20180107

ব্যাঙ্কে রাখা টাকা লোপাট করার কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্ত


দীপন মিত্র

কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে হাজার লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। তারমধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি দেউলিয়া হতে পারে। তার কোপ পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। তাদের ব্যাঙ্কে জমা সামান্য টাকা ফেরত নাও দিতে পারে ব্যাঙ্ক। সেই আশঙ্কা, অনিশ্চয়তা নিয়েই এই লেখা।

এতদিন পর্যন্ত মানুষের বিশ্বাস ছিল অন্তত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে তা কখনও মার যাবে না। নেহাত কোনও ব্যাঙ্ক যদি সত্যিই তেমন অক্ষম হয়ে পড়ে সরকার তাকে টাকা দিয়ে রক্ষা করবে। টাকা দিয়ে কোনোও বিত্তিয় সংস্থাকে  রক্ষা করাকে ইংরেজিতে বলে বেলআউট করা। এই তো সেদিন ২০০৮ সালে আমেরিকায় আন্তর্জাতিক মানের বিশাল বিশাল বেসরকারি ব্যাঙ্ক একের পর এক তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে, অর্থাৎ দেউলিয়া হয়ে পড়ে। তখন আমেরিকার সরকার তাদের লক্ষ লক্ষ কোটি ডলার  জোগান দিয়ে বেলআউট করে। ইউরোপেও অনেক এমন ঘটনা সেসময় ঘটেছে। কিন্তু ভারতবর্ষে একটি এমনই স্বৈরতান্ত্রিক সরকার এখন ক্ষমতায় আসীন যারা তাদের এক একটি নীতির ফলশ্রুতিতে লক্ষ লক্ষ নরনারীর রুজি রুটি হারালে, এমনকী শতখানেক মানুষ মৃত্যু বরণ করলেও (নোট-বাতিলের নীতি) এতটুকু লজ্জিত বোধও করে না। নির্বাচনী দরিয়া পার করতে পারলেই হয়ে গেল। তা এমত এক কেন্দ্রীয় সরকার সত্যিই এক এমন আইন আনতে চলেছেন যার অধীনে বেসরকারি ব্যাঙ্কের কথা বাদ দিই, এমনকী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা রাখলেও আর তার কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে না। সংসদের এবারের শীতকালীন অধিবেশনে পেশ হবে তাই সর্বনাশা ফিনান্সিয়াল রিজলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স বিল ২০১৭। আপাতত সেটি যৌথ-সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে সলাপরামর্শের জন্য। অনুমান করা হচ্ছে যে আগামী ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে এই কমিটি তাদের মতামতসহ বিলটি জমা দিলেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক সেটি সংসদে আইন হিসাবে পাশ করানোর জন্য পেশ করবেন।

বেল-ইন
এই বিলের ৫২ নং ধারায় আছে একটি অভূতপূর্ব বিধান। এদেশে কেউ কখনও যার কথা শোনেনি। তার নাম হলো বেলইন। অর্থাৎ বাইরে থেকে টাকা দিয়ে ব্যাঙ্ককে উদ্ধার করা চলবে না। ভিতর থেকে টাকা নিয়ে তাকে উদ্ধার করতে হবে। অতঃপর এই ধারা অনুযায়ী কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যদি কোনও ব্যাঙ্কের ব্যবসা চালানোর ক্ষমতা বিপন্ন হয়ে পড়ে, সেই ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের জন্য আমানতকারীদের টাকা ব্যবহার করা যাবে। আইনি ভাষায় বললে  ব্যাঙ্কে টাকা জমা করেছেন যাঁরা সেই আমানতকারীদের টাকা (মূল ও সুদসহ) ফেরানোর দায় ব্যাঙ্ক অস্বীকার করতে পারে। বেলইনের সোজা সাপটা মানে এই। সরকারি বা বেসরকারি যে কোনও ব্যাঙ্কে আমার আপনার কষ্টার্জিত টাকা, তা সেভিংসে হোক, কারেন্টে হোক অথবা ফিক্সড ডিপোজিট হোক তা পূর্ণত বা অংশত তারা নিয়ে নিতে পারে। হ্যাঁ, আরেকটা জিনিসও তারা করতে পারে ব্যাঙ্কের অবস্থা বিবেচনা সাপেক্ষে তারা হয়তো খানিকটা টাকা ফেরত দিলে, বাকিটা ব্যাঙ্কের শেয়ারে রূপান্তর করে আপনার হাতে ধরিয়ে দিলেন। এখন যদি ব্যাঙ্কটি দেহ রাখেন, আমার আপনার হাতে পড়ে থাকবে এক মুঠো ছাই। আর ব্যাঙ্কটি যদি নেহাত ধুঁকতে ধুঁকতে চলে, তবেও তার শেয়ারের দাম নামমাত্র হবে, সন্দেহ কী।

শিল্পপতিদের লুটপাট বলির পাঁঠা আমানতকারী
বিষয়টি তাহলে এরকম দাঁড়াল এ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি থেকে দেশের স্বনামধন্যপ্রথম সারির শিল্পপতিরা স্বনামের মহিমায় বা রাজনীতির দাদাদের নাম-মহিমায় হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বেমালুম হজম করে ফেলল। সরকার বাহাদুরের তাদের ধরা, টাকা উশুল করা তো দূরের কথা, তাদের নাম প্রকাশ করাতেও বড় লজ্জা, কে জানে কেঁচো খুড়তে গিয়ে যদি সাপ বেরিয়ে পড়ে! অতএব চিন্তা কী? ধরো, এদেশের অগণ্য গরিব-গেরস্তদের। তাদের টাকাই তো ব্যাঙ্কগুলির কোটি কোটি টাকা মোট আমানতের সিংহ ভাগ। নাও ওদের তিল তিল করে সারাজীবনব্যাপী জমানো টাকাটা, হয়তো কন্যার বিয়ের জন্য অথবা ছেলের পড়াশুনার জন্য বা বিপদে আপদের রক্ষাকবচ হিসাবে রাখা একেবারে হাপিশ করে দাও। নাও নাও, অই যে অবসরগ্রহণ করে যারা পি এফ, গ্র্যাচুইটি বাবদ কয়েক লক্ষ টাকা পেয়ে ব্যাঙ্কে জমা রেখে তার সুদে দিন চালায়, হাতিয়ে নাও তাদেরও টাকা। দেখো না এই টাকা কেড়ে নিয়ে আরও কত ভারতীয় শিল্পপতির নাম ফোর্বসের ১০০ জন জগতজোড়া ধনীদের তালিকায় ঢোকানো যায়। একেবারে গুজরাত মডেলে চলছে এই সরকার - গরিবের ঘর ভেঙে ধনীদের চল্লিশতলা মহল উঠবে। একেই তো বলে উন্নয়ন!

ফিনান্সিয়াল রিজলিউশন করপোরেশন (এফ আর সি)
শুনতে যতই অবিশ্বাস্য মনে হোক, সত্যিই ঠিক এমনই এক জন-বিরোধী আইন শীঘ্রই আনতে চলেছে ভ্রষ্টাচারবিরোধীএই সরকার। এই আইন বলবৎ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তৈরি হবে উপরোক্ত এফ আর সি - যারবোর্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যই হবে সরকার কর্তৃক মনোনীত। এদের শাসনের এক্তিয়ারে পড়বে তাবৎ সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, সমবায় ব্যাঙ্ক, নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থা, সমস্ত জীবন বিমা, সাধারণ বিমা সংস্থাগুলি। এদের ক্ষমতা থাকবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাঙ্কগুলিকে (আর্থিক সংস্থা) একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত করা (মার্জার), মিলিয়ে দেওয়া (অ্যামালগ্যামেশন), দেউলিয়া ঘোষণা (ব্যাঙ্কক্রাপসি) করা অথবা বিলোপ সাধন (লিকুইডিকেশন) করা। এ সমস্ত অধিকার তারা পাবে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইন ১৯৩৫, ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক আইন ১৯৫৫, ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন আইন ১৯৪৯, ভারতীয় জীবনবিমা আইন ১৯৫৬ এবং আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনে সংশোধন এনে।

ঠুঁটো জগন্নাথ আর বি আই
১৯৬৯ সালে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের পর থেকে অর্ধশতাব্দী ধরে কোনও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের আমানতকারীর কোনও দিনও একটি টাকাও মার যায়নিকিছু কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্কে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অবস্থা বিপন্ন হওয়ার লক্ষণ দেখা মাত্র রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হস্তক্ষেপ করে সাধারণত, একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে সেবিকে যুক্ত করে দিত। আমানতকারীদের সেভিংস বা ফিক্সড ডিপোজিট আগের মতই সুরক্ষিত থাকত।
আজ পর্যন্ত ব্যাঙ্কগুলির নিয়ন্ত্রক হলো ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাঙ্ককে রক্ষা করা বা তার বিলোপ সাধনের পুরো বিষয়টি (রিজলিউশন) রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দেখাশুনা করে এসেছে। মানতেই হবে তারা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন। কিছু কিছু শহরাঞ্চলিক সমবায় ব্যাঙ্ককে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তুলে দিতে বাধ্য হয়, যেহেতু সেগুলির পরিচালনায় দুর্নীতির বহর এতটাই বেড়ে যায় যে তাদের সুস্থ করা সম্ভব ছিল না। তাদের চলতে দিলে আরও আরও বহু আমানতকারী সেই জালে জড়িয়ে পড়ে নিঃস্ব হতেন। এই সব ক্ষেত্রেও কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার সহযোগী সংস্থা ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি করপোরেশন (ডি আই সি জি সি)-এর মাধ্যমে প্রত্যেক আমানতকারীকে আমানত অনুয়ায়ী সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফেরত দিয়েছেন। এই উপরোক্ত সংস্থাটি তৈরি হয় ১৯৬২ সালে। কেননা সেসময় ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ হয়নি এবং শিল্পপতিদের মালিকানায় অসংখ্য ব্যাঙ্ক যখন তখন ফেল করতো। সমস্ত আমানত হারিয়ে গ্রাহকরা নিঃস্ব হয়ে পড়তেন। এই সংস্থাটি গড়ে তোলার পর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি বিভাগ হিসাবে এই ডি আই সি জি সি-র মাধ্যমে তারা দেশের যে কোনও প্রান্তে কোনও ব্যাঙ্ক ফেল করলে আমানতের উপর বিমা হিসাবে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিয়ে এসেছেন এবং এখনও দিয়ে থাকেন।

ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের ইউনিয়নগুলির ভূমিকা
এই নতুন সর্বনাশা গরিববিরোধী, আমানতকারী-বিরোধী আইনটি লোকসভায় পেশ হওয়ার প্রাক্কালে অল ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে লেখা একটি চিঠি প্রকাশ করেন যাতে তাঁরা যুক্তিসংগতভাবে ব্যাঙ্ক আমানতের উপর এই বিমাকৃত পরিমাণ ১ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ১০ লক্ষ করার আবেদন জানান। সংগঠন সম্পাদক সমীর ঘোষ আরেকটি প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই বিলের বিরোধিতা করেন এবং দাবি করেন এই বেলইন নির্দেশটিকে যেন বাতিল করা হয়। একই মর্মে ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বিশ্বাস একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের ট্রেড ইউনিয়নগুলিও যেমন এ আই বি ই এ, আইবক যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে এই বিলের বিরোধিতায় নেমে পড়েছেন। ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের এই সোচ্চার বিরোধিতার ফলে এই সংবাদ ফলাও করে প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন জাতীয় ইংরেজি তথা অন্যান্য ভারতীয় ভাষার দৈনিকে।
তা এই প্রস্তাবিত আইন যথারীতি এই ডি আই সি জি সি আইনটিকেই বাতিল করে আমানতের উপর বিমা করার কাজটি নিজেদের হাতে তুলে নেবে। অবশ্যই তারা আদৌ জানায়নি যে কোনও ব্যাঙ্ক ফেল করলে বিমা হিসাবে ন্যূনতম কত টাকা তারা দেবে, নাকি কিছুই দেবে না।

সতর্কীকরণ
সরকারের এই জনবিরোধী অবিবেচনামূলক পদক্ষেপ দেখে অনেক মানুষই ভাবতে পারেন তবে আর ব্যাঙ্কে টাকা রেখে কাজ নেই বরং মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখি। তাঁদের প্রতি বিনম্র নিবেদন যে সরকার ঠিক এইটেই চাইছে। ব্যাঙ্কে/পোস্ট অফিসে জমা টাকার উপর সুদের হার ক্রমশ কমিয়ে তারা চাইছে মানুষ মিউচুয়াল ফান্ডে, অর্থাৎ শেয়ার বাজারে যাক। শিল্পপতিদের স্বার্থবাহী এই সরকার জানে যে যতদিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বহাল থাকবে ততোদিন সুদ কমিয়েও খুব একটা সুবিধে তারা করতে পারবে না। শেয়ার বাজারে সাধারণ মানুষ যাবে না। তাহলে দেশের শেয়ার বাজার ফেঁপে ফুলে উঠবে না। শিল্পপতিদের হাতে টাকা আসবে না। মনে রাখতে হবে যে মিউচুয়াল ফান্ডগুলিও শেয়ার বাজারেই টাকা ঢালে। তারা সকলে অসৎ তাও নয়। কিন্তু তাদের কাছে জমা টাকা তারা খাটায় শেয়ার বাজারেই। যেহেতু শেয়ার বাজারে ফাটকাবাজদের রাজত্ব, এবং এই ফাটকাবাজরা মূলত বিদেশি বিশাল বিশাল আর্থিক সংস্থা, তাই তাদের বিপুল টাকা ঢালা ও টাকা তুলে নেওয়ার উপরই মূলত শেয়ার বাজারে শেয়ারের দামে ওঠা নামা হয়। এই পথ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যাদের বাড়তি প্রচুর টাকা আছে তারা এই সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু যাদের সঞ্চয়ের টাকাটা বেঁচে থাকার জন্যও যথেষ্ট নয়, এই ঝুঁকি তাদের নেওয়া বিপজ্জনক।

অর্থমন্ত্রীর মিথ্যা আশ্বাস
মিডিয়ার উপর যতই তারা জোর খাটান, এই সর্বনাশা বিল সাংবাদিক থেকে নিয়ে সকলের মধ্যেই ভয় সঞ্চার করেছে। ফলে চারিদিকে হইচই পড়ে গেছে। বিপদ বুঝে অর্থমন্ত্রী মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ আমানতকারীদের আশ্বাস দিয়েছেন যে এই আইন নাকি আমানতকারীদের স্বার্থের কথা ভেবেই করা হয়েছে এবং আমানতকারীদের কোনও টাকা মার যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু একথা তিনি বলেননি যে বিলের ৫২ নং ধারায় বর্ণিত বেলইন খারিজ করা হলো বা বাদ দেওয়া হলো। ফলে তাঁর বক্তব্য তো ফলক হয়ে চিরবিরাজমান থাকবে না। কিন্তু বেলইন থেকে যাবে। আরও বহু সর্বনাশা বিধান থেকে যাবে। অতএব এ ধরনের আশ্বাসবাণী যে ভুয়ো, তা সকলেই বুঝতে পারছেন।

গড়ে উঠুক গণপ্রতিরোধ
এই সর্বনাশা বিলের আরও অনেক মারাত্মক দিক আছে যা নিয়ে এই স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয় এবং কাম্যও নয়। তবু এ কথা বলতেই হবে যে এই বিল আইনে পরিণত হলে অনেকগুলি জাতীয় আর্থিক সংস্থা, যেগুলি এই দেশকে অর্থনৈতিক উন্নতির পথে নিয়ে গেছে, সংকটের সময় দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করেছে, সেগুলি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধিকার খর্ব হওয়ার কিছুটা প্রসঙ্গ উপরে এসেছে। আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যায় ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক সম্পর্কে। ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক আইন ১৯৫৫-এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী এক মাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বিশেষ নির্দেশ ভিন্ন এই ব্যাঙ্কটির বিলোপ সাধনের কোনও প্রচেষ্টাই গ্রাহ্য হবে না। অথচ নতুন এই প্রস্তাবিত সর্বনাশা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনে স্টেট ব্যাঙ্কেরও বিলোপসাধন তারা করতে পারবে। 
ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন আইন ১৯৪৯-এর প্রারম্ভিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে এই আইনের মোতাবেক ব্যাঙ্কের আমানতকারীর স্বার্থই সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান। কিন্তু প্রস্তাবিত সর্বনাশা আইন ব্যাঙ্কগুলিকে কোম্পানি আইনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যে আইন বলে শেয়ার-হোল্ডারদের স্বার্থ সর্বোপরি। এক কথায় এই সর্বনাশা আইন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বিমা ব্যবস্থাকে ভিতর থেকে ফোঁপরা করে বেসরকারি মালিকানায় নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত করছে। শেষ করার আগে জানাই যে সাইপ্রাস নামক একটি দেশে এই বেলইন প্রথম লাগু হয়। তার ফল হয় ভয়াবহ  আমানতকারীরা তাঁদের জমা টাকার ৬০ শতাংশ খুইয়ে ফেলেন।
আসুন আমরা ব্যাঙ্ককর্মচারীদের লড়াইয়ের সঙ্গে একহয়ে এই সর্বনাশা বিলের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলি। আর বিলম্ব করলে আমরা কিন্তু এই স্বৈরতন্ত্রী সরকারের ধ্বংসাত্মক চাপের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবো না। ইতিহাস এই শিক্ষাই দেয় যে কোনও স্বৈরতন্ত্রই গণপ্রতিরোধের জোয়ারের সামনে দাঁড়াতে পারে না। আসুন আমরা সেই পথেই হাঁটি।


গণশক্তি, ১৩ই ডিসেম্বর ২০১৭

No comments:

Post a Comment