20160905

ধর্মঘট নিয়ে মোদীকে বার্তা মমতার

কেন্দ্রের মোদী সরকারকে বার্তা দেওয়ার সাথে সাথে ‘বন্‌ধ’ নিয়ে তাঁর দলের কলঙ্কজনক ইতিহাসকেও মুছে দিতে চাইছেন মমতা ব্যানার্জি।

১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হওয়ার পর থেকে না হয় বাদই দেওয়া গেলো, শুধুমাত্র ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত রাজ্যসহ বিভিন্ন স্তরে ১৭টা ‘বন্‌ধ’ ডেকেছিল তৃণমূল তার মধ্যে ২০০৭ ও ২০০৮, এই দুই বছরেই ১২বার ১২ঘন্টা (পরে কমে ১০ঘন্টা) ‘বাংলা বনধ্‌’ ডেকেছিল বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দল।

এই মমতা ব্যানার্জিই শুক্রবার ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘বাংলায় কোনও বন্‌ধ করতে অ্যালাউ করব না। বন্‌ধ-এর নামে কোনও হুজ্জতি বরদাস্ত করব না। বনধ-এর দিনে দোকানপাট খোলা থাকবে, গাড়ি চলবে।’’

লক্ষ্য করুন ‘বনধ্‌’ শব্দটির দিকে। অন্ততপক্ষে ৬মাস আগে বি এম এস ছাড়া দেশের সবকটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং জাতীয় স্তরের শিল্পভিত্তিক ফেডারেশন আগামী ২রা সেপ্টেম্বর ১২দফা দাবিতে ‘বনধ্‌’ নয়, ডাক দিয়েছে সাধারণ ধর্মঘটের। গোটা দেশে, এরাজ্যেও দাবিগুলির ভিত্তিতে প্রচার এখন প্রায় তুঙ্গে। কী কী দাবি? আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধিরোধে ব্যবস্থা, সীমাহীন বেকারীর বিরুদ্ধে কর্মসংস্থানের দাবি, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা, সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা, ১৮হাজার টাকা ন্যুনতম বেতন, ৩হাজার টাকা অবসরকালীন ভাতা ইত্যাদি। এটা মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ‘বন্‌ধ-এর নামে হুজ্জতি’ নয়, শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা, অধিকার রক্ষার লড়াই। সাধারণ ধর্মঘটের বিরোধিতা করে আসলে মমতা ব্যানার্জি এই দাবিগুলিরই বিরোধিতা করছেন  

আর অন্যদিকে, তৃণমূল যে সব কারণে তখন ‘বাংলা বন্‌ধ’ ডেকেছিল, তা আজ ওদের নেতারাও মনে করতে পারবেন না, কারণ নিছক বামফ্রন্ট সরকারের বিরোধিতা করা ছাড়া সে সবের সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো যোগ ছিল না। আসলে ‘বন্‌ধ-এর নামে হুজ্জতি’ অথবা তথাকথিত ‘হুজ্জতি’-র ইতিহাস তৃণমূলেরই। ‘বাংলা বন্‌ধ’ ডেকে অথবা না ডেকেই যখন-তখন পথ অবরোধ, রেল অবরোধ, বাস-ট্রাম ভাঙচুর, আগুন লাগানো, বোমা মারার যে ইতিহাস মুখ্যমন্ত্রীর দল তৃণমূল তৈরি করেছে, তা কখনই ভোলার নয়।

২০০৭ও ২০০৮, শুধু এই দুবছরেই কলকাতায় রাস্তা অবরোধ করে ৫৪টা সরকারী বাসে ভাঙচুর, ২৬টা সরকারী বাস পুড়িয়েছিল তৃণমূল। ২০০৬ সালের ৩০শে নভেম্বর স্বয়ং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিধানসভা ভাঙচুর করেছিল তৃণমূল বিধায়করা, যাদের অনেকেই এখন রাজ্যের মন্ত্রিসভা ‘অলঙ্কৃত’ করছেন। ডব্লিউ বি আই ডি সি অফিস ভাঙচুর, বিভিন্ন সরকারী অফিস, থানা ভাঙচুরের কথা এর সঙ্গে যোগ করলে কুল পাওয়া যাবে না।   

আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব এরাজ্যে তৃণমূলেরই এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে এর নেতৃত্ব দিয়েছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নিজে। ধর্মতলায় অনশনের (!) নামে ২৬দিন মেট্রো চ্যানেল অবরোধ অথবা সিঙ্গুরে মোটরগাড়ি কারখানা তুলে দেওয়ার জন্য দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ১৭ দিন ধরে অবস্থান-অবরোধ ছাড়াও ২০০৭ ও ২০০৮, এই দুবছরে শুধু কলকাতায় বিভিন্ন কারণে ৩২বার রাস্তা অবরোধ করেছে তৃণমূল। আর একই সময়ে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী শহরতলীতে ২৮বার রেল অবরোধ করে মুখ্যমন্ত্রীর দল।   

এই যখন তাঁর দলের ইতিহাস, তখন সাধারণ ধর্মঘটের বিরোধিতা করছেন কেন মমতা ব্যানার্জি? বিশেষ করে যখন এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে গোটা দেশে এবং দাবিগুলি মূলত কেন্দ্রের বি জে পি সরকারের বিরুদ্ধে। আসলে রহস্য অন্য জায়গায়। দেশের অন্য কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই সাধারণ ধর্মঘটের বিরোধিতা করে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি খুলেছেন, কারণ তিনি বার্তা দিতে চান নরেন্দ্র মোদীকে যে তৃণমূল তাঁর সরকারের পাশেই আছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে সাধারণ মানুষের নজর এড়ানোর জন্য মুখে যতই তর্জন-গর্জন করুন না কেন, লোকসভা বা রাজ্যসভা, সংসদের উভয় কক্ষেই প্রায় প্রতিটি প্রশ্নে তৃণমূলের নিঃশর্ত সমর্থন পেয়েছে মোদী সরকার। 

সাধারণ ধর্মঘটের বিরোধিতা করেও একইভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বার্তা দিতে চেয়েছেন।   

No comments:

Post a Comment