দেবাশিস চক্রবর্তী
প্রমাণ? আরো প্রমাণ?
বগটুইয়ে তৃণমূল নেতা ভাদু শেখকে
খুন করেছে তৃণমূল। তারপর পেট্রোলের জার নিয়ে গ্রামে ঢুকেছে দুই তৃণমূল কর্মী, একজন ধরাও পড়েছে
সিবিআই-র হাতে। দশজনকে কুপিয়ে, জ্বালিয়ে মেরেছে তৃণমূল।
মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং জানিয়েছেন, দাপুটে তৃণমূল নেতা পুলিশকে
আসতে না বলায় পুলিশ আসেনি। আমরা সকলেই যা জানতাম, মুখ্যমন্ত্রী
তা অফিসিয়ালি জানিয়েছেন। তৃণমূল নেতারা আসতে না বললে রাজীব কুমাররা আসেন না,
তাঁদের নিম্নতম অধস্তনরাও নড়েন না।
মার্চ-এপ্রিলে প্রায় প্রতিদিন
কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় সবক’টিতেই দোষী তৃণমূল নেতা, নেতার পুত্র,
নেতার ভাগ্নে, দলের কর্মী। হাঁসখালির সঙ্গে কী
পার্থক্য হাথরসের? একই ভাবে দলবদ্ধ ধর্ষণ, দেহ নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, পরিবারকে এমন ভয় দেখানো
যাতে কন্যার মৃত্যুতেও মুখ খুলতে পারেন না পিতা-মাতা। হাথরসের মেয়েটি দিল্লির
হাসপাতালে এসেছিল, হাঁসখালি সেটিও পারেনি। ঘরেই মরে গেছে,
স্রেফ যন্ত্রণায় নীল হয়ে মরে গেছে।
সিবিআই অফিসারদের ঘিরে গ্রামের
মানুষ বলছেন, তৃণমূলের এই নেতা, তার পুত্র ও শাগরেদরা হেরোইনের
নেশা করত, ‘মেশিন’ নিয়ে ঘুরত, এমনকি
খুনও করেছে আগে।
ধার শোধ করতে না পারায় বোলপুরে
সুদখোর তৃণমূল নেতা পরিচিতের মেয়েকে ধর্ষণ করে ‘ক্ষতিপূরণ’ নিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী অফিসিয়ালি
জানিয়েছেন, এইসব ধর্ষণের ঘটনাকে তিনি তেমন গুরুতর কিছু বলে মনেই করেন না। অ্যাফেয়ার,
অন্তঃসত্ত্বার মত বাড়তি কালি লেপে দিয়েছেন নির্যাতিতাদের শরীরে।
অনায়াসে, কোনো অস্বস্তি ছাড়াই। ক্ষতবিক্ষত শরীর ঘিরে জন্তুদের
উল্লাসে হাততালি দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
প্রমাণ? আরো প্রমাণ?
হাঁসখালির ধর্ষিতার গ্রামে এমনই
আতঙ্ক যে ধর্মীয় রীতি মেনে মেয়ের শেষ কাজটুকুও করতে পারছিলেন না মা-বাবা। কোনো
পুরোহিত আসবেন না, ক্ষৌরকার আসবেন না, জিনিসপত্র কেনা যাবে না। শাসকের
চাপা ফতোয়া। বামপন্থীরা না থাকলে এইটুকুও হত না।
তৃণমূল যে লুম্পেনদের দলে পরিণত
হয়েছে, সঙ্গে বাংলার সমাজকে লুম্পেন-সমাজে পরিণত করছে, তার
আরো প্রমাণ?
হাইকোর্টে কোন বিচারপতি কোন
মামলা শুনবেন তা ঠিক করে দেবে তৃণমূল। এক বিচারপতির রায় দুর্নীতির ঢাকনা খুলছিল
বলে তাঁর এজলাশের সামনে হাঙ্গামা হলো। মামলায় বাধা দেওয়া হলো। বিচারপতিরাও এখন আর
হাইকোর্টের ভেতরে নিরাপদ নন।
লক্ষ্য করার আরো যে কিছু আছে!
দেশের যে দশ রাজ্যে রামনবমীর
নামে দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়েছে, সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গও রয়েছে।
পরিকল্পিত ভাবে মুসলিম-বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, এই বাংলাতেও।
ইসলামোফোবিয়ায় ক্রমে আক্রান্ত হচ্ছে সমাজের একটি অংশ। ঠিক তখনই বাবুল সুপ্রিয়কে
জোর করেই প্রার্থী হিসেবে চাপিয়ে দিয়েছেন মমতা। এমন এক কেন্দ্রে যেখানে
গুরুত্বপূর্ণ অংশ সংখ্যালঘু-নিবিড়। বাবুল সুপ্রিয়ের মত ইসলামোফোবিক একজনকে মমতা
ব্যানার্জি প্রার্থী করেছেন কোন্ বার্তা দিতে?
প্রমাণ? আরো প্রমাণ?
২৫ বছর, ঠিক ২৫ বছর। এই
২৫ বছরে একদিনও, একবারের জন্যও আরএসএস সম্পর্কে একটি কথাও
বলেননি মমতা। বিজেপি-র সঙ্গী হয়েছেন, তিনবার একসঙ্গে ভোটে
লড়েছেন, বিজেপি জোটের মন্ত্রীসভায় মন্ত্রী হয়েছেন—এইসব কথা
সকলেরই জানা। প্রতিদিনের রাজনীতিতে বিজেপি-র সঙ্গে ঠোক্কর লাগতে পারে। কিন্তু সঙ্ঘ?
সদামুখর মমতা ব্যানার্জি এই একটি প্রশ্নে রা কাড়েন না।
কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক আঁতাত
স্পষ্ট হচ্ছে। মমতা ব্যানার্জি চুপ। সংবিধানের কাঠামো ভেতর থেকে দুর্বল করা হচ্ছে, মমতা ব্যানার্জি
চুপ। প্রতিষ্ঠানগুলি আক্রান্ত, এরাজ্যেও সেই একই কায়দা।
জেএনইউ-তে যেমন, তেমন আলিয়াতেও।
লুম্পেন-রাজ দিয়ে
বিজেপি-বিরোধিতা? নাগপুর হাসছে, মোদী হাসছেন, বাংলা
এভাবে অধঃপতিত হতে থাকলে এদেশে ফ্যাসিবাদের রাস্তা পরিস্কার হয়ে যাবে।
আর পিছোনোর কোনো জায়গা নেই।
১৫এপ্রিল, ২০২২