20160330

সংখ্যালঘুদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তৃণমূল সরকার

আগে অনেক মায়াকান্না কাঁদলেও ক্ষমতায় এসে সংখ্যালঘু মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের জন্য প্রকৃত কোনো কাজই তারা করেনি। সংখ্যালঘুদের  প্রতারণা করেছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ২০১১ সালের ১১ই জুন বলেছিলেন, তৃণমূল সরকার রাজ্যে দশ হাজার মাদ্রাসা খুলবে। কাজে কিছুই করেননি
§  সরকারি সূত্রের খবর: দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০১২-১৩-তে শুরু) সংখ্যালঘু উন্নয়নে মাল্টি সেক্টরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ (এমএসডিপি) খাতে পশ্চিমবঙ্গের কাজের হাল শোচনীয়।  ২০১৪-১৫ আর্থিক বর্ষের আর্থিক সমীক্ষা অনুযায়ী, মাল্টি সেক্টরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম স্কিমে কেন্দ্রের দেয় ১১১৭.৬ কোটি টাকা এবং রাজ্যের দেয় ২২৬ কোটি টাকা, মোট ১১১৩৪৬ কোটি টাকার মধ্যে রাজ্য সরকার খরচা করেছে মাত্র ৮৫৪ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। বামফ্রন্টের আমলে  এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ছিল দেশে প্রথম। তৃণমূলের আমলে নেমে গেছে চার নম্বরে।মাল্টি সেক্টরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম স্কিমের অর্থে সংখ্যালঘুদের জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনার বাড়ি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, শৌচালয়, পানীয় জল প্রকল্প, আইটিআই, পলিটেকনিক, হস্টেল, রাস্তা ইত্যাদি হওয়ার কথা।
§  পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম  এখন নিগমে প্রয়োজনীয় কাজ হচ্ছে না। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নিগম একটানা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে দেশের মধ্যে সেরা কাজের জন্য।
§  সংখ্যালঘুদের জন্য বাড়ি তৈরির প্রকল্প রূপায়নে তৃণমূল সরকার চরম ব্যর্থ। সংখ্যালঘুদের জন্য বহু ঘোষিত হাসপাতালের প্রতিশ্রুতি যে ভূয়ো ছিল তা এখন প্রমাণিত।
§  ২০১২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি হাওড়ার সাঁকরাইলে জরি হাবের শিলান্যাস হয়েছিল। কিছুই হয়নি। ঐদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী হাওড়ারই ডোমজুড়ে স্বর্ণশিল্পীদের জন্যও একটি হাব স্থাপনের ঘোষণা করেন। কোথায় কী?
§  ২০১২-র ১০ই অক্টোবরে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল, সংখ্যালঘুদের জন্য  ৫৬টি মার্কেটিং হাব তৈরি  হবে। সেগুলিতে নাকি প্রায় ছাপান্ন হাজার সংখ্যালঘু ছাত্রদের কাজের বন্দোবস্ত হবে। কোথায় মার্কটিং হাব?
§  কমিয়ে দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘুদের শিক্ষা-ঋণ দেওয়ার পরিমাণওরাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম এই ঋণ দেয়২০১১-’১২-তে ২৮৪৩ জন শিক্ষাঋণ পেয়েছিলেন ৮কোটি ৫৯ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা। সরকারের রিপোর্ট জানাচ্ছে ২০১২-’১৩-তে সেই ঋণ পেয়েছেন ১৬২৪ জন। টাকার পরিমাণ কমে হয়েছে প্রায় অর্দ্ধেক — ৪ কোটি ৭২ লক্ষ ৪৭ হাজার। ২০০৯-’১০ এবং ২০১০-’১১-তে এর থেকে বেশি সহায়তা পেয়েছিলেন সংখ্যালঘু ছাত্ররা। ২০০৯-’১০-এ প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা এবং ৭ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা শিক্ষা ঋণ পেয়েছিলেন ছাত্ররা।
§  ২০০৫-০৬ থেকে চালু হওয়া ‘স্টেট গভর্নমেন্ট স্টাইপেন্ড’ প্রকল্পটি  তৃণমূল সরকার ২০১১-১২-তে বেমালুম তুলে দিয়েছেউচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করা সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের জন্য ঐ প্রকল্পে ভাতা দেওয়া হতো।
§  বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে উদ্যোগ নেওয়া পার্ক সার্কাসের গোরাচাঁদ রোডে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের  ক্যাম্পাস শুধুমাত্র ছাত্রীদের জন্য ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজেরও কোনো অগ্রগতি ঘটেনি।
§  গরিব সংখ্যালঘু পরিবারের মহিলাদের স্বনির্ভরতার প্রকল্প (এম ডব্লিউ ই পি) রাজ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে গত সাড়ে চার বছরে২০০৯-১০ সালে এই প্রকল্পে ৭৭৯৫টি ব্যবসার ক্ষেত্রে সহায়তা করা হয়েছিলমোট অর্থ সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৫১লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১০-১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের নির্দেশিকা জারি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছোন যায়নি। তবু সাহায্য পাওয়া উদ্যোগের সংখ্যা ছিল ১২৩৬। তৃণমূল সরকারের আমলে ২০১১-১২-তে মাত্র ৯৫জন মহিলাকে সহায়তা দেওয়া হয়। ২০১২-১৩ আর্থিক বর্ষে মাত্র ৩২৫জন মহিলাকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে সংখ্যা আরও কমেছে।
§  চাকরির নিরাপত্তার দাবিতে এখনন মাদ্রাসার শিক্ষকরা  কলকাতায় ফুটপাতে অনশন করলেও রাজ্য সরকার ফিরে তাকাচ্ছে না। তৃণমূলের ২০১১-র নির্বাচনী ইস্তেহারে অবশ্য মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য অনেক প্রতিশ্রুতির কথা লেখা আছে।  মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য ‘উন্নত’ ও ‘বিশেষ’ বেতন কাঠামো করবে বলেছিল। 

সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণও সংকুচিত করেছে তৃণমূল সরকার
§  এমনিতে চাকরি নেই। শিল্প-বাণিজ্যে পশ্চিমবঙ্গ ক্রমাগত পিছোচ্ছে সরকারী চাকরিতে স্থায়ী পদে নিয়োগ গত সাড়ে চার বছর দরে বন্ধ। তারই মধ্যে ও বি সি হিসেবে সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণের যে সুযোগ বামফ্রন্ট সরকার দিয়েছিল তা ক্রমাগত সংকুচিত করে চলেছে তৃণমূল সরকার।
§  সংখ্যালঘুদের ‘ও বি সি’ হিসাবে সংরক্ষণের ঐতিহাসিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল বামফ্রন্ট সরকারই তখন তৃণমূল বাধা দিয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেস বহু বছর কেন্দ্রে সরকারী ক্ষমতা ভোগ করলেও, মমতা ব্যানার্জি  কেন্দ্রে বহু বছর মন্ত্রী থাকলেও সংখ্যালঘুদের জন্য সরকারী চাকরিতে পদ সংরক্ষণের কথা ভুলেও কখনও  মুখে আনেন নি।
§  গরিব সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণের সেই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাজ্য সরকারি চাকরিতে ও বি সি-দের জন্য সংরক্ষণ ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয় ১৭ শতাংশ। ও বি সি তালিকাকে দুটি ভাগে ভাগ করে ৭% পদ সংরক্ষিত করা হয় ‘অনগ্রসর’ অংশের জন্য এবং ১৭% পদ সংরক্ষিত করা হয় ‘অধিক অনগ্রসর’-দের জন্য। ‘অধিক অনগ্রসর’-দের তালিকায় ৫৬টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৯টি  মুসলিম জনগোষ্ঠীকে এবং ‘অনগ্রসর’-দের তালিকায় ৫২টি জনগোষ্ঠীর  মধ্যে ৬টি  মুসলিম জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভূক্ত করেছিল বামফ্রন্ট সরকার।
§  গত সাড়ে চার বছরে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলির সিংহভাগকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে অনগ্রসর-দের তালিকায়; যেখানে সংরক্ষন তুলনায় কম। ২০১১ সালের এপ্রিল-মে পর্যন্ত অনগ্রসরতালিকায় গোষ্ঠীর সংখ্যা কম ছিল অধিক অনগ্রসরতালিকাভূক্তদের থেকে। ফলে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সুযোগের আওতায় সিংহভাগ ছিলেন সংখ্যালঘু গোষ্টীগুলি। এখন অধিক অনগ্রসর’-র থেকে অনগ্রসর’-এর তালিকা বেশি লম্বা। 

No comments:

Post a Comment