20210719

নারদাকান্ডে সিবিআই-র শীতঘুম ভাঙা: অজয় দাশগুপ্ত

১৮মে, ২০২১

নারদাকান্ডে পাঁচ বছর শীতঘুমে থাকার পর খোদ প্রধানমন্ত্রী পরিচালিত সিবিআই দপ্তর আচমকা জেগে উঠেছে! ভোটে হারার প্রতিক্রিয়া কিনা স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে।

ঘটনা হলো, ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ নারদ ‘এক্স ফাইলস’-এর ভিডিও ফুটেজে সৌগত রায়, সুব্রত মুখার্জি, ববি হাকিম, শুভেন্দু অধিকারীসহ তৃণমূলের ১৬ জন সাংসদ ও বিধায়ককে প্রকাশ্যে ঘুষ নিতে দেখা যায়। ভিডিও ফুটেজের সত্যতা ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও একজনের বিরুদ্ধেও দলীয় স্তরে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় নিযদিও ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারে মমতা ব্যানার্জি নিজেই কবুল করেছিলেন, ‘‘আগে জানলে টিকিট দিতাম না।’’ কিন্তু নির্বাচনের পর তাদেরকেই আবার মন্ত্রী করেছেন এবং পরের নির্বাচনেও টিকিট দিয়েছেন। তুলনাহীন দ্বিচারিতায় উনি সবকিছুতেই ছাপিয়ে গেছেন, এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি।

এদিকে, তৃণমূল সাংসদ-বিধায়কদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য লোকসভায় গঠিত এথিক্স কমিটির কাছে নারদা স্টিং অপারেশনের টেপ জমা পড়ার ৫বছর বাদেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের কথা, একটি বৈঠকও ডাকা হয়নি। শুধু তাই নয়, রাজ্যসভায় এথিক্স কমিটি গঠনের বিরোধিতা করেছে স্বয়ং মোদী সরকার। এই ঘটনার পিছনে কোন বোঝাপড়ার অঙ্ক কাজ করছিল সেই রহস্য এখনও অন্ধকারে।

২০১৮সালের ১২সেপ্টেম্বর সংসদের নীতিবিষয়ক (এথিক্স) কমিটি পুনর্গঠিত করেন লোকসভার তৎকালীন অধ্যক্ষ সুমিত্রা মহাজন এবং নারদ ঘুষকান্ডের তদন্তে গত তিন বছরে একটিও মিটিং না ডেকে শীতঘুমে থাকা এই কমিটির চেয়ারম্যান আবার হন বিজেপি-র প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি। সেবছরই ১আগস্ট দিল্লিতে সংসদ ভবনে তাঁর কক্ষে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে মমতা ব্যানার্জির প্রণাম করার ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ তাঁরা ‘সৌজন্যমূলক’ আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলেন, বলেও আমরা সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানতে পেরেছিলাম! বাবরি মসজিদ ভাঙার নায়ক লালকৃষ্ণ আদবানিকেই মমতা ব্যানার্জি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, এটাও মিডিয়ার অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে যেতে চান! তার পিছনে কোন অঙ্ক কাজ করছিল, তা সহজেই অনুমেয়।

লোকসভা নির্বাচনের পর আদবানিহীন সংসদে নতুন করে এথিক্স কমিটি গঠিত হলেও তার বৈঠক কেন ডাকা হলো না, তার উত্তর মোদী-শাহ সরকারকে দিতে হবে। বৈঠক ডাকলেই সাংসদদের সদস্যপদ যে বাতিল করতে হবে, তার উদাহরণ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত লোকসভা দেখিয়ে দিয়েছে। সদ্য বিজেপি'তে যোগ দেওয়া, অথবা যোগ দিতে অপেক্ষমান সাংসদদের বাঁচাতে গিয়ে যে একাজ করা হচ্ছে না, এই প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৬এপ্রিল সিবিআই লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে সাংসদদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল। মোদী সরকারই তা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে।

এদিকে, আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে মমতা ব্যানার্জি দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তার অব্যবহিত পরেই সিবিআই সারদা, রোজভ্যালি এবং নারদা মামলার তদন্তকারী সমস্ত কর্মকর্তাদের বদলি করে, যারা তখনই কেস গুটিয়ে এনেছিলেন

নাটক এখনও শেষ হয়নি। নতুন অঙ্ক শুরু হয়েছে। দেখতে থাকুন।

সূত্র: 

১। আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৮এপ্রিল, ২০১৬;   ‘‘আগে জানলে টিকিট দিতাম না:

২। The Hindu, Kolkata, 16th January, 2020;  CBI transfers officers probing Saradha, Rose Valley and Narada scams


(এই চমকপ্রদ ছবিটি সমকালীন চিত্র সাংবাদিকদের মধ্যে অন্যতম সেরা অমিত ধরের তোলা। তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।)


 

No comments:

Post a Comment