20200827

করোনার সংক্রমণ ও আর্থিক অধোগতি রোধ: বামপন্থী বিকল্প পথ

 

বামপন্থী বিকল্প পথ ব্যাখ্যা করছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি

ড. অসীম দাশগুপ্ত

করোনা অতিমারী এবং আর্থিক অধোগতি— এই দুই কঠিন সমস্যার মুখোমুখি আমরা দাঁড়িয়ে আছি। একই সঙ্গে, আমরা লক্ষ্য করছি, করোনা রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে সামগ্রিক নীতি কি হওয়া উচিত— স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদীতে— তার ওপর সংক্ষেপে এই আলোচনা। 

আর্থিক অধোগতি 

দেশের আর্থিক অধোগতি করোনার আক্রমণের আগেই শুরু হয়েছিল। এর মূল কারণ ছিল তথাকথিত আর্থিক উদারনীতি, যে নীতি কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রেণিদৃষ্টিভঙ্গির কারণেই, বারংবার দেশের অর্থনীতিকে ছেড়ে দিতে চেয়েছে অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থার ওপরে এবং খর্ব করতে চেয়েছে সরকারের সামাজিক কল্যাণকর ভূমিকা। এই নীতি অনুসরণ করেই, ভুল পথে গিয়ে, প্রস্তুতিহীন ভাবে বিমুদ্রাকরণ ঘোষণা করা হয়, এবং তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবা— সর্বক্ষেত্রেই।

কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতি অর্থবর্ষে তিন মাস ধরে ধরে যে তথ্যাবলী প্রকাশিত হয়, তার ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে, গত অর্থবর্ষের (২০১৯-২০) প্রতি তিন মাসেই দেশের মোট উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে এবং সর্বশেষ ত্রৈমাসিকে এই বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়ে হয় ৫ শতাংশ, যা বিগত ছ’বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই অধোগতির অঙ্গ হিসাবে উৎপাদনের পরিমাণও হ্রাস পায়— শিল্পের ক্ষেত্রে, কৃষিতে এবং পরিষেবার (যথা ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা থেকে ঋণ প্রদান ইত্যাদি) ক্ষেত্রেও। উৎপাদন ও পরিষেবার এই সামগ্রিক অধোগতির কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হয় কর্মসংস্থানের সুযোগ, এবং ফলে হ্রাস পায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। এই ক্রয়ক্ষমতার হ্রাসই আর্থিক সঙ্কটের মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রকাশিত রিপোর্টে (২০১৯-২০)। এর মুখে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার, পুনরায় তাদের শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গির কারণে, সাধারণ মানুষের এই ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উপেক্ষা করে নজর দেয় ধনী শিল্পপতিদের সুবিধা দিতে কর্পোরেট করের হার ইত্যাদি লাঘব করতে, যাতে শিল্পপতিরা উৎসাহিত হয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ, যেখানে মূল সমস্যা ছিল সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের কারণে বাজারে মোট চাহিদারই অভাব, সেই চাহিদার বৃদ্ধির পথে না গিয়ে, কেবল জোগান বৃদ্ধির পথে গিয়ে সমস্যা সমাধানের উলটো দিকেই যাওয়া হয়। ফলে, সামগ্রিক আর্থিক অধোগতি রোধ করাও সম্ভব হয় না। 

করোনা অতিমারীর আঘাত 

এই আর্থিক অধোগতির মধ্যেই করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয় গত অর্থবর্ষের শেষের দিকে। চীন দেশের উহান প্রদেশে এই রোগ শুরু হলেও (এবং চীন এই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল হলেও) ভারত সহ বিভিন্ন দেশের সরকার বিষয়টিকে শুরু থেকেই গুরুত্ব না দেওয়ায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয় এবং করোনা অতিমারীর আকার ধারণ করে গোটা বিশ্বে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সমগ্র বিশ্বে করোনা আক্রান্ত এখন ২.৩৩ কোটি অতিক্রম করেছে। আক্রান্তের নিরিখে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা, তারপরে ব্রাজিল, এবং তৃতীয় স্থানে ভারত (৩০লক্ষ ছাড়িয়েছে)। কিন্তু এর মধ্যে উদ্বেগের বিষয় এই যে, সর্বাপেক্ষা বেশি হারে আক্রান্তদের সংখ্যা এখন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে ভারতেই। 

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দেশে এবং এরাজ্যে উপলব্ধি করা হয়েছে যে, যত দিন না পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে, ততদিন নিবারণমূলক পদক্ষেপের ওপরই জোর দিতে হবে— দূরত্ববিধি রক্ষা, মুখের বন্ধনী ব্যবহার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ইত্যাদির ওপর। এর সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন রোগ পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও ব্যাপক ও দ্রুত করা এবং তার সঙ্গে নিভৃতবাস এবং হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থাকেও কার্যকরী ভাবে সমন্বিত করা। এই পদক্ষেপগুলির অঙ্গ হিসাবে জোর দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে কিছুদিন এবং কিছু এলাকা নির্দিষ্ট করে ‘লকডাউন’ প্রক্রিয়া লাগু করার ওপর। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই ‘লকডাউন’ এর দিন ইত্যাদির সিদ্ধান্ত একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নেওয়া হয়নি এবং স্থানীয় চাপ ইত্যাদির সঙ্গে আপস করা হয়েছে, যার একটি উদাহরণ বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত। 

কিন্তু, উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এই ‘লকডাউন’গুলির কারণে প্রতিটি রাজ্যেই উৎপাদন এবং পরিষেবার ওপর বাড়তি আঘাত এসে পড়েছে, বিশেষ করে দেশের বিশাল অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলির ওপর যেখানে ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ তাঁদের কর্মসংস্থান এবং উৎপাদনের জন্য নির্ভরশীল। এর ফলে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান অর্থবর্ষে (২০২০-২১) আমাদের দেশের মোট উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির পরিবর্তে হতে পারে প্রায় ৪ শতাংশ সংকোচন (-৪%) এবং কাজ হারাতে পারেন প্রায় ১৪ কোটি মানুষ। এতে সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পুনরায় দেশের সেই নিচের ৮০ শতাংশ মানুষজনই। 

কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির প্রশ্ন 

এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার, তাদের শ্রেণিদৃষ্টিভঙ্গি থেকে স্থির করেছে যে, দরিদ্র মানুষদের সরাসরি সহায়তা করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মূলত উদ্যোগীদের ঋণ প্রদান এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের ওপরেই জোর দেওয়া। তার মাধ্যমেই উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটলে শ্রমজীবী মানুষজনও উপকৃত হবেন। লক্ষণীয় যে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি যে প্রায় ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ প্রথমে প্রধানমন্ত্রী, পরে আরও বিস্তারিত ভাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, ঘোষণা করেছেন তার প্রায় ৯০ শতাংশই হলো ঋণ যা বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে প্রদান করা হবে শিল্পোদ্যোগীদের। এমন কি অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে ১ লক্ষ কোটি টাকা কৃষির ক্ষেত্রে বরাদ্দ করার কথা বলেছেন, তা ঐ ২০ লক্ষ কোটি টাকারই অংশ এবং যা অপেক্ষাকৃত সম্পন্ন কৃষকদের প্রদান করা হবে বিপণন পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য। এই সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যা উপেক্ষিত থাকছে, তা হলো, সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষমতা, যার সমাধান না হলে শুধুমাত্র জোগান বৃদ্ধি করলে উৎপাদিত পণ্য তার বাজার পাবে না। 

এ ছাড়া, উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এই আর্থিক অধোগতির সময়ই, সংসদে কোনও আলোচনা না করেই নির্বিচারে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার যার মধ্যে রয়েছে দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলিও। এ ছাড়া, আঘাত করা হয়েছে শ্রমিকদের কল্যাণের শ্রমআইনগুলিও। এই পদক্ষেপগুলির জন্য পুনরায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যাপক অংশের শ্রমজীবী মানুষ। 

বামপন্থী বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি 

এই ক্রয়ক্ষমতার বৃদ্ধিকেই মূল লক্ষ্য হিসাবে স্থির রাখা হয়েছে বামপন্থী বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গিতে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে তাই কার্যকরী দিক হলো কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে নিচের ৮০ শতাংশ পরিবারের হাতে পরিবারপিছু মাসে ৭,৫০০ টাকা সরাসরি প্রদান করা সম্ভব হয়। এ ছাড়া, বিনামূল্যে রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে খাদ্যপণ্য পৌঁছে দেওয়া, এবং করোনা প্রতিরোধে নিবারণমূলক এবং নিরাময়মূলক পদক্ষেপগুলির জন্য অতিরিক্ত অর্থপ্রদান করা এবং সাংগঠনিক পদক্ষেপগুলিও গ্রহণ করা। 

এই সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সামনে রেখে তাই স্বল্পমেয়াদি (আগামী ছ’মাসের জন্য) পদক্ষেপগুলি হলো— (১) দেশের নিচের ৮০ শতাংশ পরিবারের প্রত্যেকটি পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাসে ৭,৫০০ টাকা জমা দেওয়া। এর জন্য কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে বরাদ্দ করতে হবে ৯.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। তারপরে (২) নিচের এই ৮০ শতাংশ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে ভরতুকি দিয়ে বিনামূল্যে ৬ মাসের জন্য মাসে ১০ কেজি করে খাদ্যশস্য (চাল অথবা গম) রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া, যার জন্য প্রয়োজন হবে ৬ কোটি ২৪ লক্ষ টন খাদ্যশস্য (যার থেকে অনেক বেশি খাদ্যশস্য, প্রায় ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টন, বর্তমানে মজুত আছে ভারতের খাদ্যনিগমের গুদামগুলিতে)। আর্থিক দিক থেকে এই পদক্ষেপের জন্য প্রয়োজন হবে কেন্দ্রীয় বাজেটে অতিরিক্ত ১.১৭ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা। এ ছাড়া, (৩) করোনার ক্ষেত্রে নিবারণ ও নিরাময়মূলক পদক্ষেপগুলির জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে বর্তমান বছরে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বরাদ্দকে (৬৭ হাজার কোটি টাকা) দ্বিগুণ করে উন্নীত করতে হবে ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকাতে। অর্থাৎ, এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের জন্য বছরে কেন্দ্রীয় বাজেটে বরাদ্দ করতে হবে অতিরিক্ত মোট ১১.১৭ লক্ষ কোটি টাকা, যা হবে সমগ্র কেন্দ্রীয় বাজেটের মাত্র ৩.৮ শতাংশ। স্বল্পমেয়াদিতে এই বাড়তি অর্থ জোগাড় করতে হবে ঘাটতি বাজেটের মাধ্যমেই, এবং এর জন্য উদারনীতির চাপানো আর্থিক নিয়ন্ত্রণ ও বাজেট পরিচালনা আইনকে কিছুটা অতিক্রম করতেই হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, এই পদক্ষেপগুলির জন্য সাধারণ মানুষের আয়বৃদ্ধির ফলে যে অতিরিক্ত চাহিদার সৃষ্টি হবে, তা বর্তমানের এই চাহিদা-ঘাটতির সময়ে মঙ্গলজনক হয়ে উৎপাদনকে উৎসাহিত করে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্যকেই রক্ষা করবে, এবং এর জন্য কোনও অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি হবে না। ফলে, উৎপাদনে অধোগতিকে রুখে দিয়ে অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত গতি সঞ্চারই হবে। 

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে ১ লক্ষ কোটি টাকা কৃষির ক্ষেত্রে বরাদ্দ করার কথা বলেছেনতা ঐ ২০ লক্ষ কোটি টাকারই অংশ এবং যা অপেক্ষাকৃত সম্পন্ন কৃষকদের প্রদান করা হবে বিপণন পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য। এই সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যা উপেক্ষিত থাকছেতা হলোসাধারণ শ্রমজীবী মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষমতাযার সমাধান না হলে শুধুমাত্র জোগান বৃদ্ধি করলে উৎপাদিত পণ্য তার বাজার পাবে না।

স্বল্পমেয়াদিতে যতদিন না পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার এবং গণব্যবহার শুরু হচ্ছে, ততদিন মূল জোর থাকবে করোনার নিবারণমূলক চিকিৎসায়, এবং তার সঙ্গে নিরাময়মূলক চিকিৎসার সমন্বয়ের ওপর। এই নিবারণমূলক চিকিৎসার ক্ষেত্রে, ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া ‘লকডাউনের’ পরিবর্তে অনেক জরুরি হবে গ্রামে এবং শহরে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। এই কাজে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হবে চিকিৎসকের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা যাদের অধিকাংশকেই এরাজ্যে নিয়োগ করা হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারেরই আমলে। এঁরাই মানুষের বাড়িতে গিয়ে বোঝাবেন কি কি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে তাঁদের স্বাস্থ্য নিরাপদ থাকবে তাঁদের নিজেদের হাতেই। এই ক্ষেত্রে বিশেষ সহযোগী ভূমিকা পালন করবে বাম ও প্রগতিশীল গণসংগঠনগুলি। এই বিষয়ে এরাজ্যে ইতিমধ্যেই এগিয়ে এসেছেন বিজ্ঞানমঞ্চ, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি এবং ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলি। এরপর, এই নিবারণমূলক পদক্ষেপগুলির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন হবে প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে গ্রামাঞ্চলে ব্লক, মহকুমা এবং জেলাস্তরে হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা, রোগ পরীক্ষার ব্যবস্থাকে আরও দ্রুত করা এবং রোগ নিরাময়ের দিকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া। শহরাঞ্চলেও একই ধরনের কাজ করতে হবে প্রতি ওয়ার্ডকে ভিত্তি করে পৌর হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোকে উন্নয়নের মাধ্যমে। করোনার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের এই পদক্ষেপগুলির জন্যই এই খাতে কেন্দ্রীয় বাজেটের অর্থ দ্বিগুণ করার কথা ইতিমধ্যেই উল্লিখিত হয়েছে। 

দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ 

দীর্ঘমেয়াদি স্তরটি চিহ্নিত হবে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার এবং তার গণব্যবহারের স্তর শুরু হওয়ার পর থেকেই। এই লক্ষ্যে এখনই প্রস্তুতির প্রয়োজন, যাতে কেন্দ্রীয় বাজেটে উপযুক্ত ভরতুকি প্রদানের জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দ থাকে, এবং রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে সমন্বয় থাকে যাতে এই বিষয়ে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে গণটিকার ব্যবস্থা সম্ভব হয়, এবং তার উপকার সমস্ত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়। 

দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও স্বল্পমেয়াদি স্তরের তিনটি পদক্ষেপকেই বেশ কিছুদিনই চালু রাখতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের স্বার্থে শুধু করোনার আক্রমণের পূর্ণাঙ্গ মোকাবিলা সম্ভব হবে তাই নয়, আর্থিক প্রগতির চাকাটিও নিয়মিত ঘুরতে শুরু করবে যাতে সাধারণ মানুষের আয় এবং কর্মসংস্থান ধারাবাহিক ভাবেই বৃদ্ধি পাবে। দেশের মোট উৎপাদন ও আয়বৃদ্ধি হতে থাকলে রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পায়, এবং এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলির আয়ও বৃদ্ধি পাবে, যার থেকে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আরও বর্ধিত ব্যয়ও বহন করা সম্ভব হবে। 

সর্বশেষে মনে রাখা প্রয়োজন, আর্থিক প্রগতি এবং করোনাকে প্রতিরোধ করার এই প্রক্রিয়া থেকে সর্বাপেক্ষা উপকৃত হতে পারেন আমাদের দেশের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষজনই। তাই স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপগুলির ক্ষেত্রে, দাবি আদায় এবং পদক্ষেপগুলির কার্যকারিতা বজায় রাখার লক্ষ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হবে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের সংগঠিত এবং ধারাবাহিক আন্দোলন— গ্রামে এবং শহরে। 

গণশক্তি, ২৭ আগস্ট, ২০২০

 


 

No comments:

Post a Comment