20170526

গণতন্ত্র বিপন্ন, তাই চলো নবান্ন


#BanglaBiponna #ChaloNabanna

শেষ কবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখেছে পশ্চিমবাংলা? এরাজ্যের মানুষের অভিজ্ঞতা হলো, ২০১১সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করেছে শাসকদল দেশের সংবিধানে দেওয়া অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে বারবার বাধা পাচ্ছেন মানুষ। গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা সমস্ত দিক থেকেই আক্রান্ত। শুধু নির্বাচনে নিজের পছন্দমতো প্রার্থীকে নিজে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকেই নয়, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়ার অধিকার, শ্রমিক-কর্মচারীদের অর্জিত অধিকার, নারীর মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার, এমনকি মানবাধিকারও এই সরকারের আক্রমণের মুখে। বিরোধীদের কথা বলার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলগুলির, বিশেষত বামপন্থীদের পার্টি অফিস, ট্রেড ইউনিয়ন, গণসংগঠনের দপ্তর জ্বালিয়ে দেওয়া, লুট করা, দখল করা হচ্ছে। বামপন্থী কর্মীদের খুন, আক্রমণ, তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগানো, লুটপাট করা, বাড়ির মহিলাদের ওপর নৃশংস অত্যাচার, চাষ করতে-ফসল কাটতে বাধা, জরিমানা চাপানো, মিথ্যা মামলায় জেল, এলাকাছাড়া করা হচ্ছে। নির্বাচিত সমস্ত ধরণের সংস্থা, সাংবিধানিক সংস্থাও তৃণমূল সরকারের রোষের হাত থেকে রেহাই পায়নি। গণতন্ত্র এভাবেই আক্রান্ত, বিপন্ন তৃণমলী শাসনে।

গত ছয় বছরে বিধানসভা, লোকসভা, পঞ্চায়েত, পৌরসভাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্বাচনে ‌ঠ্যাঙারেবাহিনী দিয়ে বেপরোয়া সন্ত্রাস করে, পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের সরাসরি মদতে, মিডিয়াকে সাক্ষী করে নির্বাচনে মানুষের রায়কে পদদলিত করেছে এরাজ্যের শাসক দল কেন্দ্রের শাসক বি জে পি মুখে লোকদেখানো ছায়াযুদ্ধ করলেও শেষ পর্যায়ে গিয়ে কার্যত তৃণমূলের সমস্ত অনৈতিক কাজে সহায়তা করেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় বি জে পি-আর এস এস যে বেশ কয়েকটি আসনে তৃণমূলকে জয়ী করতে সাহায্য করেছে, তা তারা পরে স্বীকারও করেছেশুধু বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচন নয়, পঞ্চায়েত, ক্লাব, গ্রন্থাগার, স্কুল কিংবা সমবায়ের পরিচালন কমিটি নির্বাচনকেও প্রহসন করে কার্যত দখল করেছে তৃণমূল

মোদী সরকারের মদতেই সারদাসহ চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত শিকেয় তুলে রেখেছে সি বি আই, ই ডি-সহ তদন্তকারী সংস্থাগুলি। ভিডিও ফুটেজ ফরেনসিক পরীক্ষায় নির্জলা সত্য প্রমাণিত হলেও, এমনকি চার্জশিট জারি হয়ে যাওয়ার পরেও নারদকান্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে মোদী সরকারগাঁটছড়া কোথায় বাধা বুঝতে কারো অসুবিধা হয় না। নির্বাচনের সময় যে সমস্ত ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়বাহিনীর তৎপরতায় তৃণমূল কংগ্রেসের পরাজয় অনিবার্য হওয়ার সম্ভাবনা ছিল সে সমস্ত জায়গায় তাদের ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা হয়েছিলএকেবারে হিসেব কষে নির্দিষ্টসংখ্যক বুথে ভোট লুট এবং অবাধ কারচুপি করে তৃণমূল ভোটে জিতেছে

২০১৪ সালের লোকসভা এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যে সমস্ত আসনে জয়ের ব্যাপারে তৃণমূলের আশঙ্কা ছিল সেই সমস্ত জায়গায় সচিত্র ভোটার স্লিপ প্রশাসনের সাহায্যে নিজেদের কাছে রেখে ব্যাপক হারে ভোট লুট করে  ফলাফলকে নিজেদের অনুকূলে নিয়েছে২০১৬সালে নির্বাচনে ৭৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে ১০-১৯শতাংশ এবং ৬৫টি কেন্দ্রে ২০শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে সচিত্র ভোটার স্লিপ ব্যবহার করে ভোট দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেস একই কৌশলে নির্দিস্ট ১৬টি আসনে বাছাই করা বুথে ব্যাপক কারচুপি ঘটিয়ে তাদের জয় হাসিল করে নিয়েছিল। এছাড়া ব্যাপক কারচুপি, ছাপ্পা ভোট, রিগিং তো ছিলই। ২০১২ সালের ৩রা জুন রাজ্যের ৬টি পৌরসভায় ভোট হয়। বাস্তবে ভোট নয়, অনেক জায়গায় ভোটের নামে হয় প্রহসন। ২০১৩ সালের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে এবং ২০১৫-র কলকাতা কর্পোরেশন সহ রাজ্যের ৯১টি পৌরসভার নির্বাচনে, এই সময়ে বিধানসভা, লোকসভা আসনের সবকটি উপনির্বাচনে সরকারি মদতে শাসক তৃণমূলের বেনজির হিংসার সাক্ষী থেকেছে এরাজ্য।

২০১৩-র পঞ্চায়েতে নির্বাচনে পাঁচ দফায় ভোটের দিন দখল করা হয় ৬১৮২টি বুথ, বেপরোয়াভাবে ছাপ্পা ভোট দেওয়া হয় আরও ১০ হাজার বুথে। ভোট গণনার দিনও ব্যাপক কারচুপি করা হয়। এরপরেও যেখানে বামপন্থীরা পঞ্চা‌য়েত গঠন করতে পেরেছিল, সেখানেও শুরু হয় হামলা, এমনকি খুনও। ২০১৫ সালের গত ১৮ই এপ্রিল কলকাতা পৌরসভার নির্বাচনে প্রকাশ্যে ভোট লুট করে তৃণমূল বাহিনী। এই অপকর্মে নির্লজ্জের মতো তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলায় পুলিশবাহিনীর একটা অংশ। ওই বছরের ২৫শে এপ্রিল রাজ্যের ৯১টি পৌরসভার ভোটগ্রহণ হয়। এই ভোটপর্বকে প্রহসনে পরিণত করে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। বিভিন্ন জায়গায় সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের জড়ো করে শাসক তৃণমূল ভোট লুটের অভিযান চালায় সকাল থেকেই। ২০১৫ সালের ৩রা অক্টোবর ছিল পশ্চিমবঙ্গের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি কালো দিন। কিভাবে ভোট লুট করে গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করা যায়, বিধাননগর-রাজারহাট পৌরসভা, হাওড়া কর্পোরেশনের সংযুক্ত বালির ১৬টি ওয়ার্ডে এবং আসানসোল কর্পোরেশন এলাকায় ভোটে তার একটি নির্লজ্জ উদাহরণ তৈরি করে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকি, রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে ফলপ্রকাশের আগেই জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিলসর্বশেষ উদাহরণ, রবিবার অনুষ্ঠিত পৌরনির্বাচনে শাসকদলের বেপরোয়া ভোট লুটের ঘটনা।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে গণতন্ত্র ও নৈতিকতাকেও কার্যত বলি দিয়েছে তৃণমূল। বিশেষ করে, অন্য দলের জয়ী প্রার্থীদের ভয় ও প্রলোভন দেখিয়েও পঞ্চা‍‌য়েত, পৌরসভা দখল করে ‘দল ভাঙানো’র অভিযান চালাচ্ছে তৃণমূল। একই পন্থায় দল ভাঙিয়েছে কয়েকজন বিরোধী বিধায়ককেও।  

অন্যদিকে, কেন্দ্রের বি জে পি সরকার যেভাবে মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি করছে, তার পালটা সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি তৃণমূলও করছে। একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে এই দুই দল, যা গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের কাছে বিপজ্জনক।

তৃণমূলের হাতে লুন্ঠিত, বিপন্ন গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে এরাজ্যের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন গণতান্ত্রিক মানুষকেই। তাই ২২শে মে ‘নবান্ন চলো’র ডাক। 

No comments:

Post a Comment