#অনাহারে_বাংলা
শারদোৎসব শেষ হতে না হতেই রাজ্য সরকারের আরেক মোচ্ছব ‘আহারে বাংলা’। সরকারী
পয়সায় ‘জমিয়ে পেটপূজো’, খাওয়া দাওয়ার রাজকীয় আয়োজন। পাঁচদিন ধরে এই উৎসবে ‘হরেক
রকম’ খানাপিনার লোভনীয় বিজ্ঞাপন।
কখন?
যখন উত্তরবঙ্গের চা বাগানে অনাহার-অপুষ্টিতে মৃত্যুর মিছিল চলছে। একের পর এক
বাগান বন্ধ, নেই খাবার, নেই ওষুধ। গত চার বছরে প্রায় ৬০০ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের
মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। শুধু আলিপুরদুয়ার জেলাতেই দেড় বছরে ৪০০ মানুষের মৃত্যু
হয়েছে বাগানের অন্ধকারে। সুখে আছেন শুধু বাগান মালিকরা, রাজ্য সরকার অধিগ্রহণের
পরে বাগানের অবস্থা আরো খারাপ। সেখানে রেশনের নামে চলছে কালোবাজারীর কারবার। দলে
দলে মানুষ যে কোনো কাজের খোঁজে পালিয়ে যাচ্ছেন। নারী পাচারের ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে।
বাংলা কখন ‘আহারে’?
যখন রাজ্যে একের পর এক কারখানায় তালা পড়ছে। হিন্দ মোটর্স, ডানলপ, জেশপ বন্ধ হয়েছে;
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে হিন্দুস্তান কেবলস চিরতরে বন্ধ হয়েছে; রাজ্য সরকার বেচে
দিচ্ছে দুর্গাপুর কেমিক্যালস, তুলে দেওয়া হচ্ছে বেঙ্গল গভর্নমেন্ট প্রেস। আসানসোল-দুর্গাপুর,
হুগলীর শিল্পাঞ্চলে প্রায় প্রত্যেক দিন চলছে কারখানা বন্ধের পালা। এ রাজ্যের চট
শিল্প ধুঁকছে। প্রতারক মালিকরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন আর ফিরে
এসেই কয়েক হাজার শ্রমিকের রুজি কেড়ে তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছেন জুট মিলে। চটকলের শ্রমিক
মহল্লায় এই উৎসবের দিনেও জ্বলেনি আলো।
রাজ্যের সরকারী পরিবহনের শ্রমিকদের বকেয়া মিলছে না, পেনশন মিলছে না, ভবিষ্যৎ
অনিশ্চিত। পরিবহনের জমি বেসরকারী আবাসন মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনুপ্রেরণায়’ কখন ভূরিভোজের প্রদর্শনী?
এ রাজ্য যখন শিল্পের মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। শুধু সিঙ্গুরেই ডিনামাইট দিয়ে
কারখানার শেড ভাঙার শব্দ শোনা যাচ্ছে, তাই নয়। শালবনীর কারখানা তৈরি বন্ধ হয়ে
গেছে, রঘুনাথপুরে প্রস্তাবিত প্রায় সব শিল্পই পাততাড়ি গুটিয়েছে, অন্ডালে বন্ধ
হয়েছে বিমানবন্দর, তোলা দিতে দিতে রাজ্য ছেড়েছে বিদেশী সংস্থা। ইস্পাত, ধাতব এবং বিভিন্ন অনুসারী শিল্প বন্ধ হয়েছে দেদার। প্রায়
৪০হাজার ছোট শিল্প রুগ্ণ অথবা বন্ধ হয়েছে।
কোথায় কাজ পাবেন এ রাজ্যের যুবকরা? বহুঘোষিত এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে কাজ চেয়ে
নাম লিখিয়েছিলেন ১৮লক্ষ যুবক, কাজ মিলেছে মেরেকেটে দেড় হাজারের। মুখ্যমন্ত্রীর
বাগাড়ম্বরের ‘হাব’-গুলিতে ফাঁকা ময়দান, কোনো শিল্পেরই দেখা নেই। একমাত্র সম্ভাবনার
স্কুল শিক্ষকের চাকরিতে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি। শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা হতাশগ্রস্ত
অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
তুলনামূলক ভাবে কম লেখাপড়া জানা মানুষেরও কাজ নেই। কাজ নেই গ্রামে। পঞ্চায়েত
দুর্নীতির আখড়া, ঠিকাদারের পোয়াবারো। রেগার কাজে পশ্চিমবঙ্গ ক্রমেই চলে যাচ্ছে
পিছনের সারিতে। উপরন্তু রেগায় কাজ করিয়ে মজুরি বকেয়া রাখায় দেশের শীর্ষে এই বাংলা।
রেগায় মজুরি পেতেও শাসক দলকে তোলা দিতে হয়, সে শুধু এ বাংলায়। মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ
লক্ষ কাজের গল্প ছেড়ে প্রকৃত কাজের খোঁজে হাজার হাজার যুবক রাজ্য ছেড়ে যেতে বাধ্য
হচ্ছেন। কোনোক্রমে খাবারের সংস্থানটুকু করতেই। এ সময়ে কীসের খাদ্য উৎসব?
এই হেমন্তে কেমন আছেন বাংলার কৃষক? ফসলের দাম না পেয়ে দুর্দশার দায়ে ফসল
বিক্রির ঘটনা ঘটছে গ্রামের পর গ্রামে। কখনও ধানচাষী, কখনও আলুচাষী দেনার বোঝা
মাথায় নিয়ে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হচ্ছেন।
কখন এই ভোজসভা?
বাজার যখন অগ্নিমূল্য। সামান্য ডাল–রুটি যোগাড় করতে সাধারণ মানুষ নাজেহাল। বহু
তরিতরকারির দাম বাড়তে বাড়তে তা নাগালের বাইরে। রাজ্য প্রশাসন নিষ্ক্রিয়, দাম
নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকাই নেই উৎসবে ডুবে থাকা সরকারের। ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষ,
লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষকে আধপেটা খেয়ে দিন গুজরান করতে হচ্ছে। এইসব মানুষজনের জন্য
কোনো হুঁশ নেই রাজ্য সরকারের।
কখনও উৎসব খুব কুৎসিত মনে হয়। অমানবিক। মুখ্যমন্ত্রী উৎসবের নাম করে রাজ্যের
বিবর্ণ অবস্থা ঢাকা দিতে চাইছেন।
বন্ধ হোক সরকারী কোষাগারের মদতে এই মজলিশ। বন্ধ হোক শ্রমজীবী মানুষসহ সাধারণ
গরিব মানুষের জীবনকে ঠাট্টা করার এই আয়োজন।
No comments:
Post a Comment