব মুখার্জি

অসুখটার নাম মেগালোম্যানিয়া (Megalomania) এই অসুখে আক্রান্ত রোগীকে বলা হয় মেগালোম্যানিয়াক। রোগ হিসাবে এটি খুবই পরিচিত, ইতিহাসের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় এই অসুখ এবং অসুস্থদের নানা বিবরণী। নানা ইতিহাসবিদ নানা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে মেগালোম্যানিয়াক বলেছেন। কিন্তু সবার তালিকায় তিনটি নাম কমন। রোমের সম্রাট নিরো, জার্মানির ফুয়েরার অ্যাডলফ হিটলার এবং ইতালির ডুচে বেনিতো মুসোলিনি।

ডিকশনারিতে মেগালোম্যানিয়া সম্পর্কে বলা হচ্ছে – Megalomania is a psychopathological condition charecterized by fantasies of power relevance, omnipotence and by inflated self esteem. অর্থাৎ মেগালোম্যানিয়া এক ধরনের মনরোগগ্রস্ত অবস্থা, যাতে রোগী নিজেকে পরম ক্ষমতাসম্পন্ন বলে মনে করে। নিজেকে ভাবে পরমশক্তিশালী এবং নিজের সম্পর্কে এক কল্পিত উচ্চ ধারণা পোষণ করে।

ব্যক্তিগত জীবনে মেগালোম্যানিয়াক দুচার জনকে সবাই খুঁজে পাবেন। আমাদের সাহিত্যের পৃষ্ঠাতেও মেগালোম্যানিয়াকদের আনাগোনা আছে। বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মেগালোম্যানিয়াক চরিত্র লীলা মজুমদারের ‘পদিপিসির বর্মীবাক্স’-র পদিপিসি। কিন্তু সাহিত্যের মেগালোম্যানিয়াকরা বাস্তব জীবনে বিশেষ সমস্যা তৈরি করে না, তৈরি করে বাস্তব জীবনের মেগালোম্যানিয়াকরা।

লীলা মজুমদারের পদিপিসি আমাদের সমস্যা না। সমস্যা অভিষেক ব্যানার্জির ছোটো পিসি, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি একজন আদর্শ মেগালোম্যানিয়াক। তিনি যা বলবেন সেটাই এরাজ্যের সিদ্ধান্ত। তিনি যা ভাববেন সেটাই সবাইকে ভাবতে হবে। তাকে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। কারুর পরামর্শ তার প্রয়োজন নেই। তিনি সমস্ত জ্ঞানের আধার। তাকে কুর্ণিশ করাটাই এই রাজ্যের ৯কোটি মানুষের কাজ। উনি চান তাই গোটা রাজ্যকে নীল সাদা রঙে রাঙানো হলো। উনি চান তাই সত্যজিৎ রায়ের বাসভবন বিশপ লেফ্রয় রোডে, সেই নাম পালটে করা হলো সত্যজিৎ ধরণী। রাস্তার নাম ধরণী’ — ভূভারতে কেউ কখনও শোনেনি। কিন্তু উনি ভেবেছেন।

অথচ রাস্তার নামকরণের জন্য প্রখ্যাত ইতিহাসবিদদের নিয়ে একটি কমিটি আছে। কিসের বিশেষজ্ঞ? আমাদের রাজ্যে একমাত্র বিশেষজ্ঞ মুখ্যমন্ত্রী (মেগালোম্যানিয়াকরা ঠিক এরকমই মনে করে)। এখন সত্যজিৎ রায়ের পুত্র কান্নাকাটি করছেন — ‘দোহাই, রাস্তার নাম ফিরিয়ে দিন। তাতে অবশ্য কোনো লাভ হয়নি। কেউ যদি মনে করেন এই অভিযান এখানেই শেষ তিনি ভুল প্রমাণিত হতেই পারেন। ধরণী’-তে বিষয়টা থামবে বলে মনে হয় না। কাল হতেই পারে রবীন্দ্রনাথকে চিরজীবী করতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির সামনের রাস্তা রবীন্দ্র সরণির নাম পাল্টে করে দিলেন রবীন্দ্র মরেনি। এ সবই সম্ভব।

একজন গড় সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ জানেন সাঁওতাল বিদ্রোহের দুজন নেতা সিধো এবং কানহু। সেখানে একজন ডহরবাবু বা তার পরিবারের সদস্যদের একদম ভরা বাজারে মাইকে ডেকে পাঠানোটা বাড়াবাড়ি রকমের অজ্ঞানতা, কিন্তু অজ্ঞানতা অপরাধ নয় কাজেই ক্ষমার্হ। কিন্তু কবি জন কিটস (মৃত্যু - ১৮২১) এবং শেলী (মূত্যু - ১৮২২)-এর সাথে শেকসপিয়রকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের (জন্ম - ১৮৬১) জ্ঞানগর্ভ আলোচনার উৎস একটি প্রহেলিকা ছাড়া কিছুই না। কি করে জানলেন? নিশ্চয়ই কোনো বইয়ে পড়েননি, নিশ্চয়ই কেউ বলেননি। স্রেফ উনি ভেবেছেন। আর যেহেতু তিনি মেগালোম্যানিয়ায় আক্রান্ত তাই যেটা ভেবেছেন সেটাকেই সত্য বলে জেনেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আবার রবীন্দ্রপ্রেমী। কথায় কথায় তিনি রবীন্দ্রনাথকে টেনে আনেন। তাই অবলীলাক্রমে ১৯৪১ সালে প্রয়াত কবি ১৯৪৬ সালে বেলেঘাটায় এসে মহাত্মা গান্ধীর অনশন ভাঙাতে তাঁর হাতে ফলের রসের গ্লাস তুলে দেন কারণ তিনি ভেবেছেন। একইভাবে ১৮৬১-তে প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ১৮৩৩-এ প্রয়াত রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে এসে বক্তৃতা দিয়ে যান। এবং এ কথা ভুলবশত একবার বলে ফেলেননি, দুদুবার বলেছেন। কারণ তিনি যা ভাবেন তাই অভ্রান্ত, ১০০% খাঁটি সত্য।

তবে এই সব অসংখ্য মণিমুক্তার ভাণ্ডার জনজীবনে খুব বিপজ্জনক হয়ে ওঠে না। বড়জোর আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পর কেউ যদি বই লেখেন রাজ্য রাজনীতিতে হাস্যরসতবে এইসব তাতে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং আমাদের উত্তরসূরিরা এই সব পড়ে হেসে কুটিপাটি হবেন। কিন্তু মেগালোম্যানিয়াক রাজনীতিকদের কীর্তি এতটা নিরামিষ হয় না, এর সাক্ষ্য দিচ্ছে ইতিহাস। মেগালোম্যানিয়াকের প্রধান দুটি বৈশিষ্ট হলো এক, নিজেকে সর্বশক্তিমান ভাবা, দুই, নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবা। অর্থাৎ তিনি বাকিদের মতো নাতিনি সবার ওপরে। উনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে এই মনোভাবই সমস্ত মেগালোম্যানিয়াককে স্বৈরাচারী বানায়। সাধারণ মানুষের কাজ তাকে অনুসরণ করা। যদি করে তবে ভাল, আর না করলে তাকে অনুসরণ করতে বাধ্য করতে হবে।

২০১১-র পরের কোনো নির্বাচনে মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারেনি। পরাজয় দূরে থাক কোনো নির্বাচনে তার সমর্থন কমে যাওয়াটাও একজন মেগালোম্যানিয়াক নেতা সহ্য করতে পারেন না। কেবল লোকসভা, পঞ্চায়েত বা পৌরসভার মতো রাজনৈতিক ভোট না, ছাত্র সংসদ থেকে কো-অপারেটিভ, পাড়ার ক্লাব থেকে স্কুল কমিটি সব নির্বাচনেই সরকারি দল গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঢালাও নির্দেশ — ‘অন্যরা যাতে একটি আসনও না পায় সেটা দেখতে হবে।এই নির্দেশ কেবল দলের কাছে যায় না, সাধারণ এবং পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের কাছেও এই নির্দেশ যায়। স্টিং অপারেশন খ্যাত শ্রীযুক্ত মির্জা বা ভারতী ঘোষের মতো পুলিশ কর্তারা ঠিক এই কাজ করেছে পঞ্চায়েত বা পৌরসভা নির্বাচনে।

এটা কাকতালীয় কিনা জানি না। ক্ষমতায় আসার পর হিটলার এবং মুসোলিনি দুজনেই প্রশাসন এবং দলকে মিশিয়ে দিয়েছিলেন, যেটা এই রাজ্যে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই কাজ করার জন্য দল এবং প্রশাসনকে বিশেষভাবে তৈরি করতে হয়। অন্যকে সহমতে আনার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটি ক্রমশ অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়। ২০১১-র আশপাশে তৃণমূলের মিটিং-এ মিছিলে বড় সংখ্যায় থাকতো সেই কর্মীরা যারা মানুষকে সহমতে আনতে পারে। কিন্তু এই অংশের প্রয়োজন ক্রমশ ফুরিয়েছে তৃণমূলের কাছে, তাদের দরকার ভোট লুট করার বাহিনী, তাদের দরকার প্রতিপক্ষ মুখ বন্ধ করার বাহিনী। তাদের দরকার মানুষকে ভয় দেখানোর বাহিনী, পায়ে হাঁটা মিছিলের বদলে বাইকবাহিনীকে বেশি দরকার।

বিধাননগরের পৌরভোটে টিভিতে আমরা দেখেছি মাটিতে ফেলে ৭০বছরের বৃদ্ধর বুকে লাথি মারা হচ্ছে। এরা রাজনৈতিক কর্মী হতে পারে না, এরা পেশাদার সমাজবিরোধী। কেন আসে এরা তৃণমূলের সাথে? নবান্নতে দিদিআছেন মানে এরা করে খেতে পারবে।তোলাবাজি, সিন্ডিকেট এগুলোই তো এদের কাজ। এই করে এরা খায়। তৃণমূলের রাজনীতি দেখে এরা আসে না। অর্থনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই এরা আসে। কাজেই যে কোনো মূল্যে এরা তৃণমূল ক্ষমতায় থাকুক এরা চায়। পাঁচ বছরে তৃণমূল দলের চেহারা পালটে গেছে। তৃণমূলের নেতা এখন অনুব্রত, আরাবুল, কাজল শেখ, মণিরুল, কানকাটা দিলীপ বা রানিগঞ্জের এম এল এ সোহরাব আলিরা। দল ছেড়ে চলে গেছেন পঙ্কজ ব্যানার্জি, এই বাহিনীর হাতে বেধড়ক মার খেয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এটাই এখনকার তৃণমূল।

২০১০-এ মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন আমি অনেক গুন্ডা কন্ট্রোল করিআর এখনকার বাস্তবতা হলো গুন্ডারা ওনাকে এবং ওনার দলকে কন্ট্রোল করে। যে কোনো মূল্যে ক্ষমতাই মেগালোম্যানিয়াকের লক্ষ্য। কোন্ পথে তা আসলো তা তার দেখার দরকার নেই। রানিগঞ্জের এম এ এ সোহরাব আলি লোহা চুরির মামলায় অপরাধী সাব্যস্ত হলেও তাকে তিনি সরান না। জেলে গেলেও মদন মিত্রকে মন্ত্রী রাখেন এবং প্রার্থী করেন। যারা নারদ স্টিং অপারেশনে ধরা পড়ল সেই সব তৃণমূল নেতারা জানেন নেত্রী তাদের কিছু বলবে না বরং তাদের পাশে দাঁড়াবেন। হিটলারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুচর হেরম্যান গোয়েরিং লুট করে ইউরোপের সবচেয়ে বড়লোকে পরিণত হয়েছিলেন। তার জমির পরিমাণ ছিল ১লক্ষ একর বা ৪০০ বর্গ কিলোমিটার। প্যারিসের মিউজিয়াম থেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্প সামগ্রী লুট করে এনেছিলেন। সেই সব জিনিসের পরিমাণ এতটাই ছিল ২৬টি ট্রেন বোঝাই করে তা আনতে হয়েছিল। এতে গোয়েরিং-এর ওপর হিটলারের আস্থা বিন্দুমাত্র কমেনি। কারণ হিটলারের নিজের ক্ষমতার প্রধান স্তম্ভ ছিলেন গোয়েরিং।

পৃথিবীর সমস্ত মেগালোম্যানিয়াক স্বৈরাচারী শাসকদের অধিকাংশই ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতিপরায়ণ। কয়েক বছর আগে গ্রিস যখন তার বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পারছে না, তখন তার নিলামে তুলেছিল রোডস দ্বীপে মুসোলিনির প্রাসাদ তার দাম উঠেছিল ১০০ মিলিয়ন ডলার।

আমাদের রাজ্যের মেগালোম্যানিয়াক ভদ্রমহিলাটি একসময় নিজেকে সততার প্রতীক বলে প্রচার করতেন। চাপে পড়ে এখন সেসব করেন না। ডেলোর পাহাড়ী বাংলোর মধ্যরাতে চিট ফান্ড মালিকদের সাথে গোপন মিটিং, রহস্যজনক ক্রেতাদের কাছে কোটি কোটি টাকার ছবি বিক্রি এসবের উত্তর তিনি দিতে পারছেন না। দিতে পারছেন না তার ভাইয়েদের হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির, এমনকি দিল্লির ফাইভ স্টার হোটেলে ভাইপোর ১১কোটি টাকার বিয়ের। স্বৈরাচার শেষ বিচারে দুর্নীতির উৎস। এবং দুর্নীতি এক জায়গায় দাঁডিয়ে থাকে নাতা প্রসারিত হয়। পাঁচ বছরে এই রাজ্য সৎ মানুষদের জেলখানা এবং চোরেদের মুক্তরাজ্যে পরিণত হয়েছে। দল, নেতা, নেত্রী, প্রশাসনের একটা অংশ সবাই এ পথের যাত্রী। যদি উনি জিতে চান এই রাজত্ব প্রসারিত হবে, কারণ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাও তিনি বি জে পি-র সাথে সমঝোতা করে ম্যানেজ করে নিয়েছেন।

মেগালোম্যানিয়াকের স্বাভাবিক চরিত্র সে আইন মানে না, আইনের প্রতিষ্ঠান মানে না, নিজেকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে মনে করে। কিন্তু এখন মমতা ব্যানার্জির কাছে এটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য না, তার আত্মরক্ষার এক মাত্র পথ। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তার রাগ ফুটে বেরোচ্ছে প্রতিটি বক্তৃতায়। আদালত সম্পর্কে তার প্রকাশ্য অবজ্ঞা তো আমরা গত পাঁচ বছর ধরে দেখছি। কাজেই শেষ চেষ্টা তিনি করবেন যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে। তিনি একটি পথই জানেন তা হলো লুট। এবারে এটা করবার মতো সাহস তিনি অর্জন করতে পারবেন কি না এটাই প্রশ্ন। এবারই প্রথম তিনি ভয় পেয়েছেন। কাজটা তার পক্ষে কঠিন। তিনি জানেন সব কিছু তিনি ম্যানেজ করতে পারবেন, পারবেন না বাংলার মানুষকে ম্যানেজ করতে।

মেগালোম্যানিয়াকদের শেষ যখন আসে তারা থাকে একা। সম্রাট নিরোর সাথে ছিল তার সঙ্গিনী। বার্লিনের মাটির নিচের বাংকারে হিটলারের সাথে একমাত্র ছিল ৪০মিনিট আগে যাকে বিয়ে করেছিলেন সেই এভা ব্রাউন। মুসোলিনীকে ধরে ফেলেছিল মিলানের পার্টিজান সৈনিকরা, তাকে মেরে ওরা ঝুলিয়ে দিয়েছিল ল্যাম্পপোস্টে। মিলানের শ্রমিক মহল্লা থেকে দল বেঁধে এসেছিল না খেতে পাওয়া হার জিরজিরে মেয়েরা, ঝুলন্ত দেহটাতে থুতু দিতে।

আমাদের মেগালোম্যানিয়াকও ক্রমশ একা হয়ে আসছেন। ২০১১-তে তাঁর সাথে ছিল সবাই। বামপন্থীরা ছিল একা। ৫বছর পর তার কেউ নেই। সবাই তার বিরুদ্ধে। উনি একা হয়ে আসছেন। মেগালোম্যানিয়াকের শেষ সময় ঘড়ির কাঁটার সাথে ক্রমশ এগিয়ে আসছে।-- 

সংখ্যালঘু উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার হিসেবই নেই

বরাদ্দ টাকায় কী কাজ হলো, কে করলো
জানাতে পারছে না মমতার সরকার

সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ টাকায় কী কাজ হয়েছে? কোন সংস্থা কাজ করেছে? মমতা ব্যানার্জির সরকার জানাতে পারেনি। এই প্রশ্ন তুলেছে সি আই টি ইউ। 

আর প্রশ্ন উঠেছে সংখ্যালঘুদের জন্য পরিচালিত মাল্টি সেক্টোরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামস (এম এস ডি পি) নিয়ে। প্রথম ইউ পি এ সরকারের সময়কালে চালু এই প্রকল্পে দেশের প্রায় ৯০টি সংখ্যালঘু নিবিড় জেলায় নানা পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে টাকা বরাদ্দ করা হয়। রাজ্যে এমন ১২টি জেলা আছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে এম এস ডি পি-র টাকা খরচে কিংবা তাতে হওয়া কাজের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে একাধিকবার প্রথম হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের সময়কালে ওই প্রকল্পের কাজ নিয়ে বেশ কয়েকটি জেলায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না, বরাদ্দ টাকা খরচ হচ্ছে না এমন অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, হাজার কোটি টাকা খরচের কোনো হিসেবই নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্বয়ং রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী। তবু অভিযোগের বহর বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে আর টি আই আইনে রাজ্য সরকারের কাছে এই বিষয়ে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। কিন্তু কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। বুধবার সি আই টি ইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী এক সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, আমরা রাজ্য সরকারের কাছে ফাইল নম্বর ও তারিখ ধরে জানতে চেয়েছি যে ওই টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে। ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত সমস্ত তথ্য রয়েছে। এ কাজের জন্য কোন্‌ কোন্‌ নোডাল এজেন্সি কাজ করেছে তার বিস্তারিত তথ্য আমরা চেয়েছি। কিন্তু সরকারের তরফে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। আদৌ তার কোনো হিসেব আছে কিনা বলুক সরকার। অবিলম্বে এই সমস্ত তথ্য দেওয়া হোক বলে দাবি করেন শ্যামল চক্রবর্তী।

শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারের অপদার্থতায় ফ্রি কোচিং থেকেও বঞ্চিত তফসিলি ও আদিবাসী ছাত্রছাত্রীরা। এদিন শ্রমিক ভবনে শ্যামল চক্রবর্তীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বলেন অমিতাভ চৌধুরি। তিনি এই আর টি আই করেছেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। আর টি আই তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে উত্তর দিনাজপুরে ২০১১- ১২ সাল থেকে ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। একইভাবে মুর্শিদাবাদে প্রায় ২১৫ কোটি, নদীয়ায় ৮০ কোটি, উত্তর চব্বিশ পরগনায় ৭২ কোটি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়া মালদহে ১০৯ কোটি, কলকাতায় প্রায় ২৩ কোটি, হাওড়া ২৬ কোটি, বীরভূমে ৭৯ কোটি, কোচবিহার ৪২ কোটি, বর্ধমান ৪৯ কোটি, দক্ষিণ দিনাজপুর ৫১ কোটি টাকা গত ৪ বছরে পেয়েছে। এই টাকার সমস্ত হিসাব দিতে হবে, জানাতে হবে সংখ্যালঘুদের জন্য কীভাবে তা খরচ হয়েছে।

এছাড়াও তফশিলি ও আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিখরচায় পড়ার সুযোগ চালু রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের অপদার্থতায় তা ব্যাহত হয়েছে বলে জানান শ্যামল চক্রবর্তী। ফলে বহু ছাত্রই কেন্দ্রের ফ্রি কোচিং-এর সুযোগ থেকে বঞ্চিত। কেন্দ্রের সামাজিক ন্যায় বিচার দপ্তরের প্রকল্প- নিখরচায় চাকরির পরীক্ষার জন্য তফসিলি ও আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়। বিধানসভা ভিত্তিক জনসংখ্যার সংরক্ষণ অনুযায়ী তা চূড়ান্ত হয়। রাজ্যের ক্ষেত্রে জেলাগুলিতে সরকার সেই প্রস্তাব পাঠায়নি বলে অভিযোগ। এর ফলে বহু ছাত্রছাত্রী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। রাজ্য সরকারকে এর জবাব দিতে হবে

রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-র মার্চ থেকে ২০১৫-র ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্য সরকার এম এস ডি পি বাবদ প্রায় ১১৩৬ কোটি টাকা পেয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকেই এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫৫৭ কোটি টাকার খরচের হিসাব (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) দিতে পারেনি। আর কাজের ক্ষেত্রেও নানা প্রশ্ন উঠছে। যেমন সাধারণ ক্লাসরুমের কথাই ধরা যেতে পারে। ২০০৮ থেকে শুরু হয়েছে এম এস ডি পি। ২০০৮-২০১১-র মার্চ, এই সময়ে রাজ্যের সংখ্যালঘু নিবিড় এলাকার স্কুলগুলিতে অতিরিক্ত ৬৫৬৫টি ক্লাসরুম তৈরির অনুমোদন পেয়েছিল বামফ্রন্ট। ২০১১-র মার্চের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছিল ৬৯২৭টির কাজ। অর্থাৎ প্রায় একশো শতাংশ কাজই শেষ হয়েছিল। অন্যদিকে, ২০১২-র মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত ৫৫৩১টি অতিরিক্ত ক্লাসরুমের অনুমোদন পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। হয়েছে ২৫৬২টি পঞ্চাশ শতাংশের কাছাকাছি। বাকিগুলি কেন হলো না? কে কাজ করছিল? তার জবাবই চাওয়া হচ্ছে সরকারের কাছে।

আর একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে পলিটেকনিক কলেজ তৈরির কাজ। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে সংখ্যালঘু নিবিড় এলাকায় ৩টি পলিটেকনিক তৈরির অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১১-র মার্চ পর্যন্ত ২টি পলিটেকনিকের কাজ চলছিল। ১টির কাজ শুরু করা যায়নি। আর মমতা ব্যানার্জির সরকার গত সাড়ে চার বছরে আরও ৬টি পলিটেকনিক কলেজ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকে। কেন্দ্রীয় সরকার তাতে সবুজ সংকেত দিয়েছে, টাকাও অনুমোদন করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শেষ হয়েছেসেই ২টিরই!

সংখ্যালঘুদের জন্য নতুন স্কুল তৈরির কাজও বিশেষ কিছুই হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের সময়কালে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে ৪১টি স্কুল বানানোর অনুমোদন মিলেছিল। তারমধ্যে ৩৫টির কাজ শেষ হয়েছিল। ৭টির কাজ চলছিল। আর গত সাড়ে চার বছরে আরও ৬৭টি স্কুল তৈরির অনুমোদন পেয়েছিল সরকার। কিন্তু কাজ শেষ হয়েছে ৫টির।
অর্থাৎ বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে শুরু হওয়া ৭টি স্কুলের কাজও শেষ করতে পারেনি বর্তমান সরকার। এমন নানা অসঙ্গতির কারণেই সি আই টি ইউ-র পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সরকার জবাব দেয়নি।

৬ই এপ্রিল, গণশক্তি                                                    

একটি সমকালীন ভাবনা

শ্রীতিভ

বামপন্থাকে অপ্রাসঙ্গিক এবং অচল রাজনৈতিক দর্শন বলে যে বুর্জোয়া অর্থনীতিবিদরা আকাশ বিদীর্ণ করেছেন  তারাই আজ পুঁজিবাদী সংকটের গভীরতায় এবং ব্যাপকতায় দিশাহারা। তল পাচ্ছেন না। একটার পর একটা দাওয়াইপ্রয়োগ করেও সংকট থেকে মুক্ত হতে পারছেন না। তাদের সৃষ্ট নয়া-উদারবাদীঅর্থনীতি ঘরে বাইরে আজ কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন। এ হেন সংকটকালে এদেশের একদল পণ্ডিত অহরহ বামপন্থার ত্রুটি বিশ্লেষণে অকৃপণ শব্দ ব্যয় করে চলেছেন। অথচ এই ক্লান্তিহীন প্রয়াসের মধ্যেই কখন যে সিঁদ কেটে সমাজে প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে সেটা বৌদ্ধিক গোষ্ঠীর বেশিরভাগের নজর এড়িয়েছে বা সরকারি খেতাব আর বদান্যতার লোভনীয় হাতছানিতে নজর দেওয়ার কথা মনেই আসেনি। পুঁজির কেন্দ্রীভবন বা বাণিজ্যের একচেটিয়াকরণ আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে স্বৈরতান্ত্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা। শিক্ষা-সংস্কৃতির জগতে আধুনিক বিজ্ঞানের পাশাপাশি অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে রক্ষণশীল ভাবনা। একদিকে বিজ্ঞানের কারিগরি বিকাশের হাত ধরে মঙ্গলগ্রহে অভিযান চলেছে অন্যদিকে চলেছে বেদ-উপনিষদ-পুরাণকে আধুনিক শিক্ষার পাঠক্রমে স্থান করে দেবার গৈরিক তৎপরতা। ফ্যাসিবাদের জমি তৈরি হচ্ছে দ্রুততার সাথে। ফ্যাসিবাদ শুধু হিংস্রতা আর জবরদস্তির মধ্যেই থেমে থাকে না-মানুষের যুক্তিশীল মননকে ধ্বংস করে গড়ে তোলে অন্ধ জাত্যভিমান-ফ্যানাটিজম। দেশের বিপুল কর্মহীন যৌবনের হতাশার মধ্যে‍‌ই লালিত হয় গোঁড়ামির প্রতি অনুরাগ-যাকে হাতিয়ার করে ক্ষয়িষ্ণু লুম্পেন পুঁজি।

এদেশে কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। সংবাদে প্রকাশ যে সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে ৩৬৮টি পিওন পদের চাকরির জন্য ২৩লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়েছে যার মধ্যে ২৫৫ জন পি এইচ ডি! যদি সকলের ইন্টারভিউ গ্রহণ করা হয় (২৪‍‌x৭দিন) তাহলে প্রায় সাড়ে চার বছর সময় লাগবে বলে অনুমান! এ রাজ্যেও টেটপরীক্ষায় ২৩ লক্ষ আবেদনপত্র পড়েছে ২৩ হাজার পদের জন্যে! এই ভয়ংকর কর্মহীনতার পশ্চাতে রয়েছে নয়া উদারবাদী অর্থনীতি। অতিরিক্ত মুনাফার লক্ষ্যে জাতীয় পুঁজি সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছে। সামাজিক সুরক্ষার দায় অস্বীকার করে অনিশ্চয়তার আর্থিক শৃঙ্খলে সে আবদ্ধ করতে চায় শ্রম ব্যবস্থাকে। একচেটিয়া পুঁজির এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে আড়াল করে এদেশে বৃহৎ পুঁজির প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলি অনৈতিহাসিক যুক্তির অবতারণা করছে। দক্ষিণপন্থী শক্তির শাসনে বর্তমানে যে ভাবনা রাষ্ট্রীয় দর্শনে পরিণত। ছত্তিশগড়ে দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে কর্মহীনতার কারণ হিসাবে মহিলাদের চাকরি করাকেই দায়ী করা হয়েছে! (TOI-26.09.2015) যে-কোন রাষ্ট্রের উন্নয়নের সূচক সে দেশের নারীদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি। বলাবাহুল্য ভারতের চিত্রটি এক্ষেত্রে সামন্তবাদী পশ্চাৎপদ ভাবনায় লাঞ্ছিত। ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের প্রতিক্রিয়াশীল সাংস্কৃতিক ভাবনাই এদেশের বুর্জোয়া দলগুলি পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। ব্যক্তি স্বাধীনতা-নারীর সম্মান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নির্বাসিত। চরম অসাম্য আর বিপুল কর্মহীনতার এই অন্তহীন বেদনা এবং ধূমায়িত ক্ষোভকে প্রশমিত করার দায়িত্ব অস্বীকার করে কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই বিকাশলাভ করতে পারে না।

বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির দুনিয়ায় ঘনায়মান অন্ধকারের পেছনে রয়েছে সমন্বিত বহুজাতিক পুঁজির বাজার সংকট। সেই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যেই চলেছে গরিব এবং উন্নয়নশীল দেশের ওপর বৃহৎ পুঁজির খবরদারি-তাদের বাজার চাই। আর বাজার না থাকলে সরকারকেই মুনাফার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এ দেশে গৈরিক শাসনে ঠিক সেই কাজটিই আমরা প্রত্যক্ষ করছি। শ্রম আইন পরিবর্তন, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণের নামে বিলোপসাধন, জমি বিল সহ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি মালিকদের হাতে দিয়ে দেওয়া ইত্যাদি সবই দেশীয় এবং বহুজাতিক পুঁজির মুনাফার গ্যারান্টি। একাজে দেশের আঞ্চলিক এবং বৃহৎ বুর্জোয়া দলগুলির মধ্যে আপাত বিরোধিতা থাকলেও পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে এদের দ্রুত ঐক্য স্থাপিত হয়। বাইরের আচরণে যাই থাক না কেন রাজনৈতিক শ্রেণিস্বার্থে এরা অভিন্ন। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমাশিল্প বেসরকারিকরণের উদ্দেশ্যে বিলের ক্ষেত্রে এই শ্রেণি অভিন্নতা আমরা দেখেছি।

পুঁজিবাদী অর্থনীতির গভীর সংকটের খোলসেই আশ্রয় নেয় ফ্যাসিবাদ - ইউরোপের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যার পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি গ্রিসের কৃচ্ছ্রতাবিরোধী নির্বাচনে নয়া-উদারবাদী অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে যারা দৃঢ়ভাবে সংগ্রাম করতে সমর্থ সেই গ্রিক কমিউনিস্ট পার্টি (কে. কে. ই) নির্বাচনে ৫.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অথচ জাতীয়তাবাদী নাৎসি গোল্ডেন ডনপেয়েছে ৬.২৮ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় নির্বাচনেও এই ধারা অব্যাহত। মানুষের দাবির সমর্থনে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নেতৃত্ব যদি যথার্থ প্রগতিশীল বামপন্থী শক্তির হাতে না থাকে তাহলে সে আন্দোলন বিপথগামী হবে এবং সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা পুঁজির কাছেই আত্মসমর্পণ করবে।

এদেশেও হিন্দু মৌলবাদের উত্থান গত শতাব্দীর নাজি উল্লাসকেই স্মরণে এনে দেয়। সম্প্রতি ভারতে নরেন্দ্র দাভোলকার, গোবিন্দ পানসারে, অধ্যাপক এম এম কালবুর্গীর হত্যা এক গভীর সামাজিক অন্ধকার আর বিষণ্ণতার ইঙ্গিত বহন করে। ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল চিন্তনের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনার অর্থ ধর্মান্ধতা আর পশ্চাৎপদ ভাবনার প্রসার ঘটানো। সাম্প্রদায়িক এবং জাতি দাঙ্গার পটভূমিতেই স্বৈরাচার আশ্রয় গ্রহণ করে বেড়ে ওঠে। সমাজে যুক্তি বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান মনস্কতা গড়ে তোলাই আধুনিক শিক্ষার প্রাণসত্তা-গণতান্ত্রিক সামাজিক চিন্তার ভিত্তি। তাই অধ্যাপক কালবুর্গীর হত্যা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। একটি সামগ্রিক দার্শনিক ভাবনার সুনিয়ন্ত্রিত প্রকাশ যা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সমাজের কাঠামোটিকেই ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে চাইছে। সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত বিশিষ্ট সাহিত্যিকরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। অনেকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন আকাদেমি পুরস্কার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর বেপরোয়া আক্রমণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে আমাদের সকলের।

আচ্ছে দিন’-এর মায়াবী আলোর রোশনাই ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে। ফিরে আসছে ধর্মীয় উন্মাদনা আর হিন্দুত্ববাদের এজেন্ডা। জনজীবন আকৃষ্ট হয়েছে চটকদারি প্রচারের সাজানো ছবি দেখে। জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের পেছনেও ছিল পুঁজিপতিদের সক্রিয় সমর্থন এবং জার্মান জাত্যভিমান যা শেষ পর্যন্ত সভ্যতাকেই বিপন্ন করে তুলেছিল। শুধুমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়নেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ২৭ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। ৭ মিলিয়ন ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল। নাৎসি পার্টির কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মর্মান্তিক কাহিনী বিশ্বের বিবেককে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিল। এই ধ্বংসলীলার কুখ্যাত নায়ক হিটলারকেই সেদিন জার্মান পুঁজিবাদ দুহাত তু‍‌লে আশীর্বাদ করেছিল। জনমোহিনী কর্মসূচির মারফত ক্ষমতাসীন হয়েছিল হিটলার-বাকিটুকু এক মলিন বিষণ্ণ ইতিহাস।

নয়া উদারবাদী অর্থনীতির সাঁড়াশি আক্রমণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে তাকে চেনা যায় - তার গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করা যায়। কিন্তু ভাবজগতে রক্ষণশীলদের আধিপত্য বিস্তারের সাম্প্রতিক ক্রিয়াকলাপ দেশের গণতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্বকে ভেঙে ফেলতে উদ্যত। কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটি আদতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের রাজনৈতিক মঞ্চ-তারাই এর চালিকাশক্তি। অধ্যাপক ইরফান হাবিবের মতে এই সংগঠনটি (RSS) তাদের জন্মলগ্ন থেকেই ফ্যাসিবাদের প্রতি তাদের মোহ এবং শ্রদ্ধাকে আড়াল করেনি। তাদের নেতা হিটলারের প্রশংসা করে ইহুদিদের প্রতি হিটলার যে আচরণ করেছিল তেমন আচরণ ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি হওয়া উচিত বলে মনে করে।’ (পিপলস্‌ ডেমোক্রেসি)

আজ আমরা এমন এক শক্তিকে প্রত্যক্ষ করছি যারা ফ্যাসিবাদী চরিত্র অর্জনে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। বিষয়টি বিচ্ছিন্নভাবে রাজনৈতিক পরিসরে আলোচিত হলেও জন আন্দোলনের কার্যক্রমে পর্যবসিত হয়নি। পুঁজিবাদ সংকটের আবর্তে যতই পতিত হচ্ছে ততই সে জাতীয় বুর্জোয়া দ্বারা পরিচালিত স্বাধীন রাষ্ট্রকে স্বৈরতান্ত্রিকতার পথে ঠেলে দিচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতে সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতাসীন হওয়ার ফলে অর্থনৈতিক নীতির ক্ষেত্রে কোন মৌলিক পরিবর্তন সূচিত না হলেও গণতান্ত্রিক সামাজিক পরিমণ্ডলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আর কোন অবদান নেই সে প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে ফলে সামাজিক চিন্তায় যুক্তিবাদের পরিবর্তে অতিপ্রাকৃত রক্ষণশীল ভাবনার চর্চাকেই পরিচর্যা করছে। ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদকে সংহত করার দায় যদি ফ্যাসিবাদী ঝোঁক-সর্বস্ব কোন দলের হাতে থাকে তাহলে অচিরেই সে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

এই পরিস্থিতিতে কর্পোরেট দুনিয়া জনসাধারণের মনে নিজেদের পছন্দমতো সরকার বেছে নেওয়ার অধিকারের কাহিনি ফলাও করে প্রচার করে। একথা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে নির্বাচকমণ্ডলীর স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার সাংবিধানিক শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ প্রকৃত অর্থে নয়। বৃহৎ একচেটিয়া পুঁজির হাতেই প্রচারমাধ্যম সম্পূর্ণ কুক্ষিগত। সেই মাধ্যমের সাহায্যেই নির্বাচকমণ্ডলীর পছন্দ’ (Choice) কে নিজেদের শ্রেণীস্বার্থের অনুকূলে প্রবাহিত করা হয়। রাজনৈতিক অর্থনীতিতে পছন্দের নিরপেক্ষতার কথা বলা হলেও আসলে তা পছন্দহীনতায় পৌঁছে দেয় - নির্বাচকমণ্ডলীর তথাকথিত স্বাধীন মনোনয়ন পরিণত হয় দাসত্বের স্বাধীনতায় (Choice leads to absent of choice, freedom means bondage)প্রখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক নোয়াম চমস্কি এই প্রক্রিয়াকেই ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেপ্টআখ্যা দিয়েছেন অর্থাৎ সমাজ ভাবনার গতিপ্রকৃতিকে সরাসরি পুঁজির নিয়ন্ত্রণ। সেই কারণেই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয় কিন্তু রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রের পরিবর্তন হয় না। যদিও কর্পোরেট দুনিয়ার এই প্রক্রিয়া বহুক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ বানচাল হয়ে যায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্রোতে। বিশ্বে এ ধরনের উদাহরণ কম নেই। এদেশেও বিভিন্ন রাজ্যে বামপন্থী সরকার গঠন এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্রোতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং টিকে আছে।

বিগত লোকসভার নির্বাচন এবং বিশেষ করে এ রাজ্যের বিগত চারবছরের নির্বাচনগুলিতে প্রশাসনিক সহযোগিতায় দুষ্কৃতীদের জবরদস্তিতে নির্বাচকমণ্ডলীর স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার কার্যত অবরুদ্ধ স্বাধীনতায়পর্যবসিত হয়েছে। অধুনা এ রাজ্যে স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন একটি অলীক ভাবনা। এই কারণেই প্রতিটি নির্বাচকের স্বাধীন মত প্রকাশের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে প্রসারিত করার কাজটি গণতান্ত্রিক সংগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। এ কাজে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের অংশগ্রহণ সবিশেষ জরুরি। স্বাধীন গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলির সমর্থকদের মধ্যে এই কর্মসূচির ব্যাপক প্রসারলাভ হলে তা প্রত্যক্ষভাবে সমাজচেতনাকে প্রভাবিত করবে, জনচেতনা হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটবে। বামপন্থীরা সব সময়েই মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারকেই স্বীকৃতি দেয় তাকে প্রতিষ্ঠা দেয় - এটাই গণতন্ত্রের ভিত্তি।

আশার কথা, ধীরে হলেও প্রগতির শক্তি ক্রমশ সংহত হচ্ছে। ম্লান-বিষণ্ণ মুখগুলো ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষায়। হারানো বিশ্বাসটুকু মানুষ আবার ফিরে পাচ্ছে। ভাঙছে ভয় -জাগছে মনুষ্যত্ব-বিবেক। নৈরাজ্যের আঁধার কাটছে - সাম্প্রদায়িক শক্তির উল্লাস মানুষের প্রতিরোধের প্রাচীরে প্রতিহত হচ্ছে -বেগবান হয়ে উঠছে বামপন্থী আন্দোলন। পূবের আকাশে সিঁদুর রঙের ছটা নতুন দিনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাকে সাদরে বরণ করাই সময়ের চাহিদা। 

উৎপাদন বন্ধ, সৌরবিদ্যুতে রাজ্যের গর্ব অন্ধকারে

প্রসূন আচার্য
আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ১৮জুলাই, ২০১৫, ০৩:২৪:২৪

দেশ-দুনিয়া জুড়ে যখন সৌর শক্তি ও বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে, তখন এ রাজ্যে ঘনিয়ে এসেছে অন্ধকার! রাজ্যে সৌর শক্তি ও বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি গত দুবছর ধরে বন্ধ! জলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

কেবল তা-ই নয়, সৌর শক্তি নিয়ে প্রচারের জন্য কলকাতা, দুর্গাপুর এবং শিলিগুড়িতে আধা-সরকারি উদ্যোগে আদিত্যনামের যে শো-রুম গুলি আছে, তা-ও বন্ধ করে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে! এই শো-রুমে  যে অস্থায়ী কর্মীরা অল্প বেতনে কাজ করেন, গত ৬ মাস ধরে তাঁরা বেতনও পাচ্ছেন না।

অন্ধকার এখানেই থেমে নেই! সৌর শক্তি ব্যবহারের জন্য আয়লা দুর্গতদের পুনর্বাসন-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র যে কোটি কোটি টাকা দিয়েছিল, রাজ্য তা-ও খরচ করতে পারেনিঅবশেষে সেই টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল রিনিউয়েবেল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ওয়েবরেডা)।

অথচ গল্পটা হওয়ার কথা ছিল উল্টো! ওয়েবরেডা-র কাজ দেশকে পথ দেখাবে, এমনটাই আশা করেছিলেন সকলে। বাম আমলে যে ওয়েবরেডা-র খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দেশ-বিদেশে, আজ তার কাজ নেই বললেই চলে!

ভারতে প্রথম সৌর শক্তি থেকে দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে গ্রিডের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছিল এ রাজ্যেই। এই কেন্দ্র স্থাপন করে ওয়েবরেডা-র তৎকালীন প্রধান শান্তিপদ গণ চৌধুরী বিদেশে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বর্ধমান জেলার জামুরিয়ায় এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করতে এসেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। পরিত্যক্ত কয়লা খনির উপরে সোলার-প্যানেল লাগিয়ে গড়ে তোলা এই প্রকল্প স্থাপন করে দিশেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশন গোটা দেশে পথ দেখিয়েছিল। তার ৬ বছরের মধ্যে রাজস্থান, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কর্নাটক সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। নেওয়া হচ্ছে নিত্য-নতুন পরিকল্পনা। কেন্দ্রীয় সরকারও এর জন্য বহু টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কোন রাজ্য কত বেশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে, উৎপাদনের জন্য কোন রাজ্য কত টাকা উৎসাহ ছাড়দেবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। আর প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতোই এ রাজ্য ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে!

কেবল সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রেই নয়, ধানের তুষ বা বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে বর্ধমানের ভাতার ও বাঁকুড়ার বনকাটিতে যে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল, তা-ও বন্ধ। এখানে একটিতে ১০ মেগাওয়াট, অন্যটিতে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো। বেসরকারি ভাবে এই বায়োমাস বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হলেও কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারই ভর্তুকি দিয়েছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছোট মোল্লাখালিতে যে অপ্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল, হালফিল সেটাও বন্ধ। কেন এই অবস্থা? জামুড়িয়ার সৌর শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ২০১৩ সালে ইনর্ভাটার গুলি পুড়ে যায়। তার পর থেকেই বন্ধ। অথচ ২০১২ সালে এখানে দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হত। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ মেগাওয়াট। বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো যে বেসরকারি সংস্থা, তারা কেন বন্ধ করে দিল? এ ক্ষেত্রেও সরকারি উদাসীনতা। কথা ছিল, এই বিদ্যুৎ সরকার কিনে নেবে। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পরেই নতুন সরকার হাত গুটিয়ে নিল। অথচ এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ছিল ইউনিট প্রতি মাত্র ২ টাকা ৮০ পয়সা। কাজ করতেন প্রায় ৪০০ কর্মী। আজ তাঁরাও কর্মহারা।

এ সব দেখে হতাশ শান্তিপদবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘বাতাসে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সারা বিশ্বে এখন অপ্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশে আমরা সবার আগে শুরু করেও পিছিয়ে গেলাম! রাজ্য সরকারের অবিলম্বে উদ্যোগী হওয়া দরকার।’’ ওয়েবরেডা-র একটি সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, কয়লার থেকে যে হেতু অপ্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ প্রাথমিক ভাবে বেশি, তাই সরকার কোনও চেষ্টা করছে না

ওয়েবরেডা-র ডিরেক্টর সুশান্ত দাস বলেন, ‘‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অপ্রচলিত শক্তির ব্যাপারে নতুন নীতি নেওয়া হবে। তার আগে কিছু করা সম্ভব নয়।’’ সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে প্রচারের ব্যাপারে আদিত্য’-র শো-রুমগুলির গুরুত্ব স্বীকার করেও সুশান্ত বলেন, ‘‘কী হচ্ছে, খতিয়ে দেখব।’’