20160412

সংখ্যালঘু উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার হিসেবই নেই

বরাদ্দ টাকায় কী কাজ হলো, কে করলো
জানাতে পারছে না মমতার সরকার

সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ টাকায় কী কাজ হয়েছে? কোন সংস্থা কাজ করেছে? মমতা ব্যানার্জির সরকার জানাতে পারেনি। এই প্রশ্ন তুলেছে সি আই টি ইউ। 

আর প্রশ্ন উঠেছে সংখ্যালঘুদের জন্য পরিচালিত মাল্টি সেক্টোরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামস (এম এস ডি পি) নিয়ে। প্রথম ইউ পি এ সরকারের সময়কালে চালু এই প্রকল্পে দেশের প্রায় ৯০টি সংখ্যালঘু নিবিড় জেলায় নানা পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে টাকা বরাদ্দ করা হয়। রাজ্যে এমন ১২টি জেলা আছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে এম এস ডি পি-র টাকা খরচে কিংবা তাতে হওয়া কাজের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে একাধিকবার প্রথম হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের সময়কালে ওই প্রকল্পের কাজ নিয়ে বেশ কয়েকটি জেলায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না, বরাদ্দ টাকা খরচ হচ্ছে না এমন অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, হাজার কোটি টাকা খরচের কোনো হিসেবই নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্বয়ং রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী। তবু অভিযোগের বহর বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে আর টি আই আইনে রাজ্য সরকারের কাছে এই বিষয়ে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। কিন্তু কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। বুধবার সি আই টি ইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী এক সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, আমরা রাজ্য সরকারের কাছে ফাইল নম্বর ও তারিখ ধরে জানতে চেয়েছি যে ওই টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে। ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত সমস্ত তথ্য রয়েছে। এ কাজের জন্য কোন্‌ কোন্‌ নোডাল এজেন্সি কাজ করেছে তার বিস্তারিত তথ্য আমরা চেয়েছি। কিন্তু সরকারের তরফে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। আদৌ তার কোনো হিসেব আছে কিনা বলুক সরকার। অবিলম্বে এই সমস্ত তথ্য দেওয়া হোক বলে দাবি করেন শ্যামল চক্রবর্তী।

শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারের অপদার্থতায় ফ্রি কোচিং থেকেও বঞ্চিত তফসিলি ও আদিবাসী ছাত্রছাত্রীরা। এদিন শ্রমিক ভবনে শ্যামল চক্রবর্তীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বলেন অমিতাভ চৌধুরি। তিনি এই আর টি আই করেছেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। আর টি আই তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে উত্তর দিনাজপুরে ২০১১- ১২ সাল থেকে ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। একইভাবে মুর্শিদাবাদে প্রায় ২১৫ কোটি, নদীয়ায় ৮০ কোটি, উত্তর চব্বিশ পরগনায় ৭২ কোটি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়া মালদহে ১০৯ কোটি, কলকাতায় প্রায় ২৩ কোটি, হাওড়া ২৬ কোটি, বীরভূমে ৭৯ কোটি, কোচবিহার ৪২ কোটি, বর্ধমান ৪৯ কোটি, দক্ষিণ দিনাজপুর ৫১ কোটি টাকা গত ৪ বছরে পেয়েছে। এই টাকার সমস্ত হিসাব দিতে হবে, জানাতে হবে সংখ্যালঘুদের জন্য কীভাবে তা খরচ হয়েছে।

এছাড়াও তফশিলি ও আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিখরচায় পড়ার সুযোগ চালু রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের অপদার্থতায় তা ব্যাহত হয়েছে বলে জানান শ্যামল চক্রবর্তী। ফলে বহু ছাত্রই কেন্দ্রের ফ্রি কোচিং-এর সুযোগ থেকে বঞ্চিত। কেন্দ্রের সামাজিক ন্যায় বিচার দপ্তরের প্রকল্প- নিখরচায় চাকরির পরীক্ষার জন্য তফসিলি ও আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়। বিধানসভা ভিত্তিক জনসংখ্যার সংরক্ষণ অনুযায়ী তা চূড়ান্ত হয়। রাজ্যের ক্ষেত্রে জেলাগুলিতে সরকার সেই প্রস্তাব পাঠায়নি বলে অভিযোগ। এর ফলে বহু ছাত্রছাত্রী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। রাজ্য সরকারকে এর জবাব দিতে হবে

রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-র মার্চ থেকে ২০১৫-র ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্য সরকার এম এস ডি পি বাবদ প্রায় ১১৩৬ কোটি টাকা পেয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকেই এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫৫৭ কোটি টাকার খরচের হিসাব (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) দিতে পারেনি। আর কাজের ক্ষেত্রেও নানা প্রশ্ন উঠছে। যেমন সাধারণ ক্লাসরুমের কথাই ধরা যেতে পারে। ২০০৮ থেকে শুরু হয়েছে এম এস ডি পি। ২০০৮-২০১১-র মার্চ, এই সময়ে রাজ্যের সংখ্যালঘু নিবিড় এলাকার স্কুলগুলিতে অতিরিক্ত ৬৫৬৫টি ক্লাসরুম তৈরির অনুমোদন পেয়েছিল বামফ্রন্ট। ২০১১-র মার্চের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছিল ৬৯২৭টির কাজ। অর্থাৎ প্রায় একশো শতাংশ কাজই শেষ হয়েছিল। অন্যদিকে, ২০১২-র মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত ৫৫৩১টি অতিরিক্ত ক্লাসরুমের অনুমোদন পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। হয়েছে ২৫৬২টি পঞ্চাশ শতাংশের কাছাকাছি। বাকিগুলি কেন হলো না? কে কাজ করছিল? তার জবাবই চাওয়া হচ্ছে সরকারের কাছে।

আর একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে পলিটেকনিক কলেজ তৈরির কাজ। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে সংখ্যালঘু নিবিড় এলাকায় ৩টি পলিটেকনিক তৈরির অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১১-র মার্চ পর্যন্ত ২টি পলিটেকনিকের কাজ চলছিল। ১টির কাজ শুরু করা যায়নি। আর মমতা ব্যানার্জির সরকার গত সাড়ে চার বছরে আরও ৬টি পলিটেকনিক কলেজ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকে। কেন্দ্রীয় সরকার তাতে সবুজ সংকেত দিয়েছে, টাকাও অনুমোদন করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শেষ হয়েছেসেই ২টিরই!

সংখ্যালঘুদের জন্য নতুন স্কুল তৈরির কাজও বিশেষ কিছুই হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের সময়কালে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে ৪১টি স্কুল বানানোর অনুমোদন মিলেছিল। তারমধ্যে ৩৫টির কাজ শেষ হয়েছিল। ৭টির কাজ চলছিল। আর গত সাড়ে চার বছরে আরও ৬৭টি স্কুল তৈরির অনুমোদন পেয়েছিল সরকার। কিন্তু কাজ শেষ হয়েছে ৫টির।
অর্থাৎ বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে শুরু হওয়া ৭টি স্কুলের কাজও শেষ করতে পারেনি বর্তমান সরকার। এমন নানা অসঙ্গতির কারণেই সি আই টি ইউ-র পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সরকার জবাব দেয়নি।

৬ই এপ্রিল, গণশক্তি                                                    

No comments:

Post a Comment