সীতারাম ইয়েচুরি
বাজেটেও জুমলা। প্রধানমন্ত্রী, বি জে পি
সভাপতির মতো অর্থমন্ত্রীও বাগাড়ম্বরেই মত্ত। মঙ্গলবার পেশ করা আর্থিক সমীক্ষায়
স্পষ্টই বলা হয়েছে নোট বাতিলের ধাক্কায় অর্থনৈতিক বিকাশের হার কমবে। তা ৬.৫শতাংশের
মতো হবে। অর্থনীতি শ্লথ অবস্থায় চলছে। আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে বিশ্ব সংকটের
পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে তাকাতে হবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির দিকে। তার জন্য
পদক্ষেপ নিতে হবে।
বুধবারের বাজেট ঠিক উলটো পথে হাঁটলো। চাহিদা ও অর্থনৈতিক
প্রক্রিয়ার সম্প্রসারণের বদলে সংকোচন করা হয়েছে। বাজেটের মোট আয়তনই কমে গেছে।
বাজেটের মোট আয়তন গত আর্থিক বর্ষে ছিলো মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১৩.৪শতাংশ,
তা এবারে কমে হয়েছে ১২.৭ শতাংশ। রাজস্ব ব্যয় কমেছে। অরুণ জেটলি দাবি
করেছেন পরিবহন-সহ পরিকাঠামোয় উন্নয়ন ঘটানো হবে, তার ফলে
কর্মসংস্থান বাড়বে। অথচ প্রকৃত হিসেবে দেখা যাচ্ছে মূলধনী ব্যয় কমে গেছে। গত বছরে
যা ছিলো ১.৮৬শতাংশ, এবারে রেলকে ঢুকিয়েও তা ১.৮৪শতাংশ। রেলকে
বাদ দিলে মাত্র ১.৫১শতাংশ। চাহিদা কোথা থেকে বাড়বে?
অর্থনৈতিক সমীক্ষা এবং জাতীয়
লেবার ব্যুরোর সমীক্ষায় দেখা গেছে শ্রমনিবিড় ৮টি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান অন্তত ৫৫
হাজার কম কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে যদি মূলধনী ব্যয় কমে তাহলে কর্মসংস্থান আরো
সংকটে পড়বে।
রেগার হিসেব দেখলেও বোঝা যাচ্ছে
বরাদ্দ আদৌ বাড়েনি। মুদ্রাস্ফীতির হিসাব ধরলে রেগার বরাদ্দ যা ছিলো তা-ই রয়ে গেছে।
বাগাড়ম্বরই সার, গ্রামীণ কর্মসংস্থানের এই প্রকল্পও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
সরকার দাবি করছে কোষাগারীয় ঘাটতি
কমিয়ে আনা হয়েছে। যদিও অর্থমন্ত্রী ভাষণে যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন আর বাজেটের নথিতে
যা লেখা আছে তা পৃথক। কোষাগারীয় ঘাটতি কমেছে কীভাবে? পেট্রোপণ্যে অন্তঃশুল্ক থেকে।
আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কমেছে, তখন অন্তঃশুল্কের কারণেই
ভারতে তা বেড়েই চলেছে। এ থেকেই সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু বাস্তবে
রাজস্ব আয় বাজেট অনুমানের তুলনায় কম হয়েছে। এও প্রমাণ করছে অর্থনীতিতে সংকোচন
চলছে। এখন রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে জনগণের ওপরে বোঝা চাপানো হচ্ছে। প্রায় ৬০হাজার
কোটি টাকার বোঝা চাপানো হয়েছে।
নোট বাতিলের পূর্ণ ফলাফল এখনও
বোঝা যায়নি। তা আরো প্রভাব ফেলবে। সরকার ব্যাঙ্কের জন্য মায়াকান্না কাঁদছে। ১১লক্ষ
কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ রয়েছে কর্পোরেটের কাছে। তা আদায় করার জন্য কেন্দ্রের কোনো
উদ্যোগ নেই। যাঁরা বিদেশে পালিয়েছেন শুধু তাঁদের কথা বলা হচ্ছে। দেশের মধ্যে থেকেই বহাল
তবিয়তে মুনাফা করে চলেছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য কী ব্যবস্থা? বরং
কর্পোরেটদের জন্য রাজস্ব ছাড়ের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
সরকারের উদ্দেশ্য দেশি-বিদেশি
পুঁজিকে ছাড় দেওয়া। এফ আই পি বি ছিলো বিদেশি বিনিয়োগের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। তা
তুলে দেওয়া হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় পথে বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমেই বাড়ছিল। এখন আর বিদেশি
পুঁজির জন্য কোনো নিয়ন্ত্রণই রইলো না। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বিদেশি স্টক
এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিদেশি বেসরকারি পুঁজি এবার রাষ্ট্রায়ত্ত
সংস্থাও কিনবে।
সীতারাম ইয়েচুরি সি পি আই (এম)-র
সাধারণ সম্পাদক
No comments:
Post a Comment