20210213

শ্রেণি আক্রমণ মোকাবিলায় চাই শ্রেণি প্রত্যাঘাত

 

সীতারাম ইয়েচুরি

 

ভারতীয় জনগণের বিরুদ্ধে শ্রেণি আগ্রাসন তীব্র করতে চাইছে বিজেপি। শোষিত শ্রেণিগুলি ও জনগণের বিভিন্ন অংশের পালটা শ্রেণি আক্রমণ দিয়েই তাকে চ্যালেঞ্জ ও মোকাবিলা করতে হবে।

=================

 কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কৃষক সংগঠনের নেতাদের ৩০ ডিসেম্বরের আলোচনাতেও অভূতপূর্ব কৃষক প্রতিবাদের মুখ্য বিষয়গুলির সমাধান হয়নি। কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে কেন্দ্রীয় সরকার সম্মত হয়নি। কিন্তু বিদ্যুৎ (সংশোধনী) বিল পর্যালোচনা ও বায়ু দূষণ আইন থেকে কৃষকদের অব্যাহতি দেবার বিষয়ে আপাতত রাজি হয়েছে। ৪জানুয়ারি আরেক দফা আলোচনা হবে বলে ঠিক হয়েছে। 

কৃষি আইন প্রত্যাহারে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সরকারের টানা একগুঁয়েমির জন্য এই বিরাট শান্তিপূর্ণ কৃষক প্রতিবাদের অচলাবস্থা কাটছে না। 

সমস্ত দিক থেকেই দিল্লির সীমান্তে, দিল্লিমুখী জাতীয় সড়কে কৃষকদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তাঁরা নজরকাড়া দৃঢ়তা, প্রত্যয় দেখিয়েছেন। দিল্লির সংলগ্ন রাজ্যগুলি ছাড়াও মহারাষ্ট্র, গুজরাট, উত্তরাখণ্ডের মতো দূরের রাজ্যগুলি থেকেও কৃষকরা এসেছেন। দেশের অন্যান্য অংশে, প্রায় সব রাজ্যে, পাটনা থেকে রায়পুর, গুলবর্গা থেকে থাঞ্জাভুর কৃষকরা লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এই কৃষক সংগ্রামের পাশে শ্রমিক শ্রেণি, ট্রেড ইউনিয়ন সক্রিয় সংহতি জানিয়েছে। দেশের অন্নদাতাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সমাজের অন্য অংশের মানুষ— মহিলা, ছাত্র, যুবকরা। 

এই প্রতিবাদ আন্দোলনের দাবিগুলি সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত এবং যুক্তিবোধ থাকলে যে কোনও সরকার তা গ্রহণ করে নেবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হচ্ছে এখন এই আইনগুলি প্রত্যাহার করে নিয়ে কৃষকদের, কৃষি সম্পর্কিত সমাজ, কর্পোরেট, সমস্ত অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করো, তার ভিত্তিতে নতুন আইন বানিয়ে সংসদে পদ্ধতি মেনে আলোচনা ও বিতর্ক করে তা চালু করো। এই পদক্ষেপ নিতেই প্রধানমন্ত্রী মোদী একগুঁয়ের মতো রাজি হচ্ছেন না। (বস্তুত এই রকম চাপ আসতে পেরে ভেবেই কেন্দ্রীয় সরকার সংসদের শীতকালীন অধিবেশন বাতিল করে দিয়েছে, জবাব দেওয়ার ও দায়বদ্ধতার দায়িত্ব পরিহার করেই এই কাজ তারা করেছে।) 

অসত্য প্রচার 

প্রবল শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে এই বিরাট ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলছে শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খলভাবে। তাকে বদনাম করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকার বিষাক্ত অসত্য প্রচারে নেমেছে। প্রথমে তারা প্রতিবাদীদের খালিস্তানি, পাকিস্তানি, চীনের দালাল, শহুরে নকশাল, টুকরো টুকরে গ্যাঙ এইসব বলে চিহ্নিত করেছে। তারপর কুৎসা ছড়ানো হলো বিরোধী দলগুলি কৃষকদের বিপথে পরিচালিত করছে। বাস্তব সত্য হলো এই আন্দোলন পরিচালনা করছে সংযুক্ত কৃষক মোর্চা, যা দেশব্যাপী ৫০০-র বেশি সংগঠনকে নিয়ে তৈরি, কোনও রাজনৈতিক দলেরই যোগাযোগ নেই। 

প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে এই জাতীয় প্রচারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করছেন বিরোধী দলগুলি নিজেদের নির্বাচনী ইশ্‌তেহারে কৃষি সংস্কারের কথা বলে এখন বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করছেহ্যাঁ, সিপিআই(এম) সব সময়ে কৃষিতে সংস্কার দাবি করেছে। অন্য অনেক দলও করেছে। কিন্তু কী ধরনের সংস্কার? সিপিআই(এম) ভারতের খাদ্য নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করার জন্য, সমস্ত মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট শস্য উৎপাদনের লক্ষ্যে, কৃষকদের ফসলের লাভজনক মূল্য, ক্রেতাদের ন্যায়সঙ্গত দামে শস্য পাবার জন্য শক্তিশালী গণবণ্টন ব্যবস্থা চায়। চায় কৃষিক্ষেত্রের আরও উন্নতি। সেই লক্ষ্যে সিপিআই(এম) সংস্কার চায়। 

প্রধানমন্ত্রী মোদীর সংস্কার যা এই কৃষি আইনগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে তা উলটো। ভারতের কৃষিকে, তার বাজার ও উৎপাদিত ফসলকে বহুজাতিক কৃষি বাণিজ্যের রাঘববোয়াল, দেশি-বিদেশি কর্পোরেটের হাতে তুলে দেবার জন্য এই সংস্কার। তা ভারতের খাদ্য নিরাপত্তার গুরুতর বিপর্যয় ডেকে আনবে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বিপুল মজুতদারির অনুমোদন দেওয়ায় কৃত্রিম খাদ্য সঙ্কট তৈরি করে চড়া হারে মূল্য বৃদ্ধি ঘটানো হবে। গণবণ্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, সাধ্যের মধ্যে দামে খাদশস্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এই আইনগুলিতে ভারতের কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস হবে, জনগণের দুর্দশা আরও বাড়বে। এই কারণে অনেক বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ দল এই বিলগুলির বিরোধিতা করেছিল, কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করছে, তাদের দাবি মেনে নিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে। সরকারের কাছে দাবি, এমন সংস্কার করুন যা ভারতের জনগণের সমৃদ্ধি ও কল্যাণের কাজে লাগে, দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের অতি মুনাফার লক্ষ্যে সংস্কারের পথে হাঁটবেন না। 

স্বামীনাথন কমিশনের রিপোর্ট কি রূপায়িত হচ্ছে? 

প্রধানমন্ত্রী দাবি করছেন তাঁর সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে স্বামীনাথন কমিশনের রিপোর্ট রূপায়ণ করছে। সত্য হলো স্বামীনাথন কমিশন সি২+৫০ শতাংশ হারে এমএসপি নির্ধারণ করতে বলেছে। সরকার বড়জোর এ২+৫০ শতাংশ হারে এমএসপি নির্ধারণ করছে। এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য তাৎপর্যপূর্ণ। এ২ প্রকৃত মিটিয়ে দেওয়া খরচ (অ্যাকচুয়াল পেইড আপ কস্ট)। সি২-র মধ্যে রয়েছে নিজের জমির খাজনার মূল্য, নিজস্ব মূলধনী সম্পদের ওপরে সুদ। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এমএসপি আদৌ দেওয়া হচ্ছে না, কমিশনের অন্য সুপারিশ তো উপেক্ষা করাই হচ্ছে। 

সিপিআই(এম)’র ২০১৯-র নির্বাচনী ইশ্‌তেহারে ‘কৃষি সংস্কার’ সংক্রান্ত পরিচ্ছেদে প্রথমেই বলা রয়েছে সমস্ত কৃষককে এমএসপি-তে ফসল বিক্রির আইনি অধিকার দিতে হবে। ২০১৭ থেকে সিপিআই(এম) সাংসদরা বারবার এই দাবি সংসদে উত্থাপন করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার এমন আইন আনেনি। বলা হয়েছিল, এমএসপি’র অধীনে সমস্ত কৃষিপণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, সমস্ত কৃষককে তার পরিধিতে আনতে হবে। বর্তমানে মাত্র ৬ শতাংশ কৃষক এর আওতায় পড়েন। তাছাড়াও কার্যকরী সংগ্রহের প্রক্রিয়া ছাড়া এমএসপি অর্থহীন। সরকারি বা বেসরকারি সংগ্রহ ব্যবস্থা দেশজুড়ে সর্বজনীন করতে হবে। 

বিরোধী দলের রাজ্য সরকারগুলিকে আক্রমণ 

প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্পূর্ণ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে বিরোধীদের রাজ্য সরকারগুলিকে বিশেষ করে কেরালার এলডিএফ সরকারকে আক্রমণ করে বলেছেন তারা কৃষকদের স্বার্থ দেখছে না অথচ কেন্দ্রীয় আইনের বিরোধিতা করছে। কেরালা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাভাষণকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে দিয়েছে সারা ভারত কৃষকসভা। কেরালায় ধান, তরিতরকারি, ডাল, কলা ইত্যাদিতে হেক্টরপ্রতি ভালোই ভরতুকি দেওয়া হয়। কেরালার কর্ষিত জমির ৮২শতাংশে অর্থকরী ফসল উৎপাদন হয় যার দাম পণ্য বোর্ড নিশ্চিত করে দেয়, রাজ্য সরকারের অধীনে নিলামের ব্যবস্থা রয়েছে। 

নজর ঘোরাতে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ 

বিপুল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে বিজেপি তাদের রাজ্য সরকারগুলির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্র করতে উঠেপড়ে লেগেছে। উত্তর প্রদেশ ও মধ্য প্রদেশে জারি করা হয়েছে ‘লাভ জিহাদ’ আইন, ‘গোরক্ষা আইন’ জারি করা হয়েছে। এইসবকে ব্যবহার করা হচ্ছে হেনস্তা, হয়রানি, ও সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগ তৈরির জন্য। মধ্য প্রদেশের উজ্জয়িনী, ইন্দোর, অন্যান্য জায়গায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে। এর বিপর্যয়কর অস্থিরতার প্রভাব পড়বে দেশে। 

নয়া উদারনীতির আগ্রাসী অভিযান 

বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কবলে। নয়া উদারনীতির পথে সংস্কার যে এই সঙ্কটের কোনোই সমাধান করতে পারে না, সম্পূর্ণ দেউলিয়া তা উন্মোচিত হয়েছে। ধনতন্ত্রে লুটেরা প্রবৃত্তির মুনাফা সর্বোচ্চকরণের জন্য তাই কাড়াকাড়ি তীব্রতর হয়েছে। বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেটের মুনাফা সর্বোচ্চকরণের লক্ষ্যে বৃহত্তর সুযোগ করে দিতে নয়া উদারনীতির সংস্কার আগ্রাসী ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য দরকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নতুন নতুন এলাকা ও নতুন বাজার দখল করা। এই লক্ষ্যেই দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে কৃষিকে তুলে দেবার চেষ্টায় নতুন আইনগুলি আনা হয়েছে।

ভারতের শাসক শ্রেণিগুলির শক্তিবৃদ্ধির মুখ্য এজেন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সরকার, তাদের শ্রেণি স্বার্থ রক্ষায় সংস্কার রূপায়ণের কাজ করছে তারা। 

শ্রেণি প্রভাব 

বিশ্ব সঙ্কট ছাড়াও ভারতের অর্থনীতি নোটবাতিল ও পণ্য পরিষেবা কর রূপায়ণের পদ্ধতিতে ভারতের অর্থনীতি দুর্বিপাকে পড়েছে। গত কয়েক বছরে লাগাতার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার অধোগতিতে পড়েছে। অর্থনীতিতে মন্দা, কোভিড মহামারীর প্রভাব, অপরিকল্পিত হঠাৎ লকডাউনের প্রেক্ষিতে ভারতের শাসক শ্রেণিগুলি নিজেদের মুনাফা বজায় রাখতে, সর্বোচ্চ করতে আরও রাস্তা খুঁজছে। 

বৃহৎ বুর্জোয়ার নেতৃত্বে বুর্জোয়া-ভূস্বামী শাসক শ্রেণিগুলি নয়া উদারনীতির পথে অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে মুনাফা সর্বোচ্চকরণের প্রয়াস চালিয়ে গেছে। জাতীয় সম্পদের লুট, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বিপুল আকারে বেসরকারিকরণ, খনির মত জনগণের সম্পত্তি এবং জনপরিষেবা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসাবেই শ্রমিকদের অধিকার রদ করা হচ্ছে। 

কৃষকদের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ভারতের শাসক শ্রেণিগুলির নেতৃত্বের মুনাফা সর্বোচ্চ করার লক্ষ্যে কৃষিতে কর্পোরেট দখলদারির ঘটনাকে স্পষ্ট ভাবে সামনে এনে দিয়েছে। 

এক নতুন শ্রেণি দ্বন্দ্ব সামনে আসছে। আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির সঙ্গে সহযোগিতায় বৃহৎ বুর্জোয়া বনাম ধনী কৃষক ও জোতদার-সহ সমগ্র কৃষকের দ্বন্দ্ব। 

দ্বিতীয়ত, শাসক শ্রেণির শরিকদের মধ্যে সংঘাতও দেখা যাচ্ছে। একদিকে বৃহৎ বুর্জোয়া, অন্যদিকে অ-বৃহৎ বুর্জোয়া, বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের মধ্যে দ্বন্দ্ব। 

তৃতীয়ত, বিজেপি দেশে পূর্ণ রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করছে, তার বদলে কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তার ফলে কেন্দ্রীয় সরকার এবং নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে সংঘাত তৈরি হচ্ছে। রাজ্য সরকার পরিচালনা করে এমন কিছু আঞ্চলিক দল সংসদে বিজেপি-কে সমর্থন করত, কিছু দোদুল্যমান ছিল এবং মূলত বিজেপি-কে সমর্থনের উদ্দেশ্যে সংসদে নিরপেক্ষ থাকত। তারাও বিশেষ করে এই কৃষক সংগ্রামের সময়ে বিজেপি’র এই আধিপত্যকামী অভিযানের ফলে বিরোধিতায় বাধ্য হচ্ছে। 

শাসক শ্রেণিগুলির শরিকদের মধ্যে এই ধরনের সংঘাত কিছু সম্ভাবনা তৈরি করে যা শোষিত শ্রেণিগুলিকে ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণি, গরিব কৃষক, খেতমজুরদের বুর্জোয়া-ভূস্বামী শ্রেণি কাঠামোর বিরুদ্ধে শ্রেণি সংগ্রাম তীব্র করার লক্ষ্যে এই সম্ভাবনাকে ব্যবহার করতে হবে। 

শ্রেণি সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে শ্রমিক শ্রেণির ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন, কৃষক ও খেতমজুরদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি পেতে থাকায়। অনেক আগেই এই কাজ শুরু হয়েছিল, ২০১৮ থেকে এইসব অংশের যৌথ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি ঘটেছে। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি ২৬ নভেম্বর সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল, তা কৃষক সংগঠনগুলির ২৬-২৭ নভেম্বর দিল্লি চলো অভিযানের সঙ্গে মিশে গেছে। আগামী দিনগুলিতে সংগ্রামের এই ক্রমবর্ধমান ঐক্য নিশ্চয়ই আরও মজবুত হবে। 

একই সঙ্গে শাসক শ্রেণিগুলি শ্রেণি আক্রমণ তীব্রতর করছে, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্রতর করছে, ভারতীয় সংবিধানকে খর্ব করছে। এর ফলে বর্তমান বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রাম বৃদ্ধি পাওয়ার জমি তৈরি হচ্ছে। আগামী দিনগুলিতে একদিকে যৌথ ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম অন্যদিকে মহিলা, ছাত্র, যুব, দলিত, আদিবাসীদের মতো জনগণের বিভিন্ন অংশের নিজস্ব দাবিদাওয়ার আন্দোলন তীব্রতর হতে বাধ্য। এই আন্দোলনগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ভারতীয় জনগণের বিরুদ্ধে শ্রেণি আগ্রাসন তীব্র করতে চাইছে বিজেপি। শোষিত শ্রেণিগুলি ও জনগণের বিভিন্ন অংশের পালটা শ্রেণি আক্রমণ দিয়েই তাকে চ্যালেঞ্জ ও মোকাবিলা করতে হবে।

=================

গণশক্তি, ১জানুয়ারি, ২০২১

 

 

 

No comments:

Post a Comment