শ্যামল চক্রবর্তী
রাজ্যের অসংখ্য গ্রাম-শহর ছুঁয়ে
শেষ হয়েছে বি পি এম ও-র পদযাত্রা। জনজীবনের ১৭ দফা দাবি নিয়ে এই পদযাত্রাকে
কেমনভাবে গ্রহণ করলেন এরাজ্যের জনগণ? সেই অভিজ্ঞতাই তুলে ধরেছেন লেখক।
অসংখ্য গ্রাম শহর নগর অতিক্রম
করে ৩রা নভেম্বর পদযাত্রা প্রবেশ করল কলকাতা মহানগরীতে। বি পি এম ও-র ঘোষিত
কর্মসূচি ছিল মানুষের কাছে যাও — যে মানুষ টানে দাঁড় ধরে থাকে হাল — মাঠে মাঠে বীজ বোনে, পাকা ধান কাটে। যে মানুষ শুধু
দুটি অন্নখুঁটি কোনও মতে কষ্টক্লিষ্ট প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের কাছে যেতে হবে।
এসেছেন আদিবাসী যুবক ওরা শতাব্দীর পর শতাব্দীজুড়ে বংশ বংশ ধরে অরণ্যচারী, তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে অরণ্যের অধিকার — ছিনিয়ে
নেওয়া হচ্ছে জমির পাট্টা। ওরা ছড়িয়ে আছে বীরভূমে, বাঁকুড়ায়,
পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে — এক কথায় জঙ্গলমহলে। ছদ্মবেশী তৃণমূল আর মাওবাদীদের অশুভ আঁতাতে জঙ্গলমহল
ছিল রক্তাক্ত। ওরা মৃত্যুর বিভীষিকা ছড়িয়ে মানুষকে দাসত্বের পর্যায়ে নামিয়ে আনার
চেষ্টা করেছিল। এখন মাওবাদীদের মুখোশের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। খোলাখুলি আত্মপ্রকাশ
করেছে তৃণমূলী জল্লাদবাহিনী। সেই জঙ্গলমহলের অত্যাচারিত মানুষেরা এসেছেন। এসেছেন
সারা শরীরে রক্তের দাগ নিয়ে। তাদের সারা প্রান্তরে এখন বিষাদের ছায়া। অসংখ্য
মানুষের কান্নার ছায়ায় বাতাস ম্রিয়মান। লাল পতাকা আজ তাদের করতলে এক বিশ্বাসী
হাতিয়ার। তাদের মহিমান্বিত কণ্ঠস্বরে জীবন জয়ের গান।
২০০৬ থেকে ২০১০ মাত্র এই চার
বছরে একমাত্র ঝাড়গ্রাম মহকুমাতে খুন হয়ে গিয়েছিল ২৫৫জন সি পি আই (এম্) ও বামপন্থী
কর্মীরা।
অভিজিৎ মাহাতো — অফুরন্ত
প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা তাজা টগবগে এক তরুণ এস এফ আই কর্মী, বুলেট
ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল ওর শরীর। ফুলবনী মাণ্ডি — কালো পাথরে
খোদাই করা এক ছিপছিপে তরুণী, স্পর্ধায় মাথা তুলবার ঝুঁকি
নিয়েছিল দিনবদলের স্বপ্ন দুচোখে মেখে। এস এফ আই-র পতাকা হাতে উচ্চকিত স্লোগানে
আদিবাসী মূলবাসীদের চেতনার কন্দরে পৌঁছে দিত আশার আলো, সংগ্রামের
মহামন্ত্রধ্বনি। অন্ধকার গহ্বর থেকে হিংস্র পশুরা বেরিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
তারপর ২৬ বছর বয়সী অর্ধমৃত ফুলবনী মাণ্ডিকে জীবন্ত কবর দিয়েছিল।
তাতেও তাদের রক্ত তৃষ্ণা মেটেনি।
শালকু সোরেন এক আদিবাসী কৃষক, রুক্ষ মাটির বুকে সোনার ফসল ফলাতো, দুন্দুভি বাজিয়ে হায়দরী হাঁক দিয়ে সে জানাতো ইন কিলাবী আহ্বান। শালকু
সোরেনের লাশ ফেলে দিল ওরা পাশবিক উল্লাসে। গোটা এলাকা ঘিরে রেখে দিল, আত্মীয়স্বজনকেও স্পর্শ করতে দিল না। চারদিন ধরে লাশ পচলো ফটোগ্রাফারদের
সামনে। শোকার্ত শালকু সোরেনের স্ত্রীকে চোখের জল মুছিয়ে দেওয়ার অবকাশও দিল না ওরা।
সদ্য বিধবা শালকুর স্ত্রীকে বন্দুকের ডগায় তৃণমূলের মিছিলে জোর করে নিয়ে যাওয়া
হলো। তখন ছত্রধর মাহাতোর ডেরায় তৃণমূল নেত্রীর নিত্য আসা যাওয়া।
এ রাজ্যে আছে সাতাত্তর হাজার
বুথ। আমরা ‘বুথ’ এই শব্দটি ব্যবহার করছি এই কারণে যে গ্রাম বা
শহরে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম এলাকা চিহ্নিত করা সম্ভব ঐ ‘বুথ’
শব্দটির মধ্য দিয়ে। এই মুহূর্তে সাতাত্তর হাজার বুথই হবে আমাদের
পাখির চোখ। গ্রিক পুরাণের একটি চরিত্র অ্যান্টিয়ুস। তিনি ছিলেন অপরাজেয় বীর।
পৃথিবী ছিলেন তার মা। তাই যতক্ষণ মাটিতে পা থাকত তাকে পরাজিত করার ক্ষমতা কারও
থাকত না। হারকিউলিস তাকে মাটি থেকে তুলে নিয়েছিলেন। সেই মুহূর্তে অ্যান্টিয়ুস
শক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাকে হত্যা করতে হারকিউলিসের কোনও সমস্যা হয়নি। আমাদেরও
শক্তির উৎস ঐ মাটি। যে মাটির সন্তান মানুষ। কোনও যাত্রাপালার মাটি মানুষ নয়।
মানুষের সঙ্গে আছে জীবন্ত, চলমান সম্পর্ক। মাও-সে-তুঙ একটু
অন্যভাবেই বলেছেন জলের মধ্যে মাছের মতো বিচরণ করতে হবে। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক
বিচ্ছিন্ন হলেই আমরা শক্তিহীন হয়ে পড়বো।
মানুষের জন্যই আমাদের বেঁচে
থাকা। মানুষের জন্যই আমাদের সংগ্রাম। আর সেই সংগ্রামের অন্তস্তলে মানুষের আসনে
আসীন শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর,
আদিবাসী গরিব সংখ্যালঘু মানুষ। প্রধানত এই মানুষের জন্যই অন্ধকার
দারিদ্রের হিমকুঞ্চিত যবনিকা ছিঁড়ে ভোরের আলোর মতো একফালি উজ্জ্বল রৌদ্র ছিঁড়ে
আনার জন্য আমাদের সংগ্রাম।
গ্রামে কৃষক, খেতমজুর,
আর অন্য রাজ্যে দৈনিক মানুষের কাজে যোগ দিতে যাওয়া পরিযায়ী
শ্রমিকদের পরিবার। তাদের কাছেই আমরা গিয়েছি। লাল পতাকা হাতে নিয়ে মানুষগুলো ছুটে
এসেছেন জল নিয়ে, বুনোফুলের পাপড়ি ছড়িয়েছেন আমাদের চলার পথে।
স্বজন হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে তারা এসে দাঁড়িয়েছিলেন আমাদের পাশে। লাল পতাকা তাদের
চেতনার কন্দরে নিয়ে এসেছে বিশ্বাসের বারুদ।
আমরা বলেছি চল্লিশ হাজার গ্রাম
আছে আমাদের রাজ্যে। ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলিতে এখন নিঃসীম
শূন্যতা, লাল পতাকার মিছিল বুকের মধ্যে এক প্রাণবন্ত যৌবন জন্ম দিয়েছে।
গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেছে
পদযাত্রীরা। দুহাত উঁচু করে ছুটে এসেছে আধা উলঙ্গ শিশু, নিরন্ন মা,
বুভুক্ষু বাবা। তার মাঠভরা সোনালি ফসল, তবুও
তার মুঠো ভরে যায় ঋণে। তাদের প্রত্যয় — আমাদের মিলিত
সংগ্রামে আমরাই ফলাতে পারি স্বস্তির সোনালি ফসল। লাঙলের ফালে ক্লান্ত বিশ্রাম মেখে
তারা এসেছেন। তাদের রক্ত মাংস হাড়করোটির কষ্ট নিয়ে, রক্ত
ধোয়া হৃদয় নিয়ে তারা কলকাতায় এসেছেন। শোষকেরা চায় আমাদের কৃষকরা শূন্য পাকস্থলী
আর ক্ষয়াকাশ নিয়ে মাঠে ফিরে যাক।
বি পি এম ও-র দাবি ছিল কৃষকের
ফসলের লাভজনক দাম দিতে হবে। এটাই ন্যূনতম ক্রয় মূল্য হওয়াই উচিত। কিন্তু তা হয়নি।
কে শুনবে কৃষকের যন্ত্রণাকাতর কণ্ঠস্বর। মহাজনের ঋণ শোধ করতে পারছে না কৃষক।
কৃষকের কষ্টে রক্তে ঘামে যে ফসল খেতে লালন করেছে সে ধান কৃষকের অঙ্গনে ওঠে না।
শুধু ওঠে শস্যের ঋণ। তাই সারা দেশের ৩ লক্ষ কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। সারা
দেশের তীব্র হাহাকারের মধ্যে দাঁড়িয়েও ৩৪ বছর ধরে আমাদের এই বাংলায় বাম সরকার ডানা
মেলে কৃষকের শক্তি জুগিয়েছে সাহস সঞ্চার করেছে। একজনও কৃষক এ বাংলায় আত্মহত্যা
করেনি। কিন্তু তৃণমূল সরকার আসার পরেই একশোরও বেশি কৃষক ফলিডল খেয়েছে, বিষ খেয়েছে,
গলায় দড়ি বেঁধে গাছের ডালে ঝুলে পড়েছে। বি পি এম ও এ রাজ্যে অসহায়
কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। অন্য অংশের খেটেখাওয়া মানুষের পায়ে পা মিলিয়ে রৌদ্রে পোড়া
জোছনায় ভরা, প্লাবনে ভাসানো মাটি পায়ে পায়ে অতিক্রম করে
আগামীদিনের যুদ্ধারম্ভের প্রস্তুতি ঘোষণা করেছে।
পুরুষের পাশাপাশি হেঁটেছেন
মহিলারা। কারও মা, কারও স্ত্রী, কারও বোন নেমে এসেছেন সংগ্রামের
প্রশস্ত রাজপথে। মানুষ নিদ্রাহীন তন্দ্রার মধ্যে ধর্ষিতার কাতর আর্তনাদ শুনতে পান
প্রতিদিন। দিল্লির নির্ভয়া, উত্তর প্রদেশের আই এ এস পাঠরতা
পুলিশ অফিসারের তরুণী কন্যা, দলিত কিশোরী কামদুনির ছাত্রী,
পার্ক সার্কাসের সুজেটা, হাজরার মোড়ে ফুঁসে
ওঠা বাঁকুড়ার ধর্ষিতা কিশোরী কন্যার মা, রায়গঞ্জে বিছানা
থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া আদিবাসী কিশোরী — সংখ্যা বেড়ে যায়
ক্রমাগত। তিন বছরের কিশোরী কন্যা থেকে ৭৩ বছরের বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনী রেহাই নেই
কারও। এ লজ্জা আমরা রাখব কোথায়? সকলেমিলে তৈরি করতে হবে
প্রতিরোধের দেওয়াল। ভষ্ম, অপমান, শয্যা
ছেড়ে মাথা তুলতে হবে আমাদের। স্বাধীনতার ৭০ বছর পর যখন যৌবন উৎসবে মেতে ওঠার কথা
তখন যৌবন পথের ধুলায় দলিত মথিত হয়।
বি পি এম ও স্লোগান তোলে সব হাতে
কাজ চাই। খেতমজুরদের হাতে কাজ নেই, খুব বেশি কাজ পেলে বছরে দুমাস থেকে
পাঁচ মাস। বাকি মাসগুলো শুধু হাহাকার ভরা অনাহারী দিনমান। গ্রামীণ মজুরেরও কাজ নেই
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। যুবক-যুবতী মধ্যবয়সী এমনকি
ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধরাও যে গ্রামেরই হোক বা শহরেরই হোক এখন তারা কাজ চায়। প্রতিদিন
তারা স্বপ্ন দেখে আগামীকালের। প্রতিদিন আসবে কাজ, ব্যবহৃত
হবে তার মস্তিষ্ক, আসবে উচ্ছ্বসিত দিন। দুহাতে অঞ্জলিভরে
নেবে যা কিছু তার প্রাপ্য। তাই তারা হাতে তুলে নিয়েছে লাল পতাকা, তার হাতের পাঞ্জায় বিদ্যুৎ ঝলসে ওঠে। জ্বলে ওঠে তাজা বারুদ বহ্নি।
১০দিন ধরে পদ যাত্রার পর উত্তর
বাংলার বিভিন্ন গ্রাম শহর অতিক্রম করে পদযাত্রা প্রবেশ করেছিল ১লা নভেম্বর
শিলিগুড়ি শহরে। সেদিন শিলিগুড়ির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছিল শুধু উদ্দাম কলরব।
বিভেদের কুমন্ত্রণায় উত্তর বাংলার আকাশ এখন পীড়িত। পাহাড় জ্বলছে, জ্বলছে দাবানলের
মতো। কাঞ্চনজঙ্ঘার গায়ে রক্তের ছাপ, পাহাড়ি পথে রক্তের
আলপনা। ‘‘গোর্খাল্যান্ড’’ এই শব্দটি
জিইয়ে রেখেছে এই তৃণমূল সরকার। জাহান্নামের আগুনে বসে মোনালিসার হাসি হাসছেন
মোদী-মমতা। জিয়ল মাছের মতো গোর্খাল্যান্ড শব্দটি জিইয়ে রাখা হয়েছে। হিন্দু ও
মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মেরুকরণ তো করছেই এবারে তার সঙ্গে যোগ করা হয়েছে
বাঙালি ও নেপালির মধ্যে বিভাজন। উসকে দেওয়া হয়েছে গ্রেটার কোচবিহারের দাবি। সারা
উত্তর বাংলাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তৃণমূল-বি জে পি। সাড়ে ৪ লক্ষ চা শ্রমিকদের
ঐক্যবদ্ধ ধর্মঘট উত্তরবাংলার পাহাড়ি, সমতলবাসী, বনবাসী, আদিবাসী, চা শ্রমিক,
কৃষক সকল অংশকে নিয়েই চলমান পদযাত্রা উত্তর বাংলার মানুষের মধ্যে
সম্প্রীতির সেতু রচনা করেছে।
১লা নভেম্বর শুরু হয়েছিল
মহানন্দার তীর থেকে গড়ানো দুপুরে। অফুরন্ত মানুষের সমাবেশে অফুরন্ত, প্রাণবন্ত মিছিল
শেষ হলো শেষ বিকেলে দিগন্তে রক্ত গোলাপের মতো উজ্জ্বল আলো লাল পতাকায় মেখে নিয়ে।
আমাদের ঘোষিত লক্ষ্য ৭৭ হাজার
বুথ এলাকা। আমরা ৭৭ হাজার বুথে পৌঁছাবই। আমরা জানি ১২দিন পদযাত্রায় ৭৭ হাজার বুথে
পৌঁছানো যায় না। এই ১২দিন আমরা একটা পর্যায়ে অতিক্রম করলাম। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ
বুথ অতিক্রম করেছি। বাকি বুথগুলো লাল ঝান্ডার স্পর্শের জন্য অহল্যার মতো অপেক্ষা
করছে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস জুড়ে আমাদের পদযাত্রা চলবে। যেখানে আমরা পৌঁছাতে
পারিনি সেখানেও চলতে চলতে পৌঁছে যাব। আমাদের বিরাম নেই বিশ্রাম নেই। মানুষের কাছে
আমাদের পৌঁছাতে হবে। যে মানুষ মাটির পিঁপড়ের মতো, সমুদ্রের মাছের মতো, আকাশের পাখির মতো অগণন। যাঁরা
ভীরু, যাঁরা বীর, যাঁরা নিরক্ষর,
যাঁরা শিক্ষিত, যাঁরা ধ্বংস করে, যাঁরা সৃষ্টি করে, তাঁদেরই জন্য আমাদের সংগ্রাম।
তাঁদের জীবনেই আমাদের জীবন মেলাতে হবে। মানুষ অন্তরময়। অন্তর মেশালে তবে তাঁর
অন্তরের পরিচয় আমরা পাব। অন্তরঙ্গ হবার যোগ্যতা অর্জন করব।
আমরা দেখেছি গ্রাম এবং শহরের
শ্রমিকরা এসেছেন। তাদের বুকে ছিল স্বজন হারানোর যন্ত্রণা, তাঁরা জানিয়েছেন
তাদের বুকের মধ্যে দামালদরিয়া নেচে উঠেছে। আমরা দেখেছি ওদের বুনো পায়ের বন্যতা
জেগে উঠেছে মগজে, পেশিতে, দেহে। যখনই
আক্রান্ত হয়েছে তখনই তাদের উষ্ণ রক্ত টগবগ করে ফুটেছে। কয়লা শ্রমিকরা এসেছেন হীরক
সকালের স্বপ্ন নিয়ে, ইস্পাতের ফলার মতো ইস্পাত শ্রমিকরা
এসেছেন, বিদ্যুৎ শ্রমিকরা জ্বেলেছেন চেতনার উদ্ভাসিত আলো।
শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, যুব, মহিলাদের মিছিলে দেখে রক্ত ঝরা মাটির ললাটজুড়ে
বুক বেঁধেছে মানুষ।
আগামী দুমাস হবে আমাদের দাবি
ছিনিয়ে আনার উৎসব। যে দাবি এখুনি আদায় করা সম্ভব সেই আশু দাবিগুলো নিয়ে তুমুল
তিমিরে শুরু হবে নতুন সংগ্রামের আলেখ্য। আমার ১০০দিনের কাজ নেই, আমাকে কাজ দিতেই
হবে। আমার পরিবারে ডিজিটাল রেশন কার্ড নেই, কার্ড দিতেই হবে।
আমি দিনমজুর আমাকে সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ দিতেই হবে — এ
আমার অধিকার। দানিসনদ প্রচারের আন্দোলনের স্তর থেকে উন্নীত হয়ে এখন দাবি আদায়ের
আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।
এবারের আন্দোলন রাজ্যের আহ্বানে
রাজ্য পর্যায়ে কোনও নির্দিষ্ট দিনে নয়। এবারের আন্দোলন জেলায় জেলায় অঞ্চলে অঞ্চলে।
স্থানীয় নেতৃত্বকে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই আন্দোলনকে বাস্তব রূপ দিতে
হবে। এবারের লড়াই কোনও নির্দিষ্ট দাবি আদায়ের জন্য বি পি এম ও অন্তর্গত সব অংশকে
সর্বশক্তি দিয়ে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
বিগত ১২দিনে অজগরের রোষে গর্জে
ওঠা পাঁজরের ভাঙা হাড়ে অনন্ত ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে অন্ধকারে প্রসারিত মানুষের
সূর্যময় হাতের আশ্রয়ে,
মজুরের শিরা উপশিরা ধমনীর রক্তে জীবনের ঘাম মিশিয়ে, ছাত্র যুবককেরা তাদের ভবিষ্যতকে নতজানু করে, বন্ধুর
লাশ কাঁধে তুলে নিয়ে মাইলের পর মাইল, গ্রামের পর গ্রাম,
শহর থেকে মহানগর পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেছে। এখন আবার আমাদের বেগবান
দর্শন, শ্রম, উৎসব নিয়ে আমরা চলতে
থাকব। আমাদের স্নায়ুর তিমির জুড়ে স্বপ্নের স্বদেশ। আমাদের চার পাশে ফুটে আছে
জীবনের অপরূপ উজ্জ্বল ফুল। আমাদের সামনে আছে ছিনিয়ে আনার জন্য দিগন্তের মতো
প্রসন্ন ভবিষ্যৎ।
৩রা নভেম্বর কলকাতার মহামিছিল
শেষ হয়নি। আঁধারের আল বেয়ে বেয়ে এ মিছিল চলতেই থাকবে। এ মিছিল লাঙ্গলের ফালে আগাছা
উপড়ে ফেলবার — এ মিছিল কাস্তের বুকে নতুন ফসল তোলবার।
এই মিছিল সব পাওয়ার সব হারার এই
মিছিল। ক্লান্তি হীন,
শ্রান্তি হীন এই মিছিল।
গণশক্তি, ৬ই নভেম্বর ২০১৭
No comments:
Post a Comment