20200827

প্যান্ডেমিক-পিকে-আঁখি এবং প্রত্যাঘাত

সুদীপ্ত বসু

শুধু ধূপগুড়িতেই গঙ্গাধর রায় সহ মোট দশজন কৃষক এখনও পর্যন্ত আত্মঘাতী হয়েছেন। পাটের চাষ প্রায় বন্ধ বিস্তীর্ণ এলাকায়। ফসলের দাম নেই, মহাজনী ঋণে জর্জরিত গরিব, প্রান্তিক কৃষকরা। আবার এই ধূপগুড়িতেই পশ্চিমবঙ্গের বুকে প্রথম গোরক্ষার নামে গুজব ছড়িয়ে দুই কিশোরকে পিটিয়ে খুন করার প্রথম ঘটনা ডুডুয়ার তীরে বারহালিয়া গ্রামে। 

আজকের বাংলার রাজনীতির ‘সাজানো সমীকরণের’ আশ্চর্য ক্যানভাস হয়ে উঠতে পারে উত্তরবঙ্গের এই কৃষি জনপদ। 

গঙ্গাধর রায়ের মাত্র তিন বিঘা জমি ছিল, অন্যের জমিতে লিজেও চাষ করতেন। তিনটি মেয়ে। ব্যাঙ্ক ও মহাজনী ঋণের চাপে শেষপর্যন্ত অসহায় আত্মসমর্পণ, আত্মঘাতী হন। জমিও আপাতত বন্ধক রয়েছে মহাজনী কারবারিদের হাতে। ধূপগুড়ি থেকে গোটা উত্তরবঙ্গে আলু যায়, সেখানেই আলু চাষি আত্মঘাতী হচ্ছেন। শুধু এই এলাকা থেকেই তিন হাজারের বেশি কৃষক পরিবারের ছেলেমেয়ে বাইরে কাজের খোঁজে। 

দারিদ্র্যের সেই উঠোনে বিহার থেকে আসা পিকে’র বাহিনী হাজির হয়েছিল। গঙ্গাধর রায়ের দাদা চিন্তামোহন রায়। গাদং এলাকায় সিপিআই(এম)’র সংগঠক। দু’বছর আগে বাবাকে হারানো তিন কন্যার অবাক চাহনি। চিন্তামোহন রায়ের পুত্র জয়ন্ত রায়। বাংলায় এমএ। ছয় বছর আগে প্রাথমিকে টেটে উত্তীর্ণ, আজও নিয়োগ হয়নি।

কর্পোরেট সংস্থা পিকে বাহিনীর মুখের ওপর জবাব শুনিয়েছিল জয়ন্ত,‘আমাদের পরিবারকে আগে জেনে আসুন, তারপর বাবাকে কিনতে আসবেন, আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু বিক্রি হই না’। 

প্রত্যাখ্যানের পর্ব পেরিয়ে এবার প্রত্যাঘাত। ফসলের দাম না পাওয়া কৃষকরাই পালটা তাড়া করেছে। প্রত্যাঘাতেই লুকিয়ে আছে আগামীর অনেক সম্ভাবনার রসদ।

 

‘আমাদের মাথা বিক্রির জন্য নয়’ 

রাজনীতিতে সময় বরাবরই এক্স ফ্যাক্টর। 

কোভিড আবহ। চলতি মাসেই রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লক্ষে পৌঁছাতে চলেছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভয়াবহ চিত্র বেআব্রু হচ্ছে প্রতিদিন, লকডাউনের দিন ঘোষণা করতেও কার্যত নাজেহাল সরকার। রাজ্যের মত দেশেও বাড়ছে করোনা দাপট। দেড়শো দিন পেরিয়ে গেছে, দেশে ৫৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্য, প্রধানমন্ত্রী ময়ূরের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন! 

ঠিক সেই সময়তেই এরাজ্যে কেনাবেচা করতে পাড়ায় পাড়ায় ঘোরা শুরু করেছে মমতা ব্যানার্জির হয়ে ভাড়া খাটা প্রশান্ত কিশোরের বাহিনী। 

২০১৮’র পঞ্চায়েত ভোটের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। গায়ের জোরে, অস্ত্রের মুখে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় মাইলের পর মাইল বিরোধী শূন্য। বেলাগাম দুর্নীতির উৎসমুখ। আমফান পরবর্তী ঘটনাবলি স্পষ্ট করেছে বিনা ভোটে জেতার উগ্র বাসনা কেন। গরিব, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সামান্য ত্রিপল পেতেও টাকা দিতে হয়েছে। ক্ষোভের বৃত্ত বাড়ছে, জমি হারাচ্ছে তৃণমূল। বাজার করতে বেরোচ্ছে প্রশান্ত কিশোর অ্যান্ড কোম্পানি। 

খোদ হরিরামপুরের বিধায়কের বাড়ি পৌঁছেছে সেই ভাড়াটে বাহিনী। ঘৃণাভরে তা উড়িয়েছেন সিপিআই(এম) বিধায়ক রফিকুল ইসলাম। ঘরের দোর থেকেই বিদায় করেছেন পিকে বাহিনীকে। 

এবাংলার রাজনীতিতে এই সংস্কৃতির আমদানি হলো মমতা ব্যানার্জির হাত ধরেই। ভয় দেখিয়ে, মিথ্যা মামলা রুজু করে দলবদলে চাপ দেওয়ার ঘটনা ২০১১ সাল থেকেই চলছিল। কিন্তু কোটি কোটি টাকায় ভাড়া করা একটা কর্পোরেট সংস্থাকে দিয়ে বাংলার মানুষকে ‘কিনতে ’ চাওয়ার স্পর্ধা এর আগে কেউ দেখায়নি। ‘দিদিকে বলো’ থেকে ‘বাংলার গর্ব মমতা’- কর্পোরেট প্রচার মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাই এবার বাঁকা আঙুলে ঘি তোলার চেষ্টা— পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক নতুন উদ্বেগজনক ছবি।  

ধূপগুড়ির সিপিআই(এম)’র প্রাক্তন বিধায়ক লক্ষীকান্ত রায়ের উঠোনে দাঁড়িয়েও দরদাম করেছেন প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার বিহারের বাসিন্দা। 

—শুনুন তৃণমূলকে জেতানোর দায়িত্ব নিয়েছেন আমাদের বস, এখন বেকায়দায়। চারিদিকে দুর্নীতি, আপনি তৃণমূলে যোগ দিন,আপনাদের মতো সৎ লোকেদের প্রয়োজন তৃণমূলে। টাকা পয়সার অভাব হবে না, জেলায় ভালো পদ পাওয়া যাবে।

ছাত্র আন্দোলন থেকে জমির আন্দোলনে পরশ মাখা প্রৌঢ়ের পালটা জবাব ছিল,‘ কমিউনিস্ট পার্টি করেছিল সারাজীবন, কোনোদিন শুনিনি ভোটের জন্য কোনও দলকে একটা কর্পোরেট কোম্পানিকে ভাড়া করতে হয়। এসব এরাজ্যের সংস্কৃতি নয়, আর এই যে বলছেন তৃণমূলে সব অসৎ লোক, এটা ভুল ধারণা। তৃণমূলের মাথাই অসৎ তাই কর্মীরাও সেই পথে’। 

কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের শ্লাঘা বোধ হবে এমন কথোপকথনে স্বাভাবিক। 

কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন সিপিআই(এম)’কে কিনতে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতে হচ্ছে? আবার করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যও দেশের সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে, মানুষের দাবিতে প্রতিবাদ আন্দোলনে নামলে সিপিআই(এম)’কেই হুঁশিয়ারি দিতে হচ্ছে নবান্ন থেকে?

 

বাড়ির সামনে বসে মাছের জাল বুনছেন প্রাক্তন সিপিআই(এম) বিধায়ক লক্ষীকান্ত রায়


‘করোনার ব্যর্থতা শেষে এখন দুর্নীতি’ 

গত পাঁচ মাস রাজ্যজুড়ে কোভিড পরিস্থিতিতে একের পর এক মর্মান্তিক ছবি সামনে এসেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য দপ্তর পাঁচ মাসে ঠিক কী কাজ করেছে তা নিয়ে রাজ্যবাসীর স্বাভাবিকভাবেই এখন কোনও আগ্রহ নেই। লকডাউন মানে যে রাস্তা লাল ইট দিয়ে সাদা গোল করা নয়, তা এতদিনে উনিও হয়তো টের পেয়েছেন। 

মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক তো ছাড়, খাস বিহারও এখন দৈনিক করোনা নমুনা পরীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গকে ছাড়িয়ে গেছে। রাজ্যে গোষ্ঠী সংক্রমণের আবহে অ্যাগ্রেসিভ টেস্টিং’র জায়গায় দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ‘অ্যাগ্রেসিভ’ ভাবে কমে যাওয়া করোনা পর্বে রীতিমতো উদ্বেগজনক বলেই মনে করা হচ্ছে। কোভিড পজিটিভ হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজার পেরোতে চলেছে। উত্তরবঙ্গের যে জেলায় করোনা মোকাবিলার লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, সেই জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের স্রেফ সঙ্কীর্ণ স্বার্থে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। ‘আলিপুরদুয়ার মডেল’ নয়, সরকার বরং নির্মল মাজি-শান্তনু সেন’দের প্রেসক্রিপশনেই আস্থা রাখছে। যার অনিবার্য পরিণাম, সংক্রমণের গতি বেপরোয়া, মৃত্যুর স্রোতকে আটকাতে না পারার ব্যর্থতা সামনে আসছে প্রতিদিন। 

সংক্রমণের এই পর্বে রাজনীতি করা যাবে না বলে দাবি করে প্রতিদিন স্রেফ দলীয় রাজনীতি করে যাচ্ছে সরকার। সংক্রমণের শঙ্কা উপেক্ষা করে দলীয় বাহিনী ত্রাণ, ক্ষতিপূরণে টাকা চুরি করে যাচ্ছে, প্রতিবাদে গ্রামবাসীরা পথে নামলে ‘করোনায় রাজনীতি ’ না করার হুশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। অথচ তথ্য বলছে লকডাউন শুরু প্রায় তিন সপ্তাহ আগেই তখই করোনা উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে থাকা মানুষের সংখ্যা ৩১, ১২৫১জন নজরদারিতে, ২৯জনের লালরসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর সেদিনই মুখ্যমন্ত্রী মালদহের সভায় দাঁড়িয়ে বলছে, করোনা করোনা নিয়ে মাথা ঘামানো হচ্ছে, ওসবে প্যানিক করবেন না’। উলটে আবার নেতাজী ইন্ডোরে সভা করে ক্লাবগুলিতে টাকা বিলি করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের সরকার কেনাবেচায় ব্যস্ত ছিল অমিত শাহ, তাই জানুয়ারি স্পষ্ট ইঙ্গিত পেলেও মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নষ্ট করা হয়েছিল। 

আর এখন আনলক পর্বে সামনে এসেছে মাস্ক, স্যানিটাইজার, পিপিইি-ভেন্টিলেটর- কেনা নিয়েও সরকারের অন্দরেই এখন কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির খবর। কোভিড সরঞ্জাম নিয়েও দুর্নীতি! আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়েই দুর্নীতি! মুখ্যমন্ত্রীর সাফাইয়ের মর্মার্থ— পিএম কেয়ার ফান্ডে দুর্নীতি হতে পারলে এরাজ্যে সামান্য মাস্ক, ভেন্টিলেটর নিয়ে প্রশ্ন কেন? 

‘বাইনারি’ ঠিক হচ্ছে কীভাবে, কোন খাতে বারেবারে তা স্পষ্ট হচ্ছে প্রতিদিন। 


‘শীতঘুম শেষে বোঝাপড়ার সমন’ 

এর মাঝেই নতুন মোড়। আনলক পর্বে এসে দীর্ঘ শীতঘুম কাটিয়ে ফের নারদ ঘুষকাণ্ডে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের সমন পাঠানো হচ্ছে, সম্পত্তির তথ্য চাওয়া হচ্ছে। এফআইআর রুজুর পরে চার বছর কেটে গেছে। তারপরেও এখনও সমনের পালা চলছে। কেউ কেউ খুশি, ‘এই তো এবার দুর্নীতিগ্রস্তরা ধরা পড়বে’। দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তির আকাঙ্ক্ষা ভুল কিছু নয়, কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থা দৃঢ়তার সঙ্গে তদন্ত করে হাত পেতে ঘুষ নেওয়া মন্ত্রী, সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, সেই ধারণা চরম বিভ্রান্তিকর। 

কেন? ২০১৪ সালে সারদা-রোজভ্যালি সহ চিট ফান্ডকাণ্ডে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়। ছয় বছর পরেও চার্জশিট জমা দেওয়া হয়নি। এখন বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্ত চলছে। 

তবে এর মাঝেই এবার জবাব দিতে হবে খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই। গত ছয় বছর ধরে চিট ফান্ডকাণ্ডে অভিযুক্তদের জেলে ঢোকানোর গল্প পশ্চিমবঙ্গে এসে বার পাঁচেক শুনিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। 

অথচ সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের (সিভিসি) রিপোর্ট বলছে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গোটা দেশে একাধিক দুর্নীতির মামলায়( ব্যাঙ্ক, এমনকি সরকারি দপ্তরের দুর্নীতি) জনপ্রতিনিধি ও সরকারি আধিকারিক সহ ১১০ জনের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর সম্মতিটুকু পর্যন্ত আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ, জন-অভিযোগ মন্ত্রক। এই মন্ত্রক রয়েছে মোদীর হাতেই। 

২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই’র আবেদন বকেয়া রয়েছে। গত বছরের এপ্রিল মাসেই সিবিআই’র তরফে তৃণমূলের তিনজন সাংসদ ও একজন মন্ত্রীর জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে মামলা ও আইনি প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আবেদন জানানো হয়। সেই  আবেদন ১৫ মাস ধরে ফেলে রেখেছে মোদী সরকার। এমনকি মমতা ব্যানার্জির ছবি দুর্নীতিকাণ্ডের আইনি প্রক্রিয়ার আবেদনও ফেলে রাখা হয়েছে। 

বিশ্বাস করবেন এই নতুন ‘সমন পর্ব’? 


সোশ্যাল মিডিয়া শাসকেরই মিডিয়া’ 

‘নয়া ভারতে মোদীর প্রতারক ভাবমূর্তি’— এই শীর্ষক সিপিআই(এম)র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির ফেসবুক লাইভ। সেই ভার্চুয়াল বক্তৃতার শেয়ার করার মহারাষ্ট্রের সিপিআই(এম) নেত্রী শুভা সামিমের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তিনদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলো। এই বক্তৃতা নাকি ফেসবুকে সামাজিক মাপকাঠির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। 

যদিও তেলেঙ্গানার বিজেপি নেতা টি রাজা সিং’র ঘৃণ্য বিষাক্ত মন্তব্য— মুসলিমদের বিশ্বাসঘাতক, রোহিঙ্গা মুসলিমদের গুলি করে মারা, দিল্লির দাঙ্গায় কপিল মিশ্রের উগ্র পোস্ট— সব কিছুই অনুমোদন দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ‘ব্যবসা ও শাসক পক্ষের সঙ্গে সম্পর্কে ক্ষতি হবে’ এই অজুহাতে! অভিযোগের তীর ফেসবুকের  ভারত, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর আঁখি দাস আবার রাজ্যের প্রাক্তন কারিগরি শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ। ২০১১ সালের নির্বাচনে দক্ষিণ বর্ধমান কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার সামলেছেন আঁখি দাস নিজেই। কথিত আছে, তাঁর প্রভাবেই রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রীসভায় স্থান পান। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও তাঁর স্বামী দিল্লির উচ্চ পদস্থ আমলা( আরএসএস’র কট্টর সমর্থক) সৌম্য চট্টোপাধ্যায় এবং আঁখি দাস ওই কেন্দ্রের নির্বাচনী প্রচারের সময় ছিলেন বর্ধমানেই। এমনকি খোদ তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে কোভিডের জন্য ‘মুসলিমদের বাড়তি দায়িত্ব পালন করা উচিত’র মতো সূক্ষ বিষাক্ত প্রচারও শেয়ার করতে দেখা গেছে। তাঁর দিদিও পরিচিত মুখ, বিজেপি’র। 

বিজেপি-আরএসএস’র সখ্যতা কখনও তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় আঁখি দাসের পথে বাধা হয়নি। 

২০১১ ভোটের সময় যেভাবে তৃণমূলের প্রচার ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছিল, যেভাবে প্রচারের সুর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় তাতে দলেরই বিধায়ক, মন্ত্রীর এই পুত্রবধূর ‘ভূমিকা’ গুরুত্বপূর্ণ। 

সীতারাম ইয়েচুরির বক্তৃতার লিঙ্ক শেয়ার অপরাধ, অথচ কপিল মিশ্রদের বক্তৃতা ফেসবুকে ভাইরাল করতে সময় লাগে না। খোদ ফেসবুক প্রধান নিজেই লিখেছেন মমতার প্রচারের ৩৮ ভিডিও ভাইরালের রহস্য! 

আদৌ রহস্য থাকল কিছু ? সোশ্যাল মিডিয়া আসলেই ‘শাসকেরই মিডিয়া’!


‘দুঃসময় থেকে সুসময়ে মানুষ পৌঁছে দেবে মানুষকে’ 

মহামারীকে ঢাল করে যেভাবে জনগণের রুটি-রুজির ওপরে আঘাত নামিয়ে আনা হচ্ছে, যেভাবে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ বৃহৎ কর্পোরেটের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে তার প্রতিবাদে গোটা দেশজুড়ে এই অস্থির সময়তেই সপ্তাহ ব্যাপী সিপিআই(এম)’র প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। ১৬টি দাবি। স্পষ্ট বিকল্প— আয়কর দেয় না এমন পরিবারগুলিকে আগামী ছয় মাস নগদ ৭৫০০ টাকা করে দিতে হবে, বর্ধিত মজুরি সহ রেগায় ২০০দিনের কাজ। 

আবারো বলতে হচ্ছে ‘সময়’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দুত্বের উগ্র মুখ মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল ফিরে এসেছেন কলকাতায়। নড়বড়ে অধিকারী পরিবার, নারদকাণ্ডের সমন পৌঁছেছে তাঁর ঠিকানাতেও। ‘পত্র-সংঘাতের’ মাঝেই রাজভবনে ‘আড্ডা’ দিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রীও।

বিচ্ছিন্ন সব ছবি? একেবারেই নয়। 

পরিকল্পিত মেরুকরণের রঙিন চিত্রনাট্য প্রস্তুত। শাসকের মরজি মতো মিডিয়ায় সাজানো হচ্ছে বাইনারি- ‘হয় তুমি তৃণমূল নয় তুমি বিজেপি’। 

আপনাকে বিভ্রান্তির চোরাবালিতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে দুই সরকার। 

উত্তর অভিন্ন— আমাদেরই সামনে আনতে হবে বিকল্প ভাষ্য। একইসঙ্গে প্রত্যাঘাত, দ্রুত এবং সরাসরি। মনে রাখতে হবে পিকে’র বাহিনী কাদা মাখা কৃষকদের তাড়া খেয়েই কিন্তু গ্রাম থেকে পালাতে বাধ্য হয়।

গণশক্তি, ২৫ আগস্ট, ২০২০

1 comment:

  1. Harrah's Cherokee Casino Resort - MapYRO
    MapYRO users can browse the map 광주광역 출장샵 of the Harrah's Cherokee 전주 출장샵 Casino Resort located in Cherokee, North Carolina. To 순천 출장샵 view 양주 출장마사지 Harrah's Cherokee Casino Resort 안동 출장마사지

    ReplyDelete