ইরফান হাবিব
দেশদ্রোহীতা কি? কে দেশদ্রোহী আর
কে নয়? দেশের অর্থ কখনোই এটা নয় যে যাদের সরকার চলছে তাদের
মান্যতা দেওয়াই দেশপ্রেম। বলা হয়ে থাকে কোনো দেশের সীমাটাই দেশ। জন স্টুয়ার্ট মিল
বা অন্য কারো কথা দেখে নিন, কোথাও বলা নেই যে শুধু জমিটাই দেশ।
দেশ তৈরি হয় জনগণকে নিয়ে। নাগরিকদের নিয়েই দেশ। তাদের মধ্যে একটা চেতনাবোধ থাকা
প্রয়োজন যে আমরা একজোট, একটা দেশ। মানুষ যেখানে থাকে সেখানে
দেশ স্থাপন করে। আমাদের সীমানা সিয়াচেন পর্যন্ত না তার থেকে বেশি অথবা আকসাই চীন
আমাদের কী আমাদের নয়, এর সঙ্গে দেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
দেশের অর্থ তার নাগরিকদের কল্যাণে। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতেই বিচার করা প্রয়োজন যে
দেশপ্রেমী অথবা দেশদ্রোহী কে?
সিয়াচেনে কিছুদিন আগে আমাদের
কয়েকজন জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল। পরে তিনিও মারা
যান। এখন কেউ যদি বলেন ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় আমাদের জওয়ানদের পাঠাবেন না, তাহলে তিনি কি
দেশদ্রোহী? পাকিস্তান যদি বলে আমরা সেনা সরিয়ে নিচ্ছি,
আপনারাও সরিয়ে নিন। এখন যেটা বর্ডার তাকে মেনে নেওয়া হোক। একটা টিম
বানানো হোক, যারা দেখবে দু’দিক থেকে এর
উলঙ্ঘন হচ্ছে না। এটা মানতে কী বিরোধিতা হয়? সংবাদপত্রে খবর
হয়েছে এর আগে পাকিস্তানে সেনারা যখন এভাবে মারা গেছিলেন তখন বড় বড় সেনা জেনারেল,
মেজর জেনারেল সেখানে গিয়েছিলেন। তখন পাকিস্তান প্রস্তাব দিয়েছিল যে
দু’দিক থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হোক। এবারও এই ঘটনার পর
পাকিস্তান ফের প্রস্তাব দিয়েছে দু’দিক থেকে সেনা সরানো হোক।
আমাদের বড় বড় সেনা আধিকারিকরা তা খারিজ করে দিয়েছেন। তারা তো এখানে এ. সি. ঘরে বসে
আছেন। এরা জাতীয়তাবাদী? যারা এখানে বসে সিয়াচেনে সেনাদের
পাঠাচ্ছেন তাদের মৃত্যু হতে পারে জেনেও, তারা দেশদ্রোহী নয়, কিন্তু
যারা বলছেন ওখানে জওয়ানদের পাঠিও না। গরিব লোক, এভাবে মেরো না।
তারা দেশদ্রোহী? তাহলে কাকে বলবো জাতীয়বাদী? জে এন ইউ-র ঘটনাতেও এই দেশদ্রোহীতার অভিযোগ লাগানো হয়েছে। সিয়াচেনে আমাদের
জওয়ান শহীদ হচ্ছে আর এরা এখানে দেশ বিরোধিতা করছে- এমনই বক্তব্য। জওয়ানদের ওখানে
কে পাঠাচ্ছে? জে এন ইউ-র ছাত্ররা?
আমাদের সংবিধানে বাক্স্বাধীনতা
এবং মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে। সংবিধানেও এই অধিকার দেওয়া হয়েছে যে কেউ চাইলে
সরকারের সমালোচনা করতে পারেন। আজকাল যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার কথা বলা হচ্ছে কোথাও তা
লেখা নেই। সরকারের সাথে কেউ সহমত হোক বা না হোক তার বাক্স্বাধীনতার পূর্ণ অধিকার
আছে।
জে এন ইউ-তে অনেক ধরনের স্লোগান
দেওয়া হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। তার মধ্যে কিছু ভুল স্লোগানও থাকতে পারে। যা অন্য
কারো ভাবনায় আঘাত দিয়ে থাকতে পারে। সত্যি-মিথ্যে বলতে পারবো না, কিন্তু কিছু লোক
দাবি করছেন ওখানে স্লোগান দেওয়া হয়েছে ভারতের বরবাদির। যারা এই ধরনের স্লোগান দেন
তাদের কাছে আমার একটাই বক্তব্য বি জে পি’র হাত শক্ত করবেন
না। ভারত বিরাট বড় বিষয়। আপনারা বললেই ভারত বরবাদ হবে না। কিন্তু এমন কাজ করবেন
না যাতে বি জে পি মজবুত হয়। আপনারা বরবাদ করুন না করুন, কিন্তু
বি জে পি নিশ্চয়ই বরবাদ করবে। বি জে পি-কে এই কাজ করার সুযোগ দেবেন না। কিন্তু এর
সঙ্গেই আমি বলবো যতটা সম্ভব ‘আজাদি’ দেওয়া
যায়, তা দেওয়া উচিত। যতক্ষণ বিতর্ক হবে না, কথা হবে না, ভাবের আদান প্রদান হবে না, ভারত এগোবে না। এই জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
সব বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিবেশ তৈরি
করতে হবে যাতে সকলে নিজের মত জানাতে পারবে। হিন্দুস্তান সবার। সব অংশের মানুষের
বাক্স্বাধীনতা দিতে হবে। সে মণিপুর হোক, নাগাল্যান্ড হোক অথবা কাশ্মীর। শুধু
কাশ্মীর ভারতের অংশ না, কাশ্মীরীরাও ভারতীয়। কিন্তু বি জে
পি-র নীতি আলাদা। নাগপুর (আর এস এস সদর দপ্তর) মনে করে নাগাল্যান্ড, মণিপুর তাদের গোলাম। আমাদের তা নীতি নয়। আমরা মনে করি সবাই তাদের কথা
বলবেন। এটা আমাদের কর্তব্য আমরা যদি সত্যিই কাশ্মীরকে ভারতের অংশ মনে করি, তাহলে কাশ্মীরীদের সঙ্গে এমন ব্যবহার কেন? তাদের
ভুয়ো সংঘর্ষে মারা হবে না। তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হবে না। ওদের যাতে এটা মনে
না হয় যে, যারা হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিল তাদের ছেড়ে দেওয়া হলো
কিন্তু আফজল গুরুকে শূলে চড়ানো হলো। এই ধারণা যেন না হয় যে ওকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে
কারণ সে মুসলমান ছিল, কাশ্মীরী ছিল। কারো যদি মনে হয় যে এটা
ন্যায়বিচার হলো না। আমি ন্যায় পেলাম না। এই কথা বলার যদি অধিকার না থাকে তাহলে
গণতন্ত্রই থাকবে না ভারতে। তাই যদি আমাদের দেশের কাজ করতে হয়, তাহলে প্রত্যেককে বলতে দিতে হবে। তা না হলে দেশের উন্নয়ন হবে না। যারা
মানুষকে কথা বলতে বাধা দিচ্ছে তারাই দেশদ্রোহী। যারা গুন্ডামি করছে তারাই
দেশদ্রোহী। এরা কারা যারা অন্যকে দেশদ্রোহী বলছে? গুণ্ডারা
সব সময় নিজেদের সব থেকে বড় দেশপ্রেমিক বলে, জাতীয়তাবাদী বলে
দাবি করে। আপনারা টিভিতে দেখেছেন, কাগজেও এসেছে, ‘গুন্ডা ন্যাশনালিজম’ শব্দটা। আদালত চত্বরে আইনজীবীরা
বলছেন মেরে ফেলবো। গুলি করবো। তখন এই ‘গুন্ডা ন্যাশনালিজম’
শব্দটাই যথার্থ মনে হয়।
আর এস এস, বি জে পি
নিজেদের সব থেকে বড় দেশভক্ত বলে। ১৯২৫ সালে আর এস এসের প্রতিষ্ঠা। অসহযোগ
আন্দোলনের পরে কিছু লোক মুসলিম লিগে, কিছু লোক হিন্দু
মহাসভায় চলে যায়। আর কিছু লোক আর এস এসে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। শুরু থেকেই এদের
প্রতারণা ছিল। গোলওয়ালকার বলেছেন, আমরা চাইতাম হিন্দু
স্বয়ংসেবক সংঘ বানাতে। কিন্তু কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছিলেন যে নামের মধ্যে ‘রাষ্ট্রীয়’ শব্দটা রাখো। এটা শুধু হিন্দুদের বিষয় তা
গোপন কর। সম্ভবত ব্রিটিশকে কোনো কারণে খুশি করার জন্য সেই সময় ‘রাষ্ট্রীয়’ নাম রাখে। অর্থাৎ শুরু থেকেই ধোঁকাদারি।
শুরু থেকেই তাদের শত্রু কে ছিল? ব্রিটিশরা নয়।
যারা ভারতে শাসন করছিল তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। মুসলমানদের সঙ্গে শত্রুতা
ছিল। তারাও তো হিন্দুদের মত ব্রিটিশ শাসনে নিস্পেষিত ছিল। মুসলিম লিগের মত যারা
হিন্দুদের বিরুদ্ধে ছিল। আর অপরদিকে আর এস এস, হিন্দু মহাসভা
মুসলিমদের বিরুদ্ধে। পারস্পরিক বিরোধের জেরে আসলে ব্রিটিশদের হয়েই কাজ করছিল এরা।
তাদের সুবিধে করছিল।
১৯৩৮ সালে আর এস এসের
সরসংঘচালক গোলওয়ালকার ‘‘উই অর আওয়ার নেশানহুড ডিফাইন্ড’ বই লেখেন। সেখানেই
স্পষ্ট ছিল হিন্দুরাষ্ট্রের লক্ষ্য। এরা যখন ১৯২৫ সালে আর এস এস তৈরি করে তখনই এটা
স্থির করেছিল। দ্বিজাতিতত্ত্বের নীতি শুধু মুসলিম লিগের নয়।
হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্তানের স্লোগান তো আগেই দেওয়া হয়েছিল। ১৯৩৭ সালে হিন্দু
মহাসভার সভাপতি হয়েও সাভারকার একই কথা বলেছিলেন। হিন্দু আর মুসলিম দুটি আলাদা
রাষ্ট্র হবে। এরা জাতীয়তাবাদী? রাষ্ট্র, জাতির ভাগ চায় যারা, তারা রাষ্ট্রভক্ত? এরা বলে হিন্দুস্তানের বরবাদী শুরু হয়েছে যবে থেকে মুসলমানরা এখানে এসেছে।
সব সময় বলে আমরা এক হাজার বছর পরাধীন ছিলাম। কিন্তু দু’শো
বছরের ব্রিটিশের গোলামির বিরুদ্ধে একটা কথাও বলেনি এরা। ১৯২৫ থেকে ৪৭ পর্যন্ত কোনো
প্রতিবাদ করেনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে। এরা হিন্দুরাষ্ট্রের কথা বলে, মোদী যা বানাতে চায়। এই প্রসঙ্গে গোলওয়ালকার কী বলেছে? সেই হিন্দুরাষ্ট্রে মুসলমানদের কী হবে? হয় হিন্দু
হয়ে যেতে হবে নতুবা হিন্দুরাষ্ট্রের গোলাম হয়ে থাকতে হবে। কোনো অধিকার থাকবে না।
কোনো ন্যায়বিচারের অধিকার থাকবে না এমনকি তাদের নাগরিকত্বও থাকবে না। ভারতের
জনগণের একটা বড় অংশকে বলে দেওয়া হলো তাদের কোনো অধিকার থাকবে না। এরা দেশদ্রোহী নয়?
সাভারকার তো ব্রিটিশকে মুচলেকা
দিয়ে এসেছিলেন। গোটা জীবনে আর ব্রিটিশের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। ১৯৪৩-এ ব্রিটিশ যখন
এদের প্যারেড, অস্ত্র চালনার আপত্তি জানালো, গোলওয়ালকার লিখে দিলেন
প্যারেড করবো না। কোনো ইউনিফর্ম পরবো না। ব্রিটিশ গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছিল,
এদের নিয়ে ব্রিটিশদের কোনো বিপদ নেই, মুসলিমদের
থাকলে থাকতে পারে।
এরপর ১৯৪৭-এ স্বাধীনতা এলো।
গান্ধীজী হত্যার পর সর্দার প্যাটেল যিনি এদের উপর নিষেধাজ্ঞা তোলার সওয়াল
করেছিলেন, তিনি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নেহরুকে লিখলেন- গান্ধীজী হত্যায় এদের হাত আছে
কিনা তার প্রমাণ মেলেনি, কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এরা
নিরীহ মুসলমানদের অনেক মেরেছে। রক্তে রাঙা এদের হাত। ব্রিটিশদের নিয়ে এই আর এস
এসের কোনো মাথা ব্যথা ছিল না, কিন্তু নিরীহ নারী-শিশুদের
মারতে এরা দক্ষ ছিল। গান্ধীজীর মৃত্যুতে এরা মিষ্টি বিলি করেছিল। এরা দেশদ্রোহী নয়
তো কে দেশদ্রোহী? দেশভাগের পর মুসলিম ন্যাশনাল গার্ড এবং আর
এস এস-ই দু’পক্ষে গণহত্যা করিয়েছে। কে হিসেব রাখবে কে আগে কে
পরে করেছে?
নিষেধাজ্ঞা তোলা হবে কি না সেই
আলোচনার সময় ১৯৪৮ সালে সর্দার প্যাটেল যখন ভারতের সংবিধান এবং জাতীয় পতাকাকে
স্বীকার করার কথা বলেছিলেন,
তখন অস্বীকার করেছিল আর এস এস। এখন নির্দেশ দিচ্ছেন সব জায়গায়
ঝান্ডা লাগাতে হবে। ৪৮-এ মানেননি কেন? এখন জাতীয়তাবাদী আর
দেশদ্রোহী বিতর্ক তুলে জাতীয় পতাকা মনে পড়েছে?
এরপর কেন্দ্রীয় সরকার বলেছিল, তাহলে আর এস
এসের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠবে না। জেলেই থাকতে হবে নেতাদের। তখন বাধ্য হয়ে
মুচলেকা দিয়েছিল বলেছিল, সংবিধান মানবে এবং জাতীয় পতাকাকে
স্বীকার করবে। জেলে থাকতে হবে শুনেই মুচলেকা দিয়েছিল। এত বাহাদুর ছিল এরা! মুচলেকা
দিয়ে বলেছিল, জাতীয় পতাকাকেও মানি, সংবিধানও
মানি। আসলে সবই ধোঁকাবাজি ছিল। মানতো না কোনোটাই। চিরকাল ওরা গেরুয়া পতাকাকেই
স্যালুট করেছে। জাতীয় পতাকাকে নয়। স্বাধীন দেশের প্রথম সরকার এদের দেশবিরোধী বলে
ঘোষণা করেছিল। তারা এখন অন্যদের দেশবিরোধী বলছে।
দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামে খুব
সম্মান হচ্ছে এখন। রাস্তাও হচ্ছে। ১৯৬১ সালে উনি বলেছিলেন গান্ধীজী রাষ্ট্রপিতা
নন। কল্যাণ সিং যখন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনিও ঐ একই কথা বলেছিলেন।
ওদের দাবি বেদের সময় থেকে আমাদের রাষ্ট্র। গান্ধীজী কীভাবে রাষ্ট্রপিতা হবেন? বেদে তো
রাষ্ট্রের কোনো বিষয় নেই। ভারত নামই নেই বেদের কোথাও। কী করে রাষ্ট্র বেদের সময়
থেকে হয়ে গেল?
এই পুরো সংগ্রামে
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বড় অবদান আছে। জে এন ইউ-র আগে হায়দরাবাদে হয়েছে। এটা পুরো
ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্র। ঠিক যেভাবে নাৎসিরা জার্মানিতে করেছিল। জনগণের স্বাধীনতা হরণ
করছে এরা। যেখানে এদের সরকার আছে সেখানেই চেষ্টা চলছে, সর্বত্র পারছে
না। চেষ্টা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে কোনো বিতর্ক না হয়। গুন্ডাগর্দি করছে। এ বি
ভি পি-কে ব্যবহার করছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি হায়দরাবাদে রোহিত ভেমুলার
ক্ষেত্রে যা করেছেন। হায়দরাবাদেও এই ঘটনার পিছনে এ বি ভি পি ছিল। জে এন ইউতেও এ বি
ভি পি-কে দিয়ে এত নোংরাভাবে এই কাজ করালো যে প্রতিবাদে তাদের তিন নেতাই ইস্তফা
দিয়েছে। এসবই নাৎসি জার্মানি থেকে এরা শিখেছে। গোলওয়ালকার বলেছিল, যেভাবে নাৎসিরা ইহুদিদের হত্যা করেছিল, এখানেও তাই
হওয়া উচিত অর্থাৎ মুসলিমদের খুন করো।
ভারতের সংবিধানে বলা হয়েছে সরকার
মিশ্র সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে। এন ডি এ সরকার ছাড়া এদের আগে কংগ্রেস এবং অন্য যে
সরকার ছিল তাদের আর যে ত্রুটিই থাক, সকলেই মিশ্র সংস্কৃতিকে রক্ষা করেছে। আর
এস এস মিশ্র সংস্কৃতির সব সময় বিরোধিতা করেছে। আদবানিজী আজকাল খুব নরমপন্থী
হয়েছেন। তিনি এক সময়ে বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, মিশ্র সংস্কৃতির
মত খারাপ জিনিস আর কিছু নেই। হিন্দু আধিপত্যবাদী সংস্কৃতি হওয়া চাই। মিশ্র সংস্কৃতিতে
তো মুসলিম, খ্রিস্টান, পারসি, সবাই থাকবে। এই মিশ্র সংস্কৃতিকে ধংস করতে চায় আর এস এস। এটাই সবথেকে
ভয়ংকর।
তাই যে বিবাদ এসেছে তা খুব বড়
বিপদ। এদের আগের সরকার স্কুল পাঠ্যবই বদলে দিয়েছিল। এবার ক্ষমতা বেশি, বিশ্ববিদ্যালয়কে
টার্গেট করেছে। সারা দেশের জনতার এখন একজোট হওয়া প্রয়োজন এদের বিরুদ্ধে। মাত্র ৩১
শতাংশ ভোট পেয়ে এরা সরকার চালাচ্ছে। ৬৯ শতাংশ এদের বিরুদ্ধে। এখন যেখানে নির্বাচন
হচ্ছে, সেখানেই এদের ফল খারাপ হচ্ছে। ফলে এদের ফ্যাসিস্ট
গুন্ডাগিরি আরো বাড়বে। যে যে শক্তি এদের মোকাবিলা করতে পারবে তাদের এক জায়গায় আসতে
হবে। যতক্ষণ না তা হচ্ছে ফ্যাসিবাদকে রোখা যাবে না। তাই বামপন্থী এবং অবামপন্থী
এমন গণতান্ত্রিক শক্তিকে এক মঞ্চে আসতে হবে। যদি এক মঞ্চে আসতে না-ও পারেন,
তাহলে যেভাবে সম্ভব পারস্পরিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে। যা জে এন
ইউয়ের ঘটনায় হয়েছে। কংগ্রেস এবং সব বামপন্থীরা এক জায়গায় এসেছে। তাই যত বদমাশি এরা
করছে জে এন ইউ নিয়ে, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের টেনে এনেছে,
ভুয়ো ভিডিও বানিয়েছে- তাতে সফল হয়নি। কারণ বিরোধীরা একটা বড় ফ্রন্ট
বানাতে পেরেছে। আমাদের ছোট মতপার্থক্যকে পাশে সরিয়ে রেখে এখন একজোট হতে হবে,
কারণ এতেই দেশকে রক্ষা করা যাবে।
No comments:
Post a Comment