20161101

স্বৈরাচারী সিদ্ধার্থশঙ্করের যোগ্য উত্তরসূরী মমতা ব্যানার্জি

সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত

পাঁচ বছর আগে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় এসে প্রথম ধ্বংস করেছিলেন বামফ্রন্ট আমলে সুপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের গণতন্ত্র। প্রথম দফার শাসনকালে ১৭৬জন এবং বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তীকালে আরও ২৫ জন বাম কর্মী খুন হয়েছেন তৃণমূল ভৈরববাহিনীর হাতে। এখনও পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি কর্মী ঘরছাড়া। লক্ষাধিক কর্মীকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। গত নির্বাচনের পর প্রায় ৬০০ পার্টি ও প্রায় দেড়শ বাম গণ সংগঠনের অফিস দখল, ভাঙচুর বা আগুন দেওয়া হয়েছে। সদ্য নির্বাচিত বাম বা বিরোধী বিধায়করাও আক্রান্ত হয়েছেন। সন্ত্রাস, আক্রমণ, কন্ঠরোধ করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও মমতা ব্যানার্জী ভয়মুক্ত হতে পারছেন না। কারণ তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে, নানা আক্রমণ ও সন্ত্রাসের মধ্যেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ৫৫ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন।

বিরোধীদের মর্যাদা দেওয়ার প্রচলিত রীতির মধ্যেই সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশ নির্ভর করে। বিরোধীদের দূরবীণ দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে নাবা 'বিরোধীরা ২০ বছর চুপ করে থাকুক' মমতা ব্যানার্জীর এই সদম্ভ হুমকি আমাদের সংসদীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী। অনৈতিকভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে বা মোটা টাকার উৎকোচের লোভ দেখিয়ে গায়ের জোরে বিরোধী দল পরিচালিত একের পর এক জেলা পরিষদ, পুরসভা, পঞ্চায়েত দখল করছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাঁচ মাস আগে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে মানুষের রায়ে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলি এইভাবে প্রথম দখল করা শুরু হয়েছে - তা কিন্তু নয়। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর থেকেই মমতা ব্যানার্জী চেষ্টা করেছেন বিরোধীদের হাতে থাকা পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলি যে কোনভাবে ভয় দেখিয়ে জোর করে দখল করে নেওয়ার। মমতা ব্যানার্জীর উদ্দেশ্য স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে পুলিশ ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে রাজ্যকে বিরোধীশুন্য করে দেওয়া। কিন্তু ২ কোটি ১৫ লক্ষ ভোটারকে দখল নিতে পারবেন না মমতা ব্যানার্জী।

প্রথম এই ধরনের স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে সংগঠিত গুন্ডামির সাহায্যে হালিশহর পৌরসভা দখল করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫শে নভেম্বর। পৌর নির্বাচনে হালিশহর পৌরসভার ২৩টির ওয়ার্ডের মধ্যে বামফ্রন্টের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা ১৪, তৃণমূল কংগ্রেসের ৮ এবং কংগ্রেসের ১ জন। তৃণমূল গুন্ডাদের সশস্ত্র বাহিনী ২৪শে নভেম্বর রাতে আক্রমণ, ভাঙচুর, প্রাণে মারার হুমকির পর অপহরণ করে হালিশহরে সি পি আই (এম)-র ৬জন কাউন্সিলরকে জবরদস্তি পদত্যাগ করায়। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জোর করে লেখানো হলো পদত্যাগপত্র। মহকুমা শাসকের সামনে দাঁড়িয়ে এই ৬জন কাউন্সিলর জানিয়ে দিলেন, শারীরিক অসুস্থতা কিংবা স্বেচ্ছায় নয়, স্রেফ প্রাণনাশের হুমকির মুখে দাঁড়িয়েই তাঁরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, তারা তৃণমূলকে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করেছিল।

বামপন্থীদের নিশ্চিহ্ন করার মমতা ব্যানার্জীর এই স্বৈরাচারী পদ্ধতির সাথে সাতের দশকের সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের পদ্ধতির অবিকল মিল আছে। ৭২-৭৭এর গণতন্ত্র নিধনকারী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় জীবিতকালে বারবার বারবার বলেছেন, মমতা তাঁর যোগ্য উত্তরসুরী। ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কলকাতায় মমতা ব্যানার্জী কর্তৃক আয়োজিত এক কনভেনশনে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় বলেছিলেন, "কি করে ভোটে জিততে হয় তা আমি দেখিয়ে দিয়েছি। মমতা আমার যোগ্য উত্তরসুরী।মমতা ব্যানার্জী যে তাঁর যোগ্য উত্তরসুরী, তাঁর প্রমান গত ৫ বছর ৫ মাসের রাজ্য শাসনে প্রতি মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অনুভব করছেন। যত দিন যাচ্ছে, তত বেশী করে প্রমান পাওয়া যাচ্ছে। পঞ্চায়েত, লোকসভা, পৌরসভা ও সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যনার্জী প্রমান করে দিয়েছেন, তিনি শুধু সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের উত্তরসুরী নন, গণতন্ত্র নিধন, সন্ত্রাস-সহ এই সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়ে তিনি তাঁর পূর্বসুরী থেকে এগিয়ে রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ আজ গণতন্ত্র নিধনের সুতিকাগারে পরিণত হয়েছে।

অতীতের সাথে তুলনা না করলে বোঝা যাবে না - কেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় মমতাকে উত্তরসুরী হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রে স্বৈরাচারী ও কর্তৃত্ববাদী মনোভাবাপন্নরা ক্ষমতায় আসার পর কিভাবে সর্বগ্রাসী ভুমিকা গ্রহণ করে গণতন্ত্রকে চূর্ণ বিচুর্ণ করে দিতে পারে এই অভিজ্ঞতা ১৯৭০ সাল থেকে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ও পরে ১৯৭৫ সালে জরুরী অবস্থা জারীর পর সারা ভারতবর্ষের মানুষের হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ১৬ই মার্চ দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকার পতনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা হিসাবে নিযুক্ত বি বি ঘোষ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আইএএস ও আইপিএস-দের গোপন সভা ডেকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে করেই হোক এ রাজ্য থেকে সিপিআই(এম)-এর প্রভাবকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কোন শৈথিল্য বা গাফিলতি বরদাস্ত করবেন না। একটি সংবিধান প্রদত্ত বৈধ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে নিশ্চিহ্ন করার নির্দেশ সেই সময় দেওয়া হয়েছিল।

পরবর্তীকালে ভারত সরকারের এসআইবি তাদের অতি গোপন সার্কুলারে বিভিন্ন হত্যাকান্ডের সঙ্গে সিপিআই(এম)-এর নাম জড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। এরপর কিভাবে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের নের্তৃত্বে রিসার্চ এ্যান্ড এ্যানালিসিস উইং-এর ('') পরামর্শ ও সহযোগিতায় ১৯৭২ সালে রিগিং নির্বাচন সম্পন্ন করে কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করেছিল - তা আজ ইতিহাস। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মমতা ব্যানার্জী একই পদ্ধতিতে পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনকে ব্যবহার করে বামপন্থীদের, বিশেষ করে সিপিআই(এম)-কে, মিথ্যা মামলা, খুন, সন্ত্রাস, আক্রমণ করে নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ নিয়েছেনতা মানুষ গত পাঁচ বছর প্রত্যক্ষ করেছেন। মমতার আমলে এখন রাজ্যে একইভাবে তৃণমূলের চক্রান্তে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে সিপিআই(এম)-এর নাম জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে হলদিয়ার পার্টিনেতা শ্যামল মাইতিকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার। অতীতে মমতা ব্যানার্জী কর্তৃক 'চম্পলা সর্দারের' মিথ্যা কেসের মতো এই কেসটিকেও সাজানো হয়েছে পুলিশ-তৃণমুলের যৌথ চক্রান্তে। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ক্ষমতায় এসেই সমস্ত নির্বাচিত পৌরসভাকে ভেঙে দিয়েছিলেন। মমতার আমলে পৌর ও পঞ্চায়েত প্রতিটি নির্বাচন গায়ের জোরে ছাপ্পা ভোটের মাধ্যমে দখল করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও যেখানে বিরোধীরা জিতে বোর্ড গঠন করতে পেরেছেন, সেখানে চলেছে গায়ের জোরে ভয় দেখিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দলত্যাগে বাধ্য করে দখল করার নিকৃষ্ট কাজ।

সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের জমানায় দর্পন ও বাংলাদেশ সাপ্তাহিক পত্রিকার দপ্তরে হামলা হয়েছিল। দর্পণ পত্রিকা ছাপার অপরাধে মডার্ণ ইন্ডিয়া প্রেসকে সীল করে দিয়েছিল সরকার। ফলে দর্পণের সাথে ফ্রন্টিয়ার পত্রিকাও বন্ধ হয়ে যায়। গাড়ীর উপর তান্ডব নৃত্য করে ও হামলা চালিয়ে ইউনিভার্সিটি ইনষ্টিউটে জয়প্রকাশ নারায়ণের সভা বানচাল করেছিল যুব কংগ্রেস ও ছাত্র পরিষদ। জয়প্রকাশের উপর হামলার ঘটনা সমর্থন করে বিধাননসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন সিপিআই নেত্রী ইলা মিত্র। এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন লেখার জন্য সত্যযুগের বার্তা সম্পাদক কল্পতরু সেনগুপ্তকে বিধানসভায় ডেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য করানো হয়েছিল। মমতার রাজত্বে ২০১৩ সালে প্রায় একইরকম অভিযোগ এনে অরুণাভ ঘোষকে বিধানসভায় দুঘণ্টার জন্য জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। বিধানসভায় শাসকদলের বিধায়কদের হাতে সি পি আই (এম) বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম এবং গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জির নিগ্রহের সংবাদ পরিবেশনের জন্য আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছিল তৃণমূল সরকারের পক্ষ থেকে। বিধানসভার স্বাধিকার রক্ষা কমিটির বিবেচনাধীন অভিযোগটি ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রত্যাহৃত হয়। সম্ভবত সরকার ও পত্রিকাটির মধ্যে গোপনে কোনও সমঝোতার ভিত্তিতে অভিযোগটি প্রত্যাহৃত হয়েছিল। আনন্দবাজারের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও অন্য একটি  বৈদ্যুতিন সংবাদ চ্যানেলের বিরুদ্ধে একটি স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছিল। পত্র পত্রিকার উপর এই আক্রমণ পুঁজি পরিচালিত সংবাদ মাধ্যম মেনে নিলেও একমাত্র গণশক্তি পত্রিকা তা কখনো মেনে নেয়নি। তাই বারবার আক্রমনের মুখোমুখি হতে হয়েছে গণশক্তি পত্রিকাকে।

১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন মধ্যরাত্রে অভ্যন্তরীন জরুরী অবস্থা জারীর সংবাদ ভারতের অনেক পত্রিকা ছাপতে সাহস করেনি। পরদিন সান্ধ্য গণশক্তি পত্রিকায় শীর্ষ সংবাদ হিসাবে খবরটি ছাপা হয়েছিল - "আপৎকালীন অভ্যন্তরীন জরুরী অবস্থা ঘোষণা : বিরোধী পক্ষের নের্তৃবৃন্দ গ্রেপ্তার, জয় প্রকাশ নারায়ণ, মার্কসবাদী কমিউনিস্ট নেতা মেজর জয়পাল সিং, মোরারজী দেশাই প্রমুখ সংগঠন কংগ্রেস, এসপি, জনসংঘ, বিএলডি প্রমুখ বিরোধী নের্তৃবৃন্দ কারাগারে আটক : জ্যোতির্ময় বসু, সুরেন্দ্র মোহন প্রমুখের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা।" শুধু সংবাদটি প্রকাশ করেই গণশক্তি ক্ষান্ত থাকেনি। জরুরী অবস্থার  সেন্সর বিধি ও সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে ঐ দিনই অভ্যন্তরীন জরুরী অবস্থা জারীর বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধের আহবান জানিয়ে "গণতন্ত্রের মুলোচ্ছেদ গণ প্রতিরোধ চাই" সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল : " ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মা:)-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকমন্ডলী অবিলম্বে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের দাবি করেছে, ধৃত ব্যক্তিদের মুক্তি দাবী করছে এবং জনগণের প্রতি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহবান জানাচ্ছে। আহবান জানাচ্ছে - গণতন্ত্রের উপর এই বর্বর আক্রমণের বিরুদ্ধে, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলুন।"  ভারতের আর কোনও পার্টি বা সংবাদপত্র অভ্যন্তরীন জরুরী অবস্থা জারীর বিরুদ্ধে এই ধরনের বিবৃতি বা সম্পাদকীয় লেখার সাহস সেদিন দেখাতে পারেনি। একটি কথা উল্লেখ করা এখানে খুবই প্রাসঙ্গিক, আরএসএস প্রধান জরুরী অবস্থা জারীকে সমর্থন করে নিজেদের মুক্তির জন্য জেল থেকে একাধিক চিঠি দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীকে।

জরুরী অবস্থার সময় আনন্দবাজারের সাংবাদিক বরুন সেনগুপ্ত এবং গৌর কিশোর ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দত্তও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। যতদূর মনে পড়ে, আনন্দবাজার সেইসময় এই গ্রেপ্তারের সংবাদ পর্যন্ত ছাপতে সাহস করেনি। সেন্সর বিধির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে গণশক্তি সেই সংবাদ ছেপেছিল। সারা ভারতে যে ১০০টি পত্রিকায় জরুরী অবস্থার সময়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়েছিল, তার মধ্যে গণশক্তি ছিল অন্যতম। সেন্সর বিধি লঙ্ঘনের জন্য গণশক্তির উপর ৪৭টি নোটিশ জারী করা হয়েছিল। 'গণশক্তি পত্রিকার প্রেস কেন সীল করা হবে না' - এই মর্মে নোটিশ জারী হলে কলকাতা হাইকোর্টের মহামান্য প্রধান বিচারপতি স্থগিতাদেশ দেওয়ায় সে যাত্রায় সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় সরকারের মনস্কামনা পূর্ণ হয়নি। মমতা ব্যানার্জী্র আমলে আবার গণশক্তি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । অন্যান্য অধিকাংশ সংবাদ মধ্যমকে তাঁবেদারে পরিণত করতে পারলেও গণশক্তির বিজ্ঞাপন বন্ধ করে ও পত্রিকা প্রচারে বাধা দিয়ে গণশক্তিকে টলানো যায়নি। মাথা উঁচু করে স্বৈরশক্তির বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে একমাত্র গণশক্তি।

অনেকেই আজ ভুলে গিয়েছেন, সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় সরকার জেলার উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ে জেলায় জেলায় মন্ত্রীসভার বৈঠকের আয়োজন করতেন। তাতে জেলা বা রাজ্যের, কোন উন্নয়ন হয়নি। মমতাও একই পদ্ধতিতে গত পাঁচ বছরে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে জেলায় জেলায় শতাধিক প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। রাজ্যের কোনও উন্নতির লক্ষণ তাতে দেখা যাচ্ছে না। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় মাসান্তিক বেতার ভাষণে উন্নয়নের মিথ্যা ফিরিস্তি দিতেন। মমতাও শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে সংবাদ মাধ্যমে নিজের ছবি দিয়ে উন্নয়নের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। যেমন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের আমলে মদ, জুয়া আর সাট্টার রমরমা বাজার গড়ে উঠেছিল, তেমনই এই রাজ্যে তৃণমূলের সিন্ডিকেট ও তোলাবাজীর রমরমা বৃদ্ধি ছাড়া রাজ্যের মানুষ কোনও উন্নয়ন চর্মচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন না।

পশ্চিমবঙ্গের মানুষ গণতন্ত্রের অবমাননা ও লাঞ্ছনা কোনদিন মুখ বুজে মেনে নেয়নি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পীঠস্থান পশ্চিমবঙ্গ বারেবারে স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন শাসকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদে সামিল হয়েছে। এই রাজ্যের মানুষের গণতন্ত্রবোধ এতটাই প্রখর যে, রাজ্য ও দেশের সীমানা অতিক্রম করে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে গণতন্ত্র বিপন্ন হলে তাঁরা প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন। পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্য - কোন স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রী মনোভাবাপন্নদের কাছে মাথা নত করে না। মমতার কাছেও নয়। গত পাঁচ বছর বহু চেষ্টা করেও মমতা ব্যানার্জী বামপন্থাকে নিশ্ছিহ্ন করতে পারেননি। আগামী দিনেও পারবেন না।                                                        

No comments:

Post a Comment